দেশে বছরের ব্যবধানে বেকার বেড়েছে পৌনে দুই লাখ। কর্মে নিয়োজিত বা শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর এ চিত্র কৃষি, সেবা এবং শিল্পসহ সব খাতের। নারীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের এসব তথ্য উঠে এসেছে, যা দেশের অগ্রগতির জন্য কাঙ্ক্ষিত ধারা নয়।
রোববার ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস। এতে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে ২৬ লাখ ৬০ হাজার বেকার আছে। ২০২৩ সালের এ সময়ে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার।
বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তিতে এখন ৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার নারী-পুরুষ আছে। অথচ ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে ছিল ৬ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে শ্রমশক্তি অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা কমেছে ১৯ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার। এ ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। তারা কর্মে নিয়োজিত নয়, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৬ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার। তারা মূলত সাধারণ শিক্ষার্থী, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক নারী-পুরুষ, কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং কর্মে নিয়োজিত নয় বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক গৃহিণী।
সম্প্রতি ‘উচ্চশিক্ষায় বৈশ্বিক মান: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীতে। সে সভায় উঠে আসে শিক্ষিত বেকারের হতাশাজনক চিত্র। শুধু সংখ্যার দিক দিয়েই নয়, উচ্চশিক্ষার মানের ক্রমাগত অধোগতির কারণে দক্ষ ও উপযুক্ত মানবসম্পদ গড়ে তোলা যাচ্ছে না—এ বিষয়টিও উঠে আসে। দেখা যায়, প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট হচ্ছে। কর্মসংস্থান হচ্ছে মাত্র এক লাখের। অন্যদিকে দেশি ইন্ডাস্ট্রি কিংবা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না কর্মদক্ষ গ্র্যাজুয়েট। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আনতে হচ্ছে বিদেশি দক্ষ লোক। উচ্চশিক্ষায় বেকারত্বের চিত্র ভয়ংকর। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮২ হাজার। তাদের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রায় ৮ লাখ। অর্থাৎ, মোট বেকারের প্রায় ৩১ শতাংশই উচ্চ শিক্ষিত। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পাস বেকার তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা যোগ করলে দাঁড়ায় মোট বেকারের ৫১ শতাংশই কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পাস।
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে যে আমরা ব্যর্থ হয়েছি এবং কাঙ্ক্ষিত উন্নতি তো নয়ই; ইতিবাচক বদলের ধারায়ও যে যেতে পারিনি, তা বলাই বাহুল্য। আমরা মনে করি, যে কোনো উপায়ে এ পরিস্থিতির বদল দরকার। এজন্য জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা। তার জন্য দরকার সার্বিক বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত, সুদূরপ্রসারী ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগের। একদিকে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর যেন বেকারত্বের শাপগ্রস্ত হতে না হয়, এজন্য উচ্চশিক্ষাসহ সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় সময়োপযোগী আধুনিক সংস্কার প্রয়োজন। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে হবে যেন শ্রমসক্ষম সব মানুষ কর্মে নিয়োজিত থাকে। আর এ লক্ষ্যে যা যা পদক্ষেপ দরকার ধীরে ধীরে সেই পথে ধাবিত হতে হবে। এজন্য অবশ্যই দরকার সবার গভীর দেশপ্রেমের। কেননা বেকারত্ব সমাজে নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের প্রত্যাশা, দেশে একদিন সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠবে সবার জন্য কর্মসংস্থান।