কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ এএম
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সেই দিনটি

পটুয়া কামরুল হাসান

জন্মদিন
পটুয়া কামরুল হাসান

কামরুল হাসান খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপকার। তাকে সবাই শিল্পী বললেও নিজে ‘পটুয়া’ নামে পরিচিত হতে পছন্দ করতেন। কামরুল হাসান ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর পিতার কর্মস্থল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার নারেঙ্গা গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ হাশিম ছিলেন তিলজলা গোরস্তানের সুপারিনটেনডেন্ট। কামরুল হাসানের শিক্ষাজীবন কাটে কলকাতায়। ১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসে ভর্তি হন এবং ১৯৪৭ সালে চিত্রকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনে চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বয়েজ স্কাউট, শরীরচর্চা, ব্রতচারী আন্দোলন, শিশু সংগঠন মণিমেলা, মুকুল ফৌজ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৫ সালে শরীরচর্চা প্রতিযোগিতায় বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হন। দেশ বিভাগের পর ঢাকা চলে আসেন এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঢাকায় একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন (১৯৪৮)। ঢাকায় চিত্রকলার চর্চা ও প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আর্ট গ্রুপ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধিকার ও অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন (১৯৬৯-৭০) এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও বেতার দপ্তরের শিল্প বিভাগের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। এ সময় পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের রক্তপায়ী, হিংস্র মুখমণ্ডল সংবলিত একটি পোস্টার এঁকে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। পোস্টারটির শিরোনাম: ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে।’ ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে মৃত্যুর কিছু পূর্বে তিনি অনুরূপ আরেকটি স্কেচ আঁকেন ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’ শিরোনামে। কামরুল হাসানের এসব চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক সচেতনতা, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে নির্ভীক প্রতিবাদী মানসিকতা, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সমাজ সচেতনতাই প্রকাশিত হয়েছে। তার চিত্রকলার প্রধান উপাদান নরনারী (বিশেষত রমণীর শরীর), পশুপাখি (প্রধানত গরু ও শৃগাল), সাপ ও প্রকৃতি। এসবের মধ্য দিয়ে তিনি আবহমান বাংলার গ্রামীণ সমাজের সামগ্রিক রূপ, বাংলার নিসর্গ, স্বৈরশাসকদের অত্যাচার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার চিত্র চমৎকারভাবে তুলে ধরেন। তার অঙ্কিত চিত্রকলা ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জনসাধারণকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছে। কামরুল হাসানের চিত্রকলায় লৌকিক ও আধুনিক রীতির মিশ্রণ ঘটায় তিনি ‘পটুয়া কামরুল হাসান’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারি মনোগ্রাম তৈরি করার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশ-বিদেশে তার চিত্রকলার অনেক একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া বহু যৌথ প্রদর্শনীতেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। চিত্রকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য কামরুল হাসান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন। সেসবের স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৯), চারুশিল্পী সংসদ সম্মান (১৯৮৪), বাংলা একাডেমির ফেলো (১৯৮৫) উল্লেখযোগ্য। তার ‘তিনকন্যা’ ও ‘নাইওর’ চিত্রকর্ম অবলম্বনে যথাক্রমে যুগোস্লাভিয়া সরকার (১৯৮৫) ও বাংলাদেশ সরকার (১৯৮৬) দুটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

‘এখন সবাই মুক্তভাবে কথা বলতে পারছেন’

ভেড়ামারায় শিক্ষা কর্মকর্তা অবরুদ্ধ

সিএমপির পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি

‘আ.লীগের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে তাদের এ শোচনীয় পরিণতি’

বর্ষসেরা শব্দ ‘ব্রেন রট’: টিকটক ও রিলসের সঙ্গে কী সম্পর্ক?

‘ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে’

মেহেরপুরের শহীদ আবু সাঈদ ক্লাবে হামলা-ভাঙচুর

‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও’ স্লোগানে উত্তাল ঢাবি

বাজারে বিক্রির সময় টিসিবির ৩০ বস্তা চাল জব্দ

১০

সেন্টমার্টিনে ভেসে এলো যুবকের মরদেহ

১১

ইসরায়েলকে ‘গণহত্যায় দায়ী বর্ণবাদী রাষ্ট্র’ ঘোষণা অক্সফোর্ড ইউনিয়নের

১২

সব সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি ২০০ করার দাবি

১৩

টি-টোয়েন্টি দলে সুপ্তা-সুমনা

১৪

জনগণ এখন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারছেন : আমিনুল হক

১৫

ছারছিনা পীরের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সৌজন্য সাক্ষাৎ

১৬

পারভেজ তমালের আরও ৬ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব তলব

১৭

আমরা ভারতের আধিপত্যবাদ মেনে নেব না : হারুন ইজহার

১৮

ভারতে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ

১৯

আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ জ্যোতিদের

২০
X