কালবেলা: বর্তমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে এনজিওগুলো কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে?
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান: বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে এনজিওগুলো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনো সম্পূর্ণভাবে না কাটার কারণে এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ডে নানা অপ্রত্যাশিত প্রশাসনিক বাধা দেখা দিচ্ছে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নকে ধীরগতিতে ফেলে দিচ্ছে। এর পাশাপাশি, অর্থায়নের সংকটও এনজিওগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও দেশীয় ফান্ডিংয়ের অভাবে অনেক এনজিওকে তাদের কার্যক্রম সীমিত করতে বা প্রকল্প বন্ধ করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
এনজিওগুলোর ওপর সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কঠোর নীতিমালা ও বিধিনিষেধ আরোপ করায় কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়ন্ত্রক চাপও বাড়ছে। বিশেষত, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর অনুমোদন প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এনজিওগুলোর কাজ অনেক ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কালবেলা: বাংলাদেশে এনজিওগুলোর মূল কার্যক্রমের মধ্যে কোন খাতগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান: বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রম দেশের উন্নয়ন ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।
প্রথমত, দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুদ্রঋণ খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করা হচ্ছে, যা তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে এবং আয়ের পথ সুগম করছে।
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতেও বিশাল ভূমিকা রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃত্বকালীন সেবা, শিশুস্বাস্থ্য এবং পুষ্টি উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কাজ করা হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এবং পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে, বিশেষ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক ও প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে। কারিগরি শিক্ষার প্রসারও দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অসামান্য কাজ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি, পুনর্বাসন এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উপকূলীয় এবং বন্যাপ্রবণ এলাকায় এ ধরনের উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অবদান রয়েছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং নারী নেতৃত্বের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে। এ ছাড়া নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ব্যাপক কাজ হচ্ছে। গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকায় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে।
এ খাতগুলোর কার্যক্রম বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিচ্ছে এবং সরকারের প্রচেষ্টার সঙ্গে সমন্বিতভাবে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করছে।
কালবেলা: সরকারের সঙ্গে এনজিওগুলোর সম্পর্ক কেমন এবং তা কীভাবে উন্নত করা যেতে পারে?
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান: বাংলাদেশে এনজিও বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক সাধারণত সহযোগিতামূলক হলেও মাঝেমধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। এনজিওগুলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং অনেকক্ষেত্রে সরাসরি অংশীদার হয়ে থাকে। কিন্তু এই অংশীদারত্ব সরকার গ্রহণ করতে চায়নি বরং বাধার দেয়াল তৈরি করে রেখেছে। বিগত সময়ে সরকার সবসময়ই এনজিওদের বাঁকা চোখে দেখেছে। বৈদেশিক সাহায্য বা রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে এনজিওর ভূমিকা কোনো সময়ই ভালো চোখে দেখা হয়নি। সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে এনজিওদের কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে।
এনজিওদের একটি বড় অংশ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে জড়িত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রঋণ বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে এ ক্ষুদ্রঋণ শতভাগ ফল অর্জন না করলেও গ্রামীণ কৃষিসহ বিভিন্ন উৎপাদনে তারল্য প্রবাহ ধরে রেখে মূল্যস্ফীতির লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরছে।
এ সম্পর্ক উন্নত করতে প্রথমত সরকার এবং এনজিওর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ ও অংশীদারত্ব বাড়ানো জরুরি। নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে আস্থা বাড়ানো সম্ভব এবং নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো এবং সমাজকল্যাণ বিভাগের নীতি ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করার মাধ্যমে এনজিও কার্যক্রমে গতি আনা যাবে। তৃতীয়ত, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় সরকারের সঙ্গে এনজিওদের কার্যক্রম সমন্বয় করলে স্থানীয় চাহিদার সঙ্গে প্রকল্পের লক্ষ্য মিলিয়ে কাজ করা সহজ হবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিও ইতিবাচক কার্যক্রম প্রচারের মাধ্যমে সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে আস্থা বাড়ানো সম্ভব। এভাবে সরকারের সঙ্গে এনজিওগুলোর সম্পর্ক উন্নত করে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমে সফলতা আনা যাবে।
কালবেলা: এনজিওগুলোর সেবার আওতা বৃদ্ধি করতে কী ধরনের উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান: আমি মনে করি এনজিও সরাসরি কোনো সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হওয়া সঠিক হবে না বরং এটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে কাজ করে। তাই কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে এনজিওগুলোর আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষুদ্রঋণ প্রদান এবং বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প গ্রহণের আওতা বাড়ানো যেতে পারে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
