দেশের বাজার ব্যবস্থায় সিন্ডিকেট নামক ভূতের অস্তিত্ব রয়েছে, এ কথা সর্বজনবিদিত। এমনকি এই ভূত কে বা কারা, তারা কাদের সঙ্গে কীভাবে কারসাজি করে থাকেন এবং দীর্ঘকাল ধরে বাজারে তারা অপতৎপরতা বা দৌরাত্ম্য অব্যাহত রেখেছেন—সেটাও কমবেশি সবার জানা। গভীর হতাশাজনক ও দুঃখজনক হলেও সত্যি, জীবন্ত বা মানুষরূপী এসব ভূত বছরের পর বছর আছেন বহাল তবিয়তে; বাজারে করে যাচ্ছেন যা ইচ্ছা তাই!
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটেছে। দায়িত্ব নিয়েছে নতুন সরকার—অন্তর্বর্তী সরকার। সামগ্রিকভাবেই দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে, বলাবাহুল্য। এ ক্ষেত্রে নতুন সরকার নানা প্রতিবন্ধকতা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। কঠিন সময় মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের। তার মধ্যে বাজারের অস্বস্তি অন্যতম। একটি শ্রেণি বাদ দিলে দেশের প্রায় সব মানুষের জন্য বাজার এখন সবচেয়ে অস্বস্তির জায়গা।
শনিবার কালবেলায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নতুন সরকার দায়িত্ব নিলেও নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফেরেনি। সরবরাহ, সংকট, অতিবৃষ্টি এবং নানা অজুহাতে শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাজারে লাগামহীন। অতি মুনাফালোভী মজুতদার ও সিন্ডিকেটের কাছে বাজার সংশ্লিষ্টরাও অসহায়। এ কারণে সরকার দফায় দফায় নানা পদক্ষেপ নিয়ে অভিযান চালালেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আরও নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা যায়, নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। কিছু কিছু জিনিসের দাম পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরা বাজার বা পাড়া-মহল্লায় কমেনি। গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচামরিচ ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিছুটা সুফলও দেখা যাচ্ছে বাজারে। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহে প্রতি ডজন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার ডিম এখন ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। শুল্ক ছাড়, আমদানির