ফ্যাসিবাদ কেবল একজন শেখ হাসিনা নন; ফ্যাসিবাদ হচ্ছে একটি প্রবণতা, যা ফ্যাসিস্টরা তার অগণিত সহচরের স্বভাবে এবং সামাজিক বিন্যাসের মধ্যে রোপণ করে দেয়। অনুকূল হাওয়া পেলেই তারা আবার ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তাই এই দেশবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তিকে প্রতিহত করতে জাতির সব স্তরের মানুষকে সর্বদা সজাগ থাকা প্রয়োজন
আজ ঐতিহাসিক ৬ ডিসেম্বর, স্বৈরাচার পতন দিবস। দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের এই দিনে সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। এরশাদের এই ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের পর থেকে আমাদের দেশে যে রক্তাক্ত সংগ্রামের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার পরিসমাপ্তি ঘটে। সেই থেকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দিনটিকে স্বৈরাচার পতন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এ বছর আমাদের জাতীয় জীবনে দিনটি এসেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃক একটি পৈশাচিক গণহত্যাকে পাড়ি দিয়ে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। রাজপথে শহীদের রক্ত এখনো শুকায়নি। বাতাসে এখনো বারুদের গন্ধ। মানুষের মনোজগতে এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে খুনি হাসিনার বুলেটকে স্বাগত জানাতে বুক চিতিয়ে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের প্রতিবাদী মুখ। রাস্তায় কান পাতলেই এখনো শোনা যায় শহীদ মুগ্ধর পানি বিতরণের অস্পস্ট আওয়াজ। এখনো হাওয়ায় মিলে যায়নি দেড় সহস্রাধিক শহীদের স্বজনদের দীর্ঘশ্বাস। তাদের আর্তনাদ আর আহাজারিতে বারবার কেঁপে উঠছে আল্লাহর আরশ। পুলিশের গুলিতে হাত, পা, চোখ হারিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী অগণিত বীরযোদ্ধা দুর্বিষহ দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছেন। আয়নাঘরে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হওয়া হতভাগ্যদের ঘোর এখনো কাটেনি। গুম হয়ে যাওয়া সন্তানরা ফিরবে বলে মায়েরা এখনো পথ চেয়ে আছেন। শহরের ব্যস্ত রাস্তায় অগণিত মানুষ পথচলতি অজানা-অচেনা মানুষের দিকে নির্বিকার তাকিয়ে থাকে তাদের গুম হয়ে যাওয়া স্বজনের খোঁজে। শহরের দেয়ালে পাল্টে যাওয়া গ্রাফিতিরা এখনো মুক্তিকামী মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে অধিকাংশ গণমাধ্যম, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীসমাজ ছিলেন স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে। আর জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে ঘটেছে এর উল্টো ঘটনা। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ গণমাধ্যম, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীসমাজ ছিল পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে। এক কথায় বলা যায় গণমাধ্যম ছিল ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’, অর্থাৎ শাসকশ্রেণির ইচ্ছেপূরণের যন্ত্র। লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীসমাজ শেখ হাসিনার ভাষায় কথা বলেছেন। জঙ্গিবাদ দমনের বয়ানের মাধ্যমে তারা আয়নাঘর সৃষ্টি ও গুম-খুনের মতো মানবতাবিরোধী কাজকে বৈধতা দিয়েছেন, উন্নয়নের আওয়াজ তুলে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট এবং বিদেশে পাচারের বিষয়টি মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সর্বোপরি গণহত্যার মতো একটি পৈশাচিক কর্মকাণ্ডকে তারা নীরবে সমর্থন করেছেন। বিষয়টি অস্বাভাবিক বটে, তবে বিস্ময়কর নয়। এটাই হলো ফ্যাসিজমের নীতি। ফ্যাসিস্টরা সবসময়ই কোনো একটি আদর্শের ছদ্মাবরণে দেশের লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীসমাজের একটি বড় অংশকে মাফিয়াতন্ত্রের অঙ্গে পরিণত করে। শেখ হাসিনা এ কাজটি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর দুঃখজনক ঘটনাটি ব্যবহার করে। যে বিষয়গুলো উপেক্ষা করে এ দেশে রাজনীতি করা প্রায় অসম্ভব। শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিবাদ কায়েমে এ বিষয়টিই কাজে লাগিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এ প্রহসনের রাজনীতি টেকেনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাই বলে এখনই বলা যাবে না যে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পতন ঘটেছে, সে আর নেই, চিরদিনের জন্য সে এই দেশে থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চরম আশাবাদীরাও বোধকরি এমনটি বলতে ভরসা পাবেন না। কেননা ফ্যাসিবাদ কেবল একজন শেখ হাসিনা নন; ফ্যাসিবাদ হচ্ছে একটি প্রবণতা, যা ফ্যাসিস্টরা তার অগণিত সহচরের স্বভাবে এবং সামাজিক বিন্যাসের মধ্যে রোপণ করে দেয়। অনুকূল হাওয়া পেলেই তারা আবার ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তাই এই দেশবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তিকে প্রতিহত করতে জাতির সব স্তরের মানুষকে সর্বদা সজাগ থাকা প্রয়োজন।
