বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১
ইমরান ফয়সাল
প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫১ এএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

সাত কলেজের পরিকল্পনা হোক টেকসই

সাত কলেজের পরিকল্পনা হোক টেকসই

সাত কলেজের কথা ভাবলে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজের ছবি ভেসে ওঠে। তা হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ২০১৭ সালে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কারণ ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোর পড়াশোনার মান উন্নয়ন। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তারা গ্রাম থেকে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা শহরের উদ্দেশে পাড়ি জমায়। কিন্তু এখানে এসে তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়। এটা তাদের পড়াশোনার গতিতে ব্যাঘাত ঘটে; যা আদৌ কাম্য নয়।

সাত কলেজের অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে, যা আমাদের প্রেরণা জোগায়। সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে পাথেয় হিসেবে কাজ করে। সাত কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয় ঢাকা কলেজের কথা। ঢাকা কলেজ ছিল এ দেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ। এ বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী ছিল অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তি, খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে যার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। একইভাবে বাকি ছয় কলেজেরও এমন অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। আবার শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রয়োজন মাফিক ক্লাসরুম নেই। যার কারণে এক ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর ক্লাস চলাকালে একই সঙ্গে দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস থাকলে তাদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হয়। অন্যদিকে পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করা ও রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্বিত করা এবং সঠিক ফল প্রকাশে ব্যর্থ হওয়া। এক পরীক্ষার পর অন্য পরীক্ষা দেওয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন গ্যাপ থাকা। পরিচয়ের সংকট তো দৃশ্যমান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে হীনম্মন্যতায় না ভোগে। কিন্তু সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নির্দ্বিধায় নিজেদের পরিচয় দিতে পারে না। কারণ বরাবরই বলা হয়েছে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। অনেক ক্ষেত্রে নিজের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয় দিতে না পারায় শিক্ষার্থীরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সার্টিফিকেটে ভিন্ন অ্যাফিলিয়েট শব্দটি উল্লেখ থাকায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা দূতাবাসসমূহে বিড়ম্বনার শিকার হন।

সাত কলেজ নিয়ে টেকসই পরিকল্পনা গড়তে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক মাথায় রাখা প্রয়োজন। শিক্ষা, প্রশাসন, অবকাঠামো এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদা বিবেচনায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। সাত কলেজে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণার সুযোগ বাড়াতে উন্নত গবেষণা ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে হবে। সাত কলেজের জন্য আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। পরীক্ষার সময়সূচি ও রেজাল্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও দ্রুততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রতিটি কলেজে শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা এবং ক্যাম্পাস পরিবেশ উন্নত করতে হবে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করে পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা বাজেট বরাদ্দ এবং সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য স্বচ্ছ পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

সাত কলেজের সমস্যা সমাধান হলে আমরা সুন্দর একটি পরিবেশ পাব পড়াশোনার জন্য। যার সুফল ভোগ করবে সব সাধারণ শিক্ষার্থী। যেখানে কোনো ধরনের শিক্ষা সিন্ডিকেটের বৈষম্যের শিকার হতে হবে না। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তাদের স্বপ্নের প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। তাই আগামীর সুন্দর দেশ বিনির্মাণে সাত কলেজ পরিকল্পনা হোক টেকসই।

ইমরান ফয়সাল, শিক্ষার্থী

ঢাকা কলেজ, ঢাকা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিনা খরচে বিয়ে-হানিমুনের সুযোগ, যা করতে হবে

ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি

'রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আ.লীগের প্রেতাত্মারা এখনো বহাল'

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু, যা জানা যাচ্ছে

অ্যাম্বুলেন্স রেখে ছেলের গাড়িতে চড়ে হাসপাতালে গেলেন খালেদা জিয়া

লিফলেটে শেখ হাসিনার বাণী, ৩ কর্মকর্তার শাস্তি

ভিন্ন নারীকে মেজর ডালিমের স্ত্রী দাবি

বরিশালে বিএনপির দুই নেতার বাড়িতে হামলা

বিজিবির আপত্তিতে শূন্যরেখা থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিল বিএসএফ

অছাত্রদের দিয়ে জাবি ছাত্রদলের কমিটি

১০

কিশোরীর শ্লীলতাহানি, ৩ লাখ টাকায় ধামাচাপার চেষ্টা

১১

ঢাবির আবাসন সুবিধা পেতে আগ্রহী ছাত্রীদের আবেদনের আহ্বান

১২

হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে দেওয়া চিঠির জবাব এখনো আসেনি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৩

অবৈধভাবে পদ্মায় বালু উত্তোলনের দায়ে ৯ জনের কারাদণ্ড

১৪

ছাত্রলীগের পদ নেওয়াকে কৌশল বললেন ছাত্রদল নেতা

১৫

সার না দেওয়ায় কৃষি কর্মকর্তা অবরুদ্ধ

১৬

ইউসিটিসিতে সিন্ডিকেট মিটিং অনুষ্ঠিত

১৭

রাফির বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাল্টা প্রতিক্রিয়া হাসনাত আব্দুল্লাহর

১৮

প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু 

১৯

গোপনে স্বামীর ফোনে নজরদারি করে বিপাকে স্ত্রী

২০
X