রাজধানী ঢাকা কিংবা বাংলাদেশ নয়, বায়ুদূষণ বিশ্ববাসীর জন্য এক বড় সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কারণে। অস্বাভাবিকভাবে বায়ুদূষণ বৃদ্ধিতে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যুঝুঁকি বেড়েই চলেছে। মাঝে বর্ষাকালে কিছুদিন ঢাকার বাতাসের মানের উন্নতি হলেও আবারও বায়ুদূষণ বাড়ছে। বিগত সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। মানুষ ভুগছে। নতুন সরকারকে এ বিষয়ে জোর দেওয়ার তাগিদ।
আইকিউএয়ার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। যারা নিয়মিত বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকা প্রকাশ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করে এই একিউআই সূচক, যা একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে।
গতকাল শনিবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের দিকে আইকিউএয়ার বায়ুদূষণের তালিকা প্রকাশ করে। তালিকা অনুযায়ী বায়ুদূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লি। শহরটির বাতাসের মানের স্কোর ৩৬২। এদিকে বায়ুদূষণে ২৫৮ স্কোর নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে আছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের ‘লাহোর’। ১৬৭ স্কোর নিয়ে রাজধানী ঢাকার অবস্থান পঞ্চম। নাগরিকদের জন্য বাতাসের এই মানও ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ অবস্থায় নগরবাসীকে জানালা বন্ধ রাখার পাশাপাশি ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দূষণ দূর করতে প্রকল্প কম হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বায়ুদূষণ রোধে সরকার ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুটি প্রকল্পে অন্তত ৭২০ কোটি টাকার ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১০ বছর পর্যন্ত শেষ হওয়া প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প ‘নির্মল বায়ু টেকসই পরিবেশ (কেস)’ নিয়ে ২০১৯ সালেই তৎকালীন সংসদীয় কমিটি আপত্তি তোলে। এ প্রকল্পে অনেকটা ‘অপচয়ের পর’ এখন নতুন করে বায়ু, পানিদূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার ‘বাংলাদেশে টেকসই পরিবেশ ও রূপান্তর (বেস্ট)’ শিরোনামে আরেকটি প্রকল্প নিয়েছে। এতে ২৫ কোটি ডলার (২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা) অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। গত বছরের জুন মাসে শুরু হয়েছে, চলবে ২০২৮ সাল পর্যন্ত।
ঢাকার বায়ুর মানের উন্নতিতে সরকারের উদ্যোগ ও তৎপরতা বিষয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি স্থাপনা নির্মাণে পোড়া ইটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। ফিটনেসবিহীন যানবাহনকে সময় দেওয়া হয়েছে ছয় মাস। এর মধ্যে নতুন বাস নামাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবহন মালিকদের বলা হয়েছে। ঢাকার ধুলাবালু কমাতে রাস্তায় পানি দিতে বলেছেন তিনি। সেটাও দেওয়া হচ্ছে বলে তাকে জানানো হয়েছে।
একসময় ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য দায়ী করা হতো ইটভাটার ধোঁয়াকে। পরে সে জায়গা দখল করে নেয় যানবাহন ও শিল্প-কলকারখানার ধোঁয়া। কয়েক বছর ধরে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প ও ছোট-বড় আবাসন প্রকল্পের নির্মাণযজ্ঞ বাড়িয়েছে দূষণ। আমরা মনে করি, দূষণ কমাতে রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করা দরকার। উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমবে না। দেশের অধিকাংশ শহর ও পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এ কারণে আগুন দিয়ে বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে। এতে দূষণ বাড়ছে। বস্তুত সারা দেশেই বায়ুদূষণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায় পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারা দেশের পরিবেশ সুরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।