এবার নব্বইয়ের গণআন্দোলনের দিকে ফেরা যাক। নব্বইয়ের গণআন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯ নভেম্বর তিন জোটের রূপরেখা প্রকাশের পর। এই ঐতিহাসিক রূপরেখা প্রকাশের আট দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৭ নভেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদের লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডাবাহিনী মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব ডা. শামসুল আলম খান মিলনকে হত্যা করলে সারা দেশে বিক্ষোভের আগুন বারুদের মতো জ্বলে ওঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে এরশাদ সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। পাশাপাশি এদিন সব সংবাদপত্রের ওপর সেন্সরশিপ জারি করেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে সাংবাদিকদের লিখিত প্রতিবেদন দেখিয়ে ছাড়পত্র আনার বিধান করা হয়। এরই প্রতিবাদে বিএফইউজে ও ডিইউজের ডাকে সাংবাদিকরা এরশাদের পতন না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেন। বন্ধ হয়ে যায় সারা দেশের সব সংবাদপত্রের প্রকাশনা। এরশাদের পতনের পর ৫ ডিসেম্বর থেকে পুনরায় পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। ফলে এই আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এ দেশের মানুষের প্রধানতম ভরসা ছিল বিবিসি এবং ভয়েস অব আমেরিকা থেকে সম্প্রচারিত আতাউস সামাদ ও গিয়াস কামাল চৌধুরীর প্রতিবেদন। শুধু ওই কয়টি দিন নয়, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বরাবরই এ দুজন সাংবাদিক আপসহীন ভূমিকা পালন করেছেন। ভয়েস অব আমেরিকা খবর শোনা যেত রাত ১০টায়। এ কারণে মানুষ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিবিসির অনুষ্ঠান ও আতাউস সামাদের প্রতিবেদনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত। যাদের রেডিও ছিল না তারা রেস্তোরাঁয়, গলির মোড়ে কিংবা বটতলার চায়ের দোকানে জড়ো হতো।
আতাউস সামাদ গণতন্ত্রে গভীর বিশ্বাসী ছিলেন। ষাটের দশক থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করেছেন এবং এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের সঙ্গে থেকেছেন। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পূর্ণ ও সঠিক রিপোর্টিং করেছিলেন। ওই সময় অন্ততপক্ষে ১২ জন সম্পাদক, সাংবাদিক জেনারেল এরশাদের সঙ্গে আপস করেছিলেন এবং তার মন্ত্রী, উপদেষ্টা অথবা রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন। অনেকে তথাকথিত নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু আতাউস সামাদ কখনোই ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের কাছে মাথানত করেননি। আপন বিশ্বাসের সঙ্গে বৈরী আচরণ করেননি। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কাজটি যে গোষ্ঠী, সম্প্রদায় এবং রাজনীতির চেয়ে জরুরি; এটা তিনি দেখিয়ে গেছেন জীবনব্যাপী সাধনার মাধ্যমে। ১৯৮৭ সালে সামরিক সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় কিছুদিন তিনি জেলে ছিলেন। সামরিক সরকারের জেল-জুলুম ও রক্তচক্ষু তাকে তার কর্তব্য বোধ থেকে একটুও নড়াতে পারেনি। স্বৈরাচারী এরশাদ নব্বইয়ের গণআন্দোলনের শেষদিকে আতাউস সামাদকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে তিনি আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। আত্মগোপনে থেকেও কর্তব্যকর্ম থেকে বিরত থাকেননি। নিয়মিতভাবে আন্দোলনের খবর বিবিসিতে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সারা দেশে।
