শাফকাত রাব্বী অনীক যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের গুপ্তা কলেজ অব বিজনেসের অ্যাডজাঙ্কট ইনস্ট্রাক্টর অব বিজনেস অ্যানালিস্ট। এ ছাড়া তিনি ডালাসের একটি বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেজারি বিভাগের বিশ্লেষণী দলের প্রধান। কর্নেল ইউনিভার্সিটি, এনওয়াই থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং মিয়ামি ইউনিভার্সিটি, এফএল থেকে সিস্টেম অ্যানালাইসিসে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডিস ইনদ ভেস্টর সার্ভিস, নিউইয়র্কে মর্টগেজ এবং বন্ড ইন্স্যুরেন্স শিল্পের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডভিত্তিক অ্যাসেট-ব্যাকড সিকিউরিটিজ শিল্পের বিশ্লেষক হিসেবে যোগদান করেন। সম্প্রতি দেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান, অর্থনীতি, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, সংস্কারসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন
কালবেলা : গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন দেখছেন?
সাফকাত আনিক : গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অর্থনীতি পৃথিবীর কোনো দেশেই ভালো থাকে না এবং বাংলাদেশেও সেটা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। মূলত এই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের পুরো সিস্টেমটাই ওলটপালট হয়ে গেছে। যারা স্বৈরশাসনের সুবিধাভোগী ছিল, তারা এখন পালিয়ে গেছে। যারা দেশে রয়েছে তারাও এখন কোনো দলে কীভাবে জায়গা করে নেবে, সেটা নিয়েই ব্যস্ত। ফলে দেশের অর্থনীতি এখন অনেকটা এলোমেলো, যা স্থিতিশীল হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। একটি দেশের অর্থনীতির মূল উপাদান হলো কনফিডেন্স। এমন নয় যে হাসিনার আমলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক কনফিডেন্স ছিল, সেটা ছিল না; কিন্তু অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। চোরে-চোরে মিলে একটি সিস্টেম একভাবে চালিয়ে নিচ্ছিল। আর এখন সেই চোরদেরও কোনো কনফিডেন্স নেই। সুতরাং গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অর্থনীতি ভালো থাকার কথা না। নেইও। আমরা প্রথমেই এ বিষয়টা পরিষ্কার করে নিচ্ছি; কারণ আমাদের এমনটা আশা করা উচিত নয় যে, হাসিনাকে বিতাড়িত করার পর নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে সবকিছু এক দিনে ঠিক করে ফেলবে। মনে রাখতে হবে, সরকারের সামনে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে। চ্যালেঞ্জগুলো আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে হবে।
কালবেলা : ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করবে আনুষ্ঠানিকভাবে। এটা কি আমাদের অর্থনীতিতে কোনো চাপ তৈরি করবে কী?
সাফকাত আনিক : আমাদের ব্যাংকিং খাত ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আমরা আগে জানতাম মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করে। কিন্তু এখন দেখা যায় ব্যাংক থেকে টাকা নয় বরং পুরো ব্যাংকটাই চুরি করে নিয়ে গেছে। দেখা গেছে, একজন ব্যক্তিই একটি ব্যাংক খেয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে যেভাবে লুটপাট চালানো হয়েছে সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আমাদের যে অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তাও খুব একটা কার্যকর নয়। আমাদের বিরাট বৈদেশিক ঋণের বোঝা তৈরি হয়েছে এবং তার কিস্তি পরিশোধও শুরু হয়েছে। সব মিলে আমাদের অর্থনীতি প্রকৃতপক্ষেই অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করলে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে যে শুল্কমুক্ত সুবিধাগুলো পাই, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য আরও সময় বাড়িয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
কালবেলা : বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলো কী এবং এগুলো কাটিয়ে উঠতে কী করা যেতে পারে বলে মনে করেন?
