রাজধানী ঢাকায় অস্থিরতা কাটছেই না। প্রায় প্রতিদিনই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলন অবরোধের ঘটনা ঘটছে। এসব কেন্দ্র করে ঘটছে ভাঙচুর, লুটপাট, সহিংসতা, হতাহতের ঘটনা। পাশাপাশি তীব্র যানজটে বাড়ছে জনভোগান্তি। সর্বশেষ গতকাল সোমবারও রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা। শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক।
সোমবার কালবেলায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গত রোববার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থীর ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ডিএমআরসির শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ। রোববার দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ ভাঙচুর চলে। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় সাংবাদিকসহ আহত হন ২০ জন। গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অভিজিৎ হালদার নামে ডিএমআরসির এক শিক্ষার্থী মারা যান। ডেঙ্গু আক্রান্ত অভিজিতের প্লাটিলেট কমে গেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে চেয়েছিল তার পরিবার। মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তাকে নিতে দেয়নি বলে অভিজিতের সহপাঠীদের অভিযোগ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিজিতের মৃত্যুর পর টাকার জন্য লাশ আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০ নভেম্বর ডিএমআরসি শিক্ষার্থীরা মরদেহ নিতে এলেও কোনো সমাধান না হওয়ায় বিক্ষোভ শুরু করেন। ২১ নভেম্বর ডিএমআরসি শিক্ষার্থীরা আবার ন্যাশনাল মেডিকেলে গেলে নজরুল ও সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করেন। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই রোববার দুপুর ১টার পর ডিএমআরসির শিক্ষার্থীসহ শত শত লোক ন্যাশনাল হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। আগের দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমআরসিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ওই দুই কলেজের শত শত শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে ডিএমআরসির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুই কলেজের মারামারি বেধে যায়। যাত্রাবাড়ী আবার পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পুলিশের বাধা ভেঙেও চলতে থাকে দুপক্ষের সংঘর্ষ। একপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বেশ কিছুদিন তো বটেই, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীতে চলছে একের পর এক আন্দোলন অবরোধের মতো ঘটনা। বিশেষ করে তিতুমীর কলেজ, অটোরিকশাচালকদের আন্দোলন অন্যতম। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা আপাতত চলাচল চলতে পারার হাইকোর্টের আদেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় গতকাল হাইকোর্টের দেওয়া এক মাসের স্থিতাদেশ অত্যন্ত সময়োচিত বলে আমরা মনে করি। এ আদেশ অটোরিকশা ইস্যুতে উত্তেজনা কমাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এদিকে যাত্রাবাড়ী এলাকাসহ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংঘাত-সংঘর্ষ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বানের পাশাপাশি এ ধরনের সংঘাতের পেছনে কোনো ধরনের ইন্ধন পাওয়া গেলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইংয়ের প্রধান শফিকুল আলম।
আমরা মনে করি, যে কোনো রকমের সহিংস ও জনভোগান্তিমূলক তৎপরতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এসব ঘটনা পুরো পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। সমস্যা যেখানে আছে, নিশ্চয়ই তার কোনো না কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান আছে। কথায় কথায় আন্দোলন, অবরোধ ও সহিংসতার পথ পরিত্যাগ করতে হবে। সহিষ্ণুতাই কল্যাণকর। আমাদের প্রত্যাশা, যাত্রাবাড়ীর ঘটনায় সরকারের উচিত দ্রুত একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা।