‘আবরার ফাহাদের মতো দিনের পর দিন ছাত্রলীগের হাতে খুন, নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষগুলো প্রথম প্রকৃত বিচার পেল। শত শত নিরীহ শিক্ষার্থীর যে পরিমাণ অভিশাপ এত বছরে জমেছিল, তা বিফলে কীভাবে যাবে!’
২৩ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারির পর স্বস্তি প্রকাশ করে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন বুয়েটের শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ। ফেসবুকে তাৎক্ষণিক ওই প্রতিক্রিয়ায় আবরার ফাইয়াজ প্রথমেই মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ!’ ২০১৯ সালে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। তার অপরাধ ছিল, ফেসবুকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়া।
শুধু কি আবরার ফাহাদের ভাই শুকরিয়া আদায় করেছে? গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে কিংবা তারও আগে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে খুন, জখম, ধর্ষণ, নির্যাতন, চাঁদাবাজির শিকার আরও অগণিত মানুষ এভাবে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনেকে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। মিষ্টি বিতরণ হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বুধবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফলে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলো। সন্ত্রাসের দায়ে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠে বিভিন্ন সময়ে। তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিটি প্রথম উত্থাপন করেন দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে এক মতবিনিময় সভায় তিনি সাত দফা দাবি তোলেন সরকারের কাছে। তার অন্যতম ছিল ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নসহ নানা জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।’
প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত নিষিদ্ধের কারণগুলোর সমর্থন মিলবে ১৫ বছরের সংবাদপত্রের শিরোনামে। ছাত্রলীগকে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট। নিবন্ধ ও প্রতিবেদনে শিরোনাম হয়েছে—‘ছাত্রলীগকে ঠেকাবে কে?’, ‘ছাত্রলীগ সামলান’, ‘ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ’ ইত্যাদি। বলা যায় সে ঠেকানোর উদ্যোগটিই নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির মূলনীতি নিয়ে গঠিত ছাত্রসংগঠনটির নাম নিকট ইতিহাসে প্রায়ই উঠে এসেছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ধর্ষণকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধে।
স্বামীকে হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রলীগ ব্যাপক ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়ায়। ধর্ষক হিসেবে নাম আসে ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের। এর আগে ১৯৯৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিক ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করেন। কুকর্ম, কুকীর্তিতে এ সংগঠনের কর্মীদের যেন কোনো জুড়ি নেই। অপকর্ম-অপকাণ্ডে অতীষ্ঠ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকও বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন যে, শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি—এ মূলনীতি থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে ছাত্রলীগ।
নিষিদ্ধ করার কারণ জানিয়ে সরকারের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। সরকারের এ বক্তব্যের সমর্থনে জুলাই-আগস্টের দিনগুলোর বীভৎস দৃশ্য মানুষের চোখের সামনে এখনো ভেসে ওঠার কথা। ছাত্রলীগ সভাপতির ঘোষণার পর সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হিংস্র হায়েনার রূপে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সশস্ত্র ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। চালিয়েছিল নারকী তাণ্ডব।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের আরেকটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বাধিকারের বিভিন্ন আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল নিয়ামকের। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে জীবনবাজি রেখেছে এ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছাত্রলীগ বহুধাবিভক্ত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের মধ্যে দলাদলি, হানাহানি, অন্তর্কোন্দল, হামলা-মারামারি, খুন, ধর্ষণ, শিক্ষার্থী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে ছাত্রলীগের ভয়ংকর ও বীভৎস চেহারা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে ছাত্রলীগের ছিনতাই, চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট জনজীবনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের টর্চার সেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিম আতঙ্ক ছড়ায়।