সাফকাত আনিক : প্রথমত মনে রাখতে হবে, আমরা দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় যে সমস্যাগুলো ফেস করছি, সেগুলো পৃথিবীর অনেক দেশ ৭০ থেকে ৮০ বছর আগে সমাধান করে ফেলেছে। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশের মতো চুরি অন্য কোনো দেশে হয় না। তবে বাংলাদেশ এমন কোনো দ্বীপ রাষ্ট্রও নয়, যে এখানে সবকিছু এতটাই ডিফারেন্ট যেখানে কোনো আইনকানুন কাজ করে না। পৃথিবীর যে কোনো একটি ভদ্র দেশের রুলস রেগুলেশনগুলো যদি বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে আমাদের সিস্টেমটাই পরিবর্তন হয়ে যাবে। অনেক ভুল ত্রুটি হতে পারে; কিন্তু কোনো না কোনোভাবে সিস্টেম দাঁড়িয়ে যাবে।
পৃথিবীর যে কোনো একটি সিস্টেমের মূল এথিক্সগুলো খুবই সিম্পল। মিথ্যা বলা যাবে না, চুরি করা যাবে না, আইন ভাঙ্গা যাবে না—এগুলোই সব সিস্টেমের মূল। যুক্তরাষ্ট্রের সিস্টেম হলো, কোনো একটি ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টে যদি মিথ্যা লেখা থাকে, তাহলে সেই মিথ্যার কারণে পুরো এক্সিকিউটিভ সুইট জেলে যায়। তাদের বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়। যদি একটি সিস্টেমে এটা প্রতিষ্ঠিত করা যায় যে, কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় নথিতে মিথ্যা লেখা যাবে না, তাহলে পুরো সিস্টেমটাই পরিবর্তন হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সরকারি কর্মকর্তা কোনো মিথ্যা স্টেটমেন্টে কোনোভাবেই সাইন করতে রাজি হয় না। তারা মিথ্যাকে প্রচণ্ড ভয় পায়। কারণ সেখানে এই অপরাধের শাস্তি অনেক বড় এবং সেই শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। এমনকি আমি যুক্তরাষ্ট্রে একটি ব্যাংকে চাকরি করি, আমার চুক্তিতে লেখা রয়েছে যে, আমি যদি পার্সোনালি কোনো মিথ্যা বলি, তাহলে তারা আমাকে দেওয়া বেতন এবং বোনাসের ছয় বছরের সমপরিমাণ অর্থ ফেরত চাইতে পারে।
এর মানে এটা নয়—আমেরিকায় কেউ মিথ্যা বলে না। সেখানে অনেকে মিথ্যা বলে এবং তার জন্য জেলেও যায়। তবে মূল পয়েন্টটি হলো, বেশিরভাগ মানুষ এটা করতে পারে না, কারণ তাদের সামনে রয়েছে জরিমানা এবং শাস্তির ভয়। আমাদের দেশেও আমরা যদি অর্থ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার চিন্তা করি, তাহলে প্রথমেই মিথ্যা বলা বন্ধ করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন সিস্টেমেটিক্যালি কেউ মিথ্যা বলতে না পারে। আর এরপর, এজেন্সি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাদের বিদ্যমান আইনকানুনগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। শুধু মিথ্যা, খুন এবং চুরি—এ তিনটি জিনিস বন্ধ করা গেলে সমাজের সব সেক্টর লাইনে চলে আসবে।
কালবেলা : বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য করণীয় কী?
সাফকাত আনিক : বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন আইনের শাসন নিশ্চিত করা। আমরা দেখেছি, হাসিনার আমলে বলে বেড়ানো হতো, আমরা সারা পৃথিবীর মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল। যেখানে উন্নয়নের রোল মডেলের একটি সংজ্ঞা হলো, আপনি যখন উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে যাবেন, তখন আপনার উন্নয়ন দেখার বা উপভোগ করার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে ক্রেডিবল আর্থিক কোম্পানিগুলো সেখানে চলে আসবে। অথচ গত ১৫ থেকে ২০ বছরে বাংলাদেশে পৃথিবীর কোনো বড় বিদেশি কোম্পানি আসেনি। কোনো ভালো বিদেশি ব্যাংক আসেনি। কোনো বড় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আসেনি। এমনকি ছোট ছোট দুই একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই বাংলাদেশ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল, তারাও তাদের কার্যক্রম সীমিত করে নিরাপদ জায়গায় এসে বসে আছে এবং মুনাফা নিয়ে চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে পৃথিবীর বড় বড় কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেন আসছে না—এ প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। এর প্রথম উত্তর হলো, বাংলাদেশের সিস্টেম তারা বিশ্বাস করতে পারেনি। আমেরিকায় একটি আইন রয়েছে, ফরেন অফিসার করাপশন অ্যাক্ট। অর্থাৎ আমেরিকার কোনো সরকারি বা বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা যদি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে গিয়ে সেখানের কোনো অফিসারকে ঘুষ প্রদান করে এবং সেটা যদি কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জেনে যায়, তাহলে সেই অফিসারকে যুক্তরাষ্ট্রেই শাস্তি দেওয়া হবে। পশ্চিমা দেশগুলোর এই ‘ফেয়ার নীতি’র কারণে তারা চিন্তা করে, আমরা বাংলাদেশে কাজ করতে যাব এবং সেখানে ঘুষ দিয়ে ধরা খেয়ে শাস্তির মুখে পড়ব! কী দরকার সেখানে যাওয়ার!
বাংলাদেশে উন্নত বিশ্বের কোনো সফিস্টিকেটেড ইনভেস্টমেন্ট আসে না, তার মূল কারণ এখানে আইনের শাসন নেই। তারা যদি বলে, আমি ঘুষ না দিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করব, সেটা বাংলাদেশের সিস্টেমে সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রথমেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ঘুষ ও দুর্নীতি থামাতে হবে। শুধু গাল ভরা কথা দিয়ে নয়, প্রকৃতপক্ষেই যদি আমরা রুল অব ল প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলেই বাংলাদেশে প্রত্যাশিত বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ এলে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।
কালবেলা : আমাদের আর্থিক খাত এবং ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এটাকে ঠিক করার জন্য কোনো বৈশ্বিক মডেল রয়েছে কি?
সাফকাত আনিক : ২০০৮ সালে যখন আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয় তখন সরকার কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ সংকটকে সামাল দিয়েছিল। সরকার তখন যে কাজগুলো করেছিল তার মধ্যে একটি হলো, কিছু প্রতিষ্ঠানকে সরকার ভেঙে পড়তে দিয়েছিল। অন্তত একটি উদাহরণ তৈরি করার জন্য হলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো ধরনের সুবিধা না দিয়ে পড়ে থাকতে দেওয়া হয়। যেমন, ল্যামান ব্রাদারস নামে একটি বড় ব্যাংককে রিকভার না করে নষ্ট হতে দেওয়া হয়। যাতে অন্যরা সাবধান হয়ে যায়। একই সময়ে অন্য কয়েকটি সংকটে থাকা ব্যাংককে জোরপূর্বক ভালো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করে দেওয়া হয়। একীভূত করার পর এই ব্যাংকগুলোকে চালানোর জন্য প্রয়োজন মতো অর্থ সরবরাহ করে সরকার। শর্ত ছিল ব্যাংকগুলো যখন ভবিষ্যতে ভালো হয়ে যাবে এবং মুনাফা করবে তখন সরকারের দেওয়া অর্থ আবার ফেরত দেবে।
মার্কিন সরকার এ সময় দ্বিতীয় যে কাজটি করে তা হলো, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করে দেয়। এর ফলে ব্যাংক সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত না পেলেও একটি বড় অংশ ফেরত পায় এবং নতুন মালিকের হাতে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন রান করে, তখন অর্থনীতিতে তা ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে নতুন যে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করে নেয় তার জমিয়ে রাখা টাকাটাও হাতবদল হতে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠান যখন এভাবে বিক্রি হয়ে যায়, তখন নতুন একটি শ্রেণি তৈরি হয়। যারা তাদের টাকা জমিয়ে রেখেছিল, সেই টাকা তখন বাজারে আসে। সবকিছু মিলে দেশের অর্থনীতির লাভ হয়।
অন্যদিকে আমাদের দেশে রুগণ প্রতিষ্ঠানগুলো কন্টিনিউ করতে দেওয়া হয়। তারা বারবার লোন রি-স্ট্রাকচার করতে থাকে। তাদের সময় বাড়ানো হতে থাকে এবং একই সময়ে সুদ মওকুফ করা হতে থাকে। এর ফলে একটি ব্যাড বিহেভিয়ারকে ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। একদল চোরকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসা প্রয়োজন। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপিতে পড়ে এবং বছরের পর বছর ধরে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে না পারে; তাহলে সেটা কন্টিনিউ করতে না দিয়ে একটি সময়ে ব্যাংকের উচিত প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেওয়া। হতে পারে দুই বছর, চার বছর বা পাঁচ বছর—এরপর প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসেট বিক্রি করে দেওয়া উচিত। এর ফলে নতুন মালিক প্রতিষ্ঠানটি চালাবে এবং সেটা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। বছরের পর বছর ধরে ব্যাংকের টাকা আটকে রাখার প্র্যাকটিস বন্ধ করতে হবে। আমেরিকায় এ নিয়মটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। একই মডেল অনুসরণ করা হয় উন্নত দেশগুলোতেও।
কালবেলা : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
সাফকাত আনিক : যেহেতু বর্তমান সরকার রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নয়, সুতরাং তারা বিভিন্ন দিক থেকে অনেক বেশি ডিস্টার্বের সম্মুখীন হবে এবং হচ্ছে। সরকারের প্রতি আমার পরামর্শ হবে, তারা যেন খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের যে লেজিটিমেট পলিটিক্যাল ফোর্সেস রয়েছে তাদের মধ্যে যারা খুন, মিথ্যা এবং চুরির সঙ্গে জড়িত নয়; সেই গোষ্ঠীগুলোকে আমলে নেয়। তাদের যেন কোনো একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসে বাংলাদেশের সামনে আসতে যাওয়া রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় কাজে লাগায়। সরকারের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, তারা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে আসে।
একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। আদর্শভাবে, বারো মাসের বেশি নয়। আমাদের কাছে পূর্ববর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য রয়েছে যা দেখায় যে, অর্থপূর্ণ সংস্কারগুলো তুলনামূলকভাবে দ্রুত বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যেমন, লতিফুর রহমানের আমলে প্রথম রাতেই ৩৫ জন সচিবকে বদলি করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ৩৫টি মন্ত্রণালয় পুনর্গঠন করা হয়। সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের এই স্তরটি প্রত্যাশা করা উচিত, তবুও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এমন পদক্ষেপ নেয়নি। অগ্রগতির অভাব জনগণের মধ্যে ট্রমা এবং ভয়ের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
আমরা চাই না এর আগের এক-এগারোর সরকার যে কারণে ব্যর্থ হয়েছিল, সেই একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি আবার হোক। এ সরকারের উচিত হবে, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে বসে এবং তাদের পরামর্শ নিয়ে দেশকে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটার পথ খুঁজে বের করা