এনজিও বা সিভিল সোসাইটির পক্ষে একটি শক্তিশালী জনমত তৈরি করা জরুরি, যার মাধ্যমে দেশীয় সংস্থাগুলো উন্নত বিশ্বের সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্বে কাজ করতে পারে। এটি শুধু আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রেই নয়, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এনজিওগুলো সরকারি সেবা প্রদানের সঙ্গে স্থানীয় জনগণের সংযুক্তি নিশ্চিত করে। যেসব মানুষের কথা শোনা হয় না, এনজিওগুলো তাদের কথা শুনে তা বিভিন্ন নীতিনির্ধারকের কাছে পৌঁছে দেয়, যাতে সরকার প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে পারে। এভাবে এনজিওগুলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কালবেলা: এনজিওগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান: বাংলাদেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, আর্থিক নিরীক্ষা নিয়মিতভাবে সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি। এটি প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয়ের সঠিক হিসাব প্রদান করতে সাহায্য করবে এবং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখবে। এ ছাড়া উন্মুক্ত তথ্যপ্রকাশের মাধ্যমে তহবিলের ব্যবহার, প্রকল্পের অগ্রগতি এবং কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে। বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা আরও নিশ্চিত করা সম্ভব।
স্থানীয় সম্প্রদায় এবং সুবিধাভোগীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তাদের মতামত গ্রহণ ও সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে কার্যক্রমের জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে, একটি স্বাধীন পর্যালোচনা বোর্ড গঠন করে তহবিলের ব্যবহারের ওপর নিয়মিত মূল্যায়ন করা যেতে পারে, যা স্বচ্ছতার মান বাড়াতে সহায়ক হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্যক্রমের সব তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা সম্ভব, যা জনগণের জন্য সহজলভ্য হবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। এর পাশাপাশি, যারা অর্থায়ন করছেন এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা দরকার, যাতে তারা প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত থাকতে পারেন। এ ছাড়া, একটি তৃতীয়পক্ষ দ্বারা কার্যক্রমের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করানো যেতে পারে, যা প্রকল্পের কার্যকারিতা এবং ফল নির্ধারণে সহায়ক হবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব এবং জনগণের আস্থা ও সমর্থন বৃদ্ধি পাবে।
কালবেলা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এনজিওগুলোর ভূমিকা কতটা কার্যকর হতে পারে?
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এনজিওগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে এবং এরই মধ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রথমত, এনজিও বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা স্থানীয় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে সক্ষম, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অত্যন্ত জরুরি। কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রচারের মাধ্যমে এনজিওগুলো মানুষকে পরিবেশের সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব সম্প্রদায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে এনজিওগুলো প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করে। উদাহরণস্বরূপ, তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জলবায়ু সহনশীল ফসলের চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, অথবা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল শেখাতে পারে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এনজিও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে তারা টেকসই কৃষি, পানি সংরক্ষণ, পুনঃবনায়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারে। এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একই সঙ্গে, স্থানীয় সরকার এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা এনজিওগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ ধরনের সমন্বয়ের মাধ্যমে তারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা সংগ্রহ করতে পারে।
এনজিওগুলোর আরেকটি কার্যকর ভূমিকা হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যদিও তারা এর জন্য দায়ী নয়। এনজিওগুলো এই জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় এবং তাদের জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জলবায়ু নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং প্রান্তিক জনগণের কথা তুলে ধরে।
অতএব, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এনজিওগুলোর ভূমিকা শুধু জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের কাজ স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়ন, নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও ব্যাপক কার্যকর।
কালবেলা: এনজিও খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী এবং তা কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে?
মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান: ডরপসহ অন্যান্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, সরকারি নীতিমালা ও বিধিনিষেধ। অনেক সময় সরকারি বিধিনিষেধ ও প্রশাসনিক জটিলতা এনজিওগুলোর কার্যক্রমের ওপর বড় বাধা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় নেওয়া, অনুমোদন প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা এনজিওগুলোর উন্নয়নমূলক কাজকে বিলম্বিত করে। বিশেষ করে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলো চালু করতে সরকারি অনুমোদন পেতে অতিরিক্ত সময় লাগে, যা প্রকল্পগুলোর সঠিক সময়ে বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
এ ছাড়া, সরকারের কিছু বিধিনিষেধ এনজিওগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এনজিওগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার অভাব কিংবা স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা না পাওয়ার ফলে প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে না।
সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য, সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি। এনজিওগুলোর উচিত স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা ও সমন্বয় বাড়ানো। এ ছাড়া, সরকারি নীতিমালা এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত করার জন্য নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ ও লবিং করা যেতে পারে। এতে এনজিওগুলোর কার্যক্রমে দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব হবে এবং জনগণের কাছে সেবা পৌঁছানো সহজ হবে। এভাবে প্রশাসনিক জটিলতা ও বাধা দূর করা গেলে এনজিওগুলোর কাজ আরও গতিশীল ও ফলপ্রসূ হবে।