ড. ইকবাল আহমেদ
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৬ এএম
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। মাতৃভাষায় শিক্ষার সুবিধা হলো, এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনা প্রকাশে স্বাধীনতা দেয় এবং বিষয়বস্তুর গভীরতায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে। বিভিন্ন উন্নত দেশ মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এই প্রবন্ধে আমরা মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার বর্তমান অবস্থা, এর চ্যালেঞ্জ, এবং এর উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করব।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা: কী এবং কেন?

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা বলতে বোঝায়, একটি দেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা তাদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক জ্ঞান আহরণ, বিশ্লেষণ এবং ব্যবহার করেন। এটি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, বরং বিভিন্ন গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও মাতৃভাষার ব্যবহারের ওপর জোর দেয়। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার মূল উদ্দেশ্য হলো, জ্ঞানের গভীরে যাওয়া এবং সেই জ্ঞান ব্যবহার করে সমাজ ও দেশের প্রয়োজন মেটানো। মাতৃভাষায় শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিজ্ঞান ও গবেষণার বিষয়ে আগ্রহ তৈরি করে। যখন শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ ভাষায় জ্ঞান আহরণ করতে পারে, তখন তারা বিষয়ের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয় এবং তা সহজেই আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়াও মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা গবেষণা ও উদ্ভাবনকে দেশের প্রেক্ষাপটে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে পারে।

উন্নত দেশগুলোতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার উদাহরণ এবং এর ফলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের কেস স্টাডি বেশ কিছু আছে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু দেশের উদাহরণ এবং তাদের সফলতা তুলে ধরা হলো:

জার্মানি: জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে জার্মান ভাষার ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। জার্মানিতে সব স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমানের শিক্ষামূলক বই, গবেষণাপত্র, এবং বৈজ্ঞানিক জার্নাল জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় পড়াশোনা করতে পারায় শিক্ষাগত দক্ষতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। জার্মান ভাষার মাধ্যমে উচ্চমানের গবেষণার সুযোগ তৈরি হওয়ায় শিল্পক্ষেত্রে উদ্ভাবনী গবেষণা ও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে, যা জার্মানির প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। যেমন, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটি এবং জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান গবেষণা এবং শিক্ষা জার্মান ভাষাতেই পরিচালিত হয়।

জাপান: জাপান তার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং গবেষণা কার্যক্রমে জাপানি ভাষার ওপর নির্ভর করে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে জাপানি ভাষায় প্রচুর বই, প্রবন্ধ, এবং গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। জাপানের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, যেমন ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি নির্মাণ, এবং রোবোটিক্সের ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষার ব্যবহার তাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে আরও মজবুত করেছে এবং শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানচর্চার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে।

ফ্রান্স: ফ্রান্সের শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ফরাসি ভাষার ব্যবহার অনেকটাই প্রচলিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা বিষয়ে ফরাসি ভাষায় অনেক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেয়। ফরাসি ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ হয়েছে। ফরাসি ভাষায় উচ্চশিক্ষার কারণে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। ফরাসি ভাষায় বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও গবেষণা ফ্রান্সকে একটি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

রাশিয়া: রাশিয়ায় মাতৃভাষা (রুশ) ব্যবহার করে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ব্যাপকভাবে পরিচালিত হয়। রাশিয়ার বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলির একটি বড় অংশ রুশ ভাষায় প্রকাশিত হয়। রাশিয়া তার নিজস্ব ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে পারমাণবিক গবেষণা, মহাকাশ প্রযুক্তি, এবং সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি করেছে। এ ছাড়া রুশ ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ফলে তারা নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তিতে স্বাবলম্বী হতে পেরেছে, যা দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজনীয়তা: বাংলাদেশে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা প্রধানত ইংরেজিভিত্তিক, যার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের মনের ভাব বা চিন্তাকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে না। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবে এবং নিজেদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবে।

১. শিক্ষার্থীদের উপলব্ধির সক্ষমতা বৃদ্ধি: মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়বস্তু বুঝতে সহজ করে তোলে। যখন শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের ভাষায় কোনো জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা সূত্র অধ্যয়ন করে, তখন তা সহজে আত্মস্থ হয় এবং তারা বিষয়ের ওপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

২. গবেষণায় দেশীয় সমস্যার সমাধান: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশীয় সমস্যাগুলোর সমাধানে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মাতৃভাষায় গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে দেশীয় প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বৈজ্ঞানিক সমাধান তৈরি করা সম্ভব। যেমন, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, বা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে স্থানীয় সমস্যার সমাধান করতে স্থানীয় ভাষায় গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

৩. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সমন্বয় :

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে জ্ঞানকে সহজে মেলাতে পারে। এর ফলে তারা নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণায় দেশীয় সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে কার্যকরী সমাধান বের করতে পারে।

বাংলাদেশে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার বর্তমান অবস্থা:

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার প্রচেষ্টা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত ইংরেজি মাধ্যমেই পড়াশোনা পরিচালনা করে থাকে। বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পাঠ্যপুস্তক বা গবেষণার উপকরণও সীমিত। তবে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

১. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা একাডেমি: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলা একাডেমি মাতৃভাষায় শিক্ষা ও গবেষণার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশ করে, যা মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

২. বাংলা ভাষায় প্রযুক্তিবিষয়ক বই প্রকাশ: বাংলাদেশে প্রযুক্তিবিষয়ক গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদ এবং প্রকাশের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিজেদের গবেষণার ফলাফল বাংলা ভাষায় প্রকাশ করছে।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা এই প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাধা সৃষ্টি করছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কার্যকর সমাধানও বের করা সম্ভব। এখানে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো এবং তাদের সমাধানের উপায় তুলে ধরা হলো:

১. পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণা উপকরণের অভাব: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তক এবং গবেষণা উপকরণের ঘাটতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা ও উদ্ভাবনের অনেক কিছুই ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়, যা বাংলায় অনুবাদ করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো কঠিন।

২. শিক্ষক ও গবেষকদের দক্ষতার ঘাটতি: বাংলাদেশের অনেক শিক্ষকের শিক্ষাদানের ভাষা এবং গবেষণার মাধ্যম ইংরেজি। ফলে মাতৃভাষায় জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয় বা তত্ত্বগুলো পড়ানো তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। শিক্ষকদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শেখানোর প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন করার উদ্যোগ খুবই সীমিত।

৩. বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা: গবেষণা ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গ্লোবাল একাডেমিক ডায়ালগের মূল মাধ্যম হলো ইংরেজি। ফলে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা করলে বৈশ্বিক স্তরে অন্যান্য গবেষকের সঙ্গে জ্ঞানের বিনিময় এবং গবেষণা সহযোগিতা করা কঠিন হতে পারে। এতে করে দেশীয় গবেষণার আন্তর্জাতিক প্রভাব কমে যেতে পারে।

৪. প্রযুক্তিগত মেধার সংকট: বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে মাতৃভাষায় গবেষণার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত পরিভাষা এবং সমসাময়িক ভাষাগত উপকরণের সঠিক ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির টার্মিনোলজি বাংলায় সরাসরি অনুবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মোলিকুলার বায়োলজির মতন বিষয়গুলোর কথা সর্বাগ্রে আসবে।

৫. উন্নত গবেষণা পরিবেশের অভাব: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পরিবেশ সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। গবেষণার সুযোগ ও প্রণোদনা সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় পর্যাপ্ত মনোনিবেশ করতে পারে না।

সমাধানের উপায়সমূহ:

১. বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও গবেষণা উপকরণ উন্নয়ন: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক পাঠ্যপুস্তক এবং গবেষণা উপকরণ তৈরি করতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এজন্য গবেষণা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং বাংলা একাডেমির যৌথভাবে কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে একটি সরকারি সহযোগিতায় সম্মিলিত টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মানের বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ এবং সাময়িকী বাংলায় অনুবাদ করা একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।

২. শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন: শিক্ষকদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শেখানোর দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সরকার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌথভাবে এমন প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যা শিক্ষকদের বাংলা ভাষায় জটিল বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলো সহজে শেখাতে সক্ষম করবে।

৩. প্রযুক্তিগত পরিভাষা ও ভাষা উদ্ভাবন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জটিল পরিভাষাগুলো বাংলা ভাষায় সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এর জন্য একটি মানসম্পন্ন প্রযুক্তিগত অভিধান তৈরি করা যেতে পারে। নতুন প্রযুক্তিগত ধারণা এবং টার্মিনোলজির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শব্দ তৈরি করার জন্য গবেষক ও ভাষাবিদদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

৪. বৈশ্বিক সংযোগ রক্ষা: বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক আলোচনার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতেও দক্ষ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের দুই ভাষায় গবেষণা ও বিজ্ঞান চর্চার ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য বিশেষ কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে তারা বাংলায় জ্ঞান অর্জন করলেও বৈশ্বিক স্তরে গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

৫. গবেষণা প্রণোদনা ও পরিবেশ উন্নয়ন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গবেষকদের জন্য প্রণোদনা বৃদ্ধি করা হলে বিজ্ঞান চর্চার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে। এর পাশাপাশি আধুনিক ল্যাব, বইপত্র, এবং গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার জন্য অতিরিক্ত প্রণোদনার, নিয়মিত জাতীয় প্রকাশনা ব্যবস্থার সৃষ্টি করলে দেশীয় গবেষকদের এই ব্যাপারে আগ্রহ বাড়বে।

৬. মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার উপযোগিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শেখার সুবিধা এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে তার প্রভাব সম্পর্কে অবগত করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি অফিস-আদালত, শিল্প প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষার অগ্রাধিকার দিতে হবে।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা দেশের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন স্তরে আমরা মাতৃভাষায় (বাংলায়) বিজ্ঞান চর্চা এবং গবেষণার কথা বলে এলেও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ও ফলপ্রসূ ভূমিকা দেখা যায়নি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে, বাংলা একাডেমির উদ্যোগে কিছু কিছু বই অনুবাদ ছাড়া সম্মিলিত কোনো কাজ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে এর সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, গবেষণা অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক গবেষণার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করার মতো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে : এলডিপি মহাসচিব

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ডানা, পশ্চিমবঙ্গের ৮ জেলায় স্কুল বন্ধ

‘শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইজিপির কাছে’

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে খুমেক হাসপাতাল, বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সেবা

জনবল নেবে সেভ দ্য চিলড্রেন, থাকছে না বয়সসীমা

নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য় পরিণত

প্যারিসে ফিলিস্তিনপন্থিদের ব্যাপক বিক্ষোভ

পটুয়াখালীতে নারীসহ যুবলীগ নেতা আটক

পপুলার ফার্মায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

পুতিন-মোদি বৈঠক, পারস্পরিক সাহায্যে জোর

১০

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ, উত্তাল সাগর

১১

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা

১২

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৩

তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

১৪

২৩ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি 

১৫

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৬

‘সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে’

১৭

ইউএনএফপিএ এবং জাপান সরকারের মাঝে ৪০ কোটি টাকার সহায়তা চুক্তি

১৮

‘রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে কোনো চক্রান্ত করার সুযোগ দেওয়া হবে না’

১৯

বুলগেরিয়ায় পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

২০
X