আতাউস সামাদের সঙ্গে আরও যাদের কথা বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন তারা হলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, শফিক রেহমান, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, কবি মোহন রায়হান প্রমুখ।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ফয়েজ আহমদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একমঞ্চে বসানো। দুই নেত্রীর ঐক্য ছিল এরশাদবিরোধী আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। ফয়েজ আহমদের এ উদ্যোগের কারণেই এরশাদের পতন ত্বরান্বিত হয়। যে ৩১ জন নাগরিক একটা দল-নিরপেক্ষ সরকারের কাছে এরশাদকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন, ফয়েজ আহমদ ছিলেন তাদের একজন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কারণে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করেছেন এবং আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। এরশাদ নিজেকে কবি হিসেবে প্রচার করার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে কবি সম্মেলন ও বঙ্গভবনে কবিতা পাঠের আসর বসান। প্রগতিশীল কবিরা প্রত্যাখ্যান করেন এরশাদের কবি সম্মেলন। ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কবি শামসুর রাহমানের নেতৃত্বে এরশাদের বিরুদ্ধে গঠিত হয় জাতীয় কবিতা পরিষদ। এরও প্রাণপুরুষ ছিলেন ফয়েজ আহমদ। ‘জাতীয় কবিতা উৎসবের’ তিনিই ছিলেন প্রথম আহ্বায়ক এবং পরপর পাঁচ বছর আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তার দীর্ঘ জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক তৎপরতা ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট’ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং নেতৃত্ব দান। একনাগাড়ে ১৯৮৪ সাল থেকে ’৯৬ পর্যন্ত ১২ বছর তিনি জোটের প্রথম দিকে আহ্বায়ক এবং ’৯১ সাল থেকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সংগঠনটি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৯০-এর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস ছেড়ে রাজপথে নেমে আসেন। সেই সময় একদিন ঢাকার তোপখানা রোডের এক অফিসের কর্মচারীরা মিছিল করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন। ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন না। তখন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রধান নেতা হিসেবে ফয়েজ আহমদ বিক্ষোভকারীদের আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলনে স্বাগত জানান। তাও প্রেস ক্লাবের রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে।
শফিক রেহমান ১৯৮৪ সালে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন, যা সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমালোচনার জন্য পরিচিত ছিল। ১৯৮৬ সালে জেনারেল এরশাদ সরকার কর্তৃক সাপ্তাহিক যায়যায়দিন দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ করা হয়। তখন শফিক রেহমান লন্ডনে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। লন্ডনে তিনি ইন্সপেকট্রাম রেডিও নামে একটি প্রাইভেট রেডিও স্টেশন প্রতিষ্ঠার কাজে লন্ডনের বিভিন্ন বাংলা সাপ্তাহিকের লেখালেখিতে এবং বিবিসি বাংলা বিভাগের বিভিন্ন ব্রডকাস্টিংয়ে জড়িয়ে পড়েন।
বিশিষ্ট চিন্তাবিদ কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বরাবরই এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এরশাদের উপদেষ্টা মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়। এ কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বেলা ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন জয়নাল, জাফর এবং দিপালী সাহাসহ কয়েকজন। নিহতদের কয়েকজনের লাশ গুম করে সরকার।
১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটনার প্রতিবাদে ফরহাদ মজহার ‘লাশসকল প্রতিশোধ নেবে’ এবং ‘লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাক’ শিরোনামে দুটি দীর্ঘ কবিতা লিখেছেন। এই কবিতা দুটি তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং কবিতা দুটি আজও এরশাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।
কবি মোহন রায়হান নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে শামিল ছিলেন সামনের সারিতে। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ সামরিক শাসন জারি করামাত্র মধুর ক্যান্টিন থেকে প্রথম প্রতিবাদী মিছিল বের হয় মোহন রায়হানের নেতৃত্বে। ১৯৮৩-এর ১১ জানুয়ারি সামরিক স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে প্রথম ছাত্রবিদ্রোহের নেতৃত্বও দেন তিনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নানাভাবে তৎপর ছিলেন। নব্বইয়ের ২৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি। ওই সময় বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও তেহরান ইত্যাদি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসমূহ তিনি সংগ্রহ করে একটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছোট ভাই।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক