শীত জেঁকে বসেছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় কৃষি খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শীতের তীব্রতায় কৃষকদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশা ঢেকে যায় প্রকৃতি। হিমেল বাতাসের সঙ্গে দেখা দেয় ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো কুয়াশা। এতে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। শীতকালীন বিভিন্ন সবজি আলু, পেঁয়াজ, টমেটো ক্ষেত নিয়ে কৃষকদের চিন্তা-উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। আবার অনেক স্থানে আগাম জাতের আমের মুকুলও ঝরে যাচ্ছে। আলুতে দেখা দিয়েছে লেট ব্লাস্টইট রোগ। ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের বীজতলা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তীব্র শীতে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে বোরোর বীজতলা। অনেক এলাকায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চারার গোড়া বা পাতা পচা রোগ এবং হলুদ বর্ণ ধারণ করে বীজতলা দুর্বল হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সূর্যের আলো ঠিকমতো না পাওয়ায় বোরোর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এ অবস্থায় বৃষ্টি হলে ছত্রাকবাহী ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে যাবে। এতে করে আলু ও টমেটোর অনেক ক্ষতি হবে। অধিকাংশ কৃষক আলুক্ষেত রক্ষায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শীত ও ঘন কুয়াশায় আলুক্ষেতের বাড়তি পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। লেট ব্লাস্টইট বা পাতা মোড়ানো রোগাক্রান্ত আলুক্ষেতে মেটারিল, মেটাটাফ ও ফোরাম বালাইনাশক সমন্বিতভাবে স্প্রে করেছেন কৃষকরা। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ফসল উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পৌষের শেষ ভাগ থেকে মাঘের শুরুতে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শীতের এ বিরূপ প্রভাব পড়তে দেখা গেছে ফসলে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও বৃষ্টির আভাস কৃষকদের মধ্যে ভয় জাগাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা ঘন ঘন পরিবর্তন দেখা যায়। কখনো তীব্র শীত, কখনো ঘন কুয়াশা আবার কখনো শৈত্যপ্রবাহও দেখা দিচ্ছে। এতে শিম, লাউ, করলা, মিষ্টিকুমড়া, আলু, শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। ফসলের পরাগায়ন ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ফলন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অতি ঠান্ডায় আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ইত্যাদি ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাবে। আমাদের এখানে অনেক ধরনের শাকসবজি হয়। শীতকালীন এ ফসল দিয়ে বছরের দীর্ঘ সময়ের সবজির চাহিদা পূরণ হয়। এমন জেঁকে বসা কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
শীত-ঘন কুয়াশায় বোরোর বীজতলার বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন কৃষকরা। শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষা পেতে অনেক কৃষক বিকেল থেকেই বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন। তীব্র শীত-ঘন কুয়াশায় বীজতলার চারাগুলো হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। বৈরী আবহাওয়া ও কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে প্রাকৃতিকভাবেই বীজতলার ক্ষতি হবে। কৃষিক্ষেত্রে প্রকৃতির ভূমিকাই প্রধান। তীব্র শীতে জবুথবু প্রাণ-প্রকৃতি। আমাদের দেশে কৃষি কাজে গবাদি পশুর ভূমিকা রয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত নানা রোগে। ভোগান্তিতে পড়েছেন খামারিসহ প্রান্তিক কৃষক। তীব্র শীতে ক্ষুধামান্দ্য, বদহজম, নিউমোনিয়া, খুরারোগসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু। কৃষি বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এখনো কৃষির কোনো বিকল্প নেই। দেশের জনগণের একটা বিশাল অংশ তাদের জীবনধারণের জন্য কৃষির ওপর নির্ভর করে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের কৃষকরা। কৃষিকাজ আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কৃষির উৎপাদন সম্পূর্ণ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ধারা এখানে অনেক বেশি বাড়ছে। শৈত্যপ্রবাহ তার মধ্যে অন্যতম। এক মৌসুমে বেশি শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শীতে মৌসুমে বারবার শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়লে কৃষি অর্থনীতি চাপের মুখে পড়বে।
প্রকাশ ঘোষ বিধান
পাইকগাছা, খুলনা