অনেকে ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য ও গর্বের কথা উল্লেখ করে ইনিয়ে-বিনিয়ে নিষিদ্ধের বিরোধিতা করতে পারেন। ভার্চুয়াল জগতে অনেকে কাজটি ঠিক হয়নি বলেও মত দিতে চাইছেন। তাদের স্মরণ রাখতে হবে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ছাত্রলীগ আর স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ছাত্রলীগের চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে সবসময়ই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী রাজনীতির লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেছে তাদের কথিত ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে। ফ্যাসিবাদ কায়েমের অন্যতম হাতিয়ার ছিল ছাত্রলীগ। গত ১৫ বছর কিংবা আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০০ শাসনেও প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সংগত আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমনের জন্য ছাত্রলীগের ক্যাডারদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসের লীলাভূমিতে পরিণত করে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এই সংগঠনের নেতাদের কক্ষগুলো একেকটি অস্ত্রভান্ডার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করলেও তারা ছিল আইনের ঊর্ধ্বে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর শ্বেতসন্ত্রাস চালাতে দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আবাসন সংকটে শিক্ষার্থীরা যখন চরম ভোগান্তিতে, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে পাঁচ শতাধিক আসন ছাত্রলীগ দখল করে ছিল বলে গত বছর সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়। অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রও এমনই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন ও ডাইনিংয়ে টাকা না দিয়ে জোর করে খাওয়াদাওয়া করে আসছে ছাত্রলীগের নেতা ও বেপরোয়া ক্যাডাররা। যখন তখন হলে বা কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার লাইসেন্স পেয়েছিল সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
শুধু প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই নয়, অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের কোন্দল ও আধিপত্যের লড়াইয়েই বর্বরতা ও নৃশংসতায় কমতি ছিল না। নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি চলেছে সবসময়। মাদকের কারবারেও বিভিন্ন সময়ে নাম এসেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। নিয়মিত বিরতিতে সন্ত্রাস ও ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি বিলুপ্ত ও স্থগিত করতে দেখা গেছে। ফৌজদারি অপরাধে প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা না করে শুধু কমিটি স্থগিত বা ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমেই পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা গেছে। পরে নীরবেই ওইসব কমিটি পুনর্বহাল হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের অপকর্মের দায় নেয়নি সংগঠন।
বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, অর্থের বিনিময়ে কমিটি গঠনের মতো অভিযোগ ছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে ছাত্রলীগের শীর্ষনেতার অবৈধ লেনদেন-সংক্রান্ত কথোপকথন ভাইরাল হয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো একাধিক ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ও মারধরে নেতৃত্ব দিয়ে অনেকে পুরস্কৃত হয়েছে।
প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ কোনো শিক্ষার্থীকে শায়েস্তা করতে ছাত্রলীগের বহুলচর্চিত কৌশল ছিল ‘শিবির ট্যাগ’। শত শত শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে গত ১৫ বছরে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থী কৃষ্ণকে নির্মম নির্যাতনকালে ছাত্রলীগে সন্ত্রাসীরা বলেছিল—‘তোকে মেরে শিবির বলে চালিয়ে দেব।’ পত্রিকায় শিরোনাম হয় এটি। একই সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শরীরে আলপিন ফুটিয়ে নির্যাতন করে এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। এ ছাড়া জোর করে নিজেদের সভা-সমাবেশ, মিছিলে নেওয়ার ঘটনা তো ছিল মামুলি। আবার প্রতিপক্ষ কোনো সংগঠনের সভা-মিছিল করতে দেয়নি তারা।
ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাসে শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকরাও ছিলেন কম্পমান। বিভিন্ন সময়ে অনেক শিক্ষককে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হয়েছে। অনেকের স্মরণ থাকার কথা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অনশনে বসেছিলেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন—‘দেশজুড়ে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর একের পর এক যে নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে, তা রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘন। একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমি ব্যথিত, ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন।’
বুয়েটের আবরার ছাড়াও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে জীবন দিতে হয়েছে বহু মেধাবী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। লাঞ্ছিত, অপমানিত হতে হয়েছে অগণিত নাগরিককে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় দর্জি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, নিষিদ্ধ করে কি ছাত্রলীগের সন্ত্রাস থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দেওয়া যাবে? এ প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে এ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সশস্ত্র ক্যাডাররা কিন্তু হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। তারা নানাভাবে এ সরকারকে চ্যালেঞ্জ করবে। নানারূপে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে এখন আরও মরিয়া হতে পারে। সরকারের স্থিতিশীলতা বিনষ্টে হয়তো আরও বেপরোয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর নজরদারি ও যথাযথ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তাদের হাতে থাকা বিপুল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কাজটি করতে হবে সর্বাগ্রে। ছাত্রলীগের সর্বস্তরের কমিটিতে যারা দায়িত্বে ছিল তাদের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকলে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। নিশ্চয়ই এসব বিষয় মাথায় রেখেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাবেক সভাপতি, বিএফইউজে