ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশজুড়ে বড় ধরনের বিভেদের আওয়াজ শোনা গিয়েছিল। এখনো প্রায়ই আমরা সেই আভাস পাই। এমন একটি পরিস্থিতিতে সব ধর্মাবলম্বীকে নিয়ে একটি সুন্দর দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, সব ধর্মের মানুষ মিলে একটি সুন্দর দেশ গড়তে চাই। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে কঠিন চীবর দান ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সেনাপ্রধান বলেন, পার্বত্যাঞ্চল থেকেও এই মহাসম্মেলনে অনেকে এসেছেন। আমরা চাই, প্রতি বছর এভাবে দিনটি উদযাপন করা হোক। তা ছাড়া পার্বত্যাঞ্চল আমাদের দেশের একটি বিরাট সম্পদ। পার্বত্যাঞ্চলের শান্তির জন্য যা দরকার, তা-ই করা হবে। সেনাপ্রধান বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে প্রতিটি ধর্মের নিজ নিজ উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম গ্রহণে প্রস্তুত। একই সঙ্গে তিনি সম্প্রীতির দেশ গঠনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থেকে একে অন্যকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সেনাবাহিনী প্রধান পার্বত্য জেলাগুলোয় শান্তি ও সম্প্রীতির উন্নয়ন ঘটিয়ে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি ও বাঙালিদের সচেষ্ট থাকতে অনুরোধ করেন। এ ছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পার্বত্য জেলাগুলোয় পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, পার্বত্য জেলাগুলোয় আরও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে।
সেনাপ্রধানের আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৩ আগস্ট দুপুরে ঢাকার লালবাগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন শেষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন, ‘বড় রকমের একটা বিভেদের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। এমন বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাচ্ছি, যেটা একটা পরিবার, এটাই হচ্ছে মূল জিনিস। এই পরিবারের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা, বিভেদ করার প্রশ্নই আসে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশি।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া আশ্বাসে আশ্বস্ত হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমান কাল থেকে এদেশে সব ধর্মের মানুষ সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচিত ছিল, এই ঐতিহ্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়ে এই যে, হীন রাজনৈতিক স্বার্থে তারা বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে দেশে কিছু দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। দেশের সাধারণ মানুষ একে বিস্তৃত হতে দেয়নি। বরাবরই এ ক্ষেত্রে তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।
আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক হলে, সব ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব। যেখানে সব ধর্মের মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।