কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১১ এএম
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

অজাতশত্রুরও শত্রু থাকে!

অজাতশত্রুরও শত্রু থাকে!

শিশুর ওপর সহিংসতা, পাশবিকতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশে নতুন নয়। এবার এ নিষ্ঠুরতার শিকার তালিকায় যুক্ত হলো পাঁচ বছরের ছোট্ট ফুটফুটে কন্যাশিশু মুনতাহা। হারিয়ে যাওয়ার পর গত কয়েক দিন শিশুটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সবার কাছে পরিচিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, তাকে যেন খুঁজে পাওয়া যায়, তার জন্য অসংখ্য মানুষ ছবিটি ছড়িয়ে দিয়েছেন এ মাধ্যমে। পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পরিচিত-অপরিচিত অনেকে। হাত তুলেছেন পরম করুণাময়ের কাছে—শিশুটি যেন তার পিতা-মাতার কোলে ফিরতে পারে। অগণিত মানুষের এ প্রত্যাশা সত্যি হয়েছে বটে; কিন্তু তা চূড়ান্ত বেদনা নিয়ে। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষিকার হাতে খুন হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে! এটাই কি আমাদের সমাজ, এটাই কি মানুষের মানবিকতা, নৈতিকতা! নিষ্পাপ একটি শিশু—যে কি না অজাতশত্রু, তারও নিরাপত্তা নেই তার গৃহশিক্ষিকার কাছেও!

এ ঘটনায় শুধু মুনতাহার পিতা-মাতার নয়, দেশের সব মানুষের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছে। গত রোববার শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের পর শোকে স্তব্ধ সিলেটের কানাইঘাট। নিহত মুনতাহা সিলেটের কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। শিশুটির মরদেহ বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে মুনতাহা। পরে পাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেল হলেও বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তারপর তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের পর থেকে পরিবার দাবি করে আসছিল, পরিকল্পিতভাবে মুনতাহাকে অপহরণ করা হয়েছে। অবশেষে লাশ হয়ে ফিরল নিষ্পাপ মুনতাহা। পুলিশের ভাষ্যে, তাকে হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় পুঁতে রাখা হয়। গত রোববার ভোরে মাটিতে পুঁতে ফেলা মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলে দেওয়ার সময় হাতেনাতে শিশুটির গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম ওরফে মার্জিয়ার মা আলিফজান বেগমকে আটক করেন স্থানীয়রা। এ সময় গলায় রশি প্যাঁচানো অবস্থায় মুনতাহার মরদেহ দেখতে পান তারা। পুলিশের ধারণা, শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

বছর দুই আগে চট্টগ্রামে শিশু আয়াত হত্যাকাণ্ডের কথা মনে আছে আমাদের। মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়। ১০ দিন পর তার ছয় টুকরো লাশ শনাক্ত করা হয় সাগরে। এটি ঘটায় প্রতিবেশী এক যুবক। সিলেটের রাজন হত্যা শিশুর ওপর পৈশাচিকতার আরেক উদাহরণ। মলদ্বারে হাওয়া ঢুকিয়ে হত্যা করা হয় শিশু রাকিবকে। এমন নজির ভূরি ভূরি।

সমাজে শিশুরা কতভাবে যে নিরাপত্তাহীন, তা স্পষ্ট করতে পারে চলতি বছরের এই পরিসংখ্যান। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনটি বলছে, গত জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট হত্যার শিকার শিশুর সংখ্যা ৪৫৪। পাশাপাশি নির্যাতনের শিকার ৫২১। এ ছাড়া ধর্ষণের শিকার মেয়ে ও ছেলে শিশুর সংখ্যা প্রতি তিন মাসে অর্ধশতাধিক। অর্থাৎ অসংখ্য মুনতাহা আমাদের নির্মমতার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে আইন-আদালত-বিচারব্যবস্থা থাকতে, নীতিনৈতিকতা শেখানোর ধর্মীয়, পারিবারিক শিক্ষালয় থাকতে, বিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয় থাকতেও এ অপরাধ প্রতিনিয়ত কেন ঘটছে? মানুষের মানবিক ও নৈতিকতার এ অবক্ষয় কেন? আমরা মনে করি, এ অবক্ষয় একটি মানবিক সমাজ গঠনের শুধু অন্তরায়ই নয়, অশনিসংকেত। সমাজ ও রাষ্ট্রকে গভীর মনোযোগ দিতে হবে এ বিষয়ে। মুনতাহাদের প্রতি এ নিষ্ঠুরতার অবসান হোক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৭২ কোটিতে বিক্রি শিল্পকর্মটির কলা ছিল বাংলাদেশির, কেনা হয় ৪২ টাকায়

এবার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নারী বেছে নিলেন ট্রাম্প

ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা পার

বিচ্ছেদের পর এই প্রথম এআর রাহমানের পোস্ট

লঘুচাপের শঙ্কা, এরপরই জেঁকে বসবে শীত

রংপুর জিলা স্কুল মাঠ নয়, মাহিগঞ্জ কলেজে হচ্ছে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ

ঢাকা লিগে নিষিদ্ধ ৮ ক্রিকেটারসহ ৯জন

মালয়েশিয়ায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন

জীবননগরে সাবেক পৌর মেয়র গ্রেপ্তার

অ্যান্টিগায় মাঠে নামলেই রেকর্ড করবেন মিরাজ

১০

ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি আলালের

১১

কনসার্ট শেষে মাঠ পরিষ্কার করল ঢাকা কলেজ ছাত্রদল

১২

পটুয়াখালীতে শ্রমিকদল নেতা বহিষ্কার

১৩

ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে কলকাঠি নেড়েছে সৌদি, বুশরা বিবির দাবি

১৪

১৫ বছর পর আগুন…

১৫

সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান

১৬

ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হবে : বাকৃবি উপাচার্য

১৭

চাকরি দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স 

১৮

ফ্যাসিবাদ নির্মূলে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান : আদিলুর

১৯

সেতু সংস্কারে ধীরগতি, দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

২০
X