অমর্ত্য সেন সর্বকালের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক। তিনি দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্র্যের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখায় ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান।
অমর্ত্য সেনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৩ নভেম্বর, ভারতের শান্তিনিকেতনে। তিনি ১৯৪১ সালে সেইন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। দেশ ভাগের পরে অমর্ত্য সেন পরিবারসহ ভারতে চলে গেলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই বছরই তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে পড়তে যান। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই একই বছর তিনি কেমব্রিজ মজলিসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার আদি নিবাস বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ। অমর্ত্য সেনের পিতা অধ্যাপক আশুতোষ সেন এবং মা অমিতা সেন দুজনই ঢাকার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। পরে ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দিল্লিতে কর্মরত ছিলেন। অমর্ত্য সেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাম রেখেছিলেন অমর্ত্য, যার অর্থ অমর বা অবিনশ্বর। তার মাতামহ আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের একজন পণ্ডিত ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহযোগী। এ ছাড়া তিনি সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপক এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য ছিলেন। তিনি নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও কাজ করেছেন। মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত নোবেলবিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পঠন-পাঠন বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকারে বলা হয়েছে, ‘শয্যার পাশে স্তূপ রাখা যে বই থাকে, তার মধ্যে কিছু বাংলা কবিতা। তবে সেগুলো শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা কাজী নজরুল ইসলামের সুবিখ্যাত নির্বাচিত কবিতা নয়। বিভিন্ন স্থান ও সময়ের ইতিহাসের ওপর কিছু বইও থাকে। সাহিত্যের অভিন্ন কোনো বিষয় রয়েছে—যা সব ক্ষেত্রে আমাকে সমান স্পর্শ করবে। বরং একটি গ্রন্থ যেভাবে রচিত হয় এবং কৌতূহলোদ্দীপক ধারণার বিস্তৃতি ঘটায়, সেটাই আমাকে স্পর্শ করে।’ অমর্ত্য সেন সম্পর্কে জাতিসংঘের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল কোফি আনানের ভাষ্যে, ‘পৃথিবীর দরিদ্র ও সম্পদহীন মানুষের জন্য অমর্ত্য সেনের চেয়ে অধিক ঋদ্ধ ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ আর কেউ নেই। আমাদের জীবনযাত্রার মানের পরিমাপ যে সম্পত্তির দ্বারা নয়, হওয়া উচিত স্বাধীনতার দ্বারা—এটা দেখিয়ে তার রচনাগুলো উন্নয়নের তত্ত্ব ও প্রয়োগকে বৈপ্লবিক করে তুলেছেন। জাতিসংঘ তার উন্নয়নমূলক কাজে অধ্যাপক সেনের দৃষ্টিভঙ্গির প্রজ্ঞা ও মঙ্গলবোধের দ্বারা প্রভূতভাবে উপকৃত হয়েছে।’ তার লেখা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম—Development as Freedom; Rationality and Freedom, The Argumentative Indian এবং The Idea of Justice, Identity and Violence The Illusion of Desting। তার লিখিত বই চল্লিশ বছর ধরে তিরিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।