যে কোনো দেশের জন্য বেকারত্ব সামাজিক ব্যাধির মতো। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা দেশ ও জাতির নিশ্চিত অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বেকারত্ব পাহাড়সম বাধা। দেশের প্রচলিত মজুরিতে মানুষের কাজ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যখন তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না, সেই পরিস্থিতিকে বেকারত্ব বলে। বাংলাদেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অগণিত। বেকারত্বকে নিত্যনতুন সমস্যা সৃষ্টির আঁতুড়ঘর বলা চলে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ, প্রত্যেকেই কর্মক্ষম হলেও নেই পর্যাপ্ত কর্মস্থল। বেকারত্ব নামক অভিশাপের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে এ দেশের বৃহৎসংখ্যক তরুণ। একটা জাতি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অন্ধকারে রেখে কখনোই আলোর সংস্পর্শ পরিপূর্ণভাবে পেতে পারে না, তথা সেই জাতি উন্নতি শিখরে আরোহণ করতে পারে না। ২০২২ সালে শ্রমশক্তির এক জরিপ অনুযায়ী স্পষ্ট দেখা যায়, তখনকার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮২ হাজার, যা বর্তমানে ২৬ লাখের বেশি। এর মধ্যে আবার উচ্চশিক্ষিত গ্র্যাজুয়েট বেকারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মোট বেকারের এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যায়, যা ৭ লাখ ৯৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট বেকার রয়েছে।
বেকারত্বের কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে কর্মক্ষম তরুণরা। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে না। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভাগ্যের পরিবর্তন না হওয়ায় দিনশেষে হতশ্রী মুখ নিয়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে অজস্র বেকার তরুণের। এতে করে বেশিরভাগ শিক্ষিত বেকার তলিয়ে যাচ্ছে হতাশার অতল গহ্বরে। বেশিরভাগ বেকার ভুগছে পরিচয় সংকটে, বুক ফুলিয়ে বলার মতো সুযোগটুকু নেই তাদের। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ সব জায়গায় নিজেকে আত্মগোপনে রাখতে হয়। তুমি এখন কী করছ?—এ প্রশ্নবাণে দুমড়েমুচড়ে পড়ছে বেকাররা।
সঠিক সময়ে পরিবারের হাল ধরতে না পারার আক্ষেপটা পোড়ায় বারবার। এতে করে কেউ কেউ ভেতরকার দহন সহ্য করতে না পারে বেছে নেয় আত্মহত্যা নামক মরণফাঁদ। তা ছাড়া বেকারত্ব দেশ ও সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলার চাকা ভেঙে দেয়। কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট, দুমুঠো আহারের তাড়নায় কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ে নানারকম অন্যায় ও অপকর্মে। চুরি, ছিনতাই, পকেটমার হয়ে যায় শেষ ভরসা।
দেশের বেকারত্ব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই আলোর মুখ দেখতে পারে এ দেশের বেকার জনগোষ্ঠী। বেকারত্ব নামক অভিশাপ থেকে স্থায়ী মুক্তির জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিকল্প নেই। কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রাইভেট সব খাতে নজর দিতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। অধিক জনসংখ্যাকে দেশের বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি ভাবতে হবে, যে জাতি যত বেশি কাজকে সম্মান করে; সে জাতি তত দ্রুত উন্নতি সাধন করে। তাই কোনো কাজকেই অবজ্ঞা নয়—এমন সংস্কৃতি চালু করতে হবে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষায় জোরদারের পাশাপাশি বেকারদের উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। সেইসঙ্গে সরকারি চাকরিতে বছরের পর বছর পড়ে থাকা শূন্য পদগুলো পূরণ করা জরুরি।
জুবায়েদ মোস্তফা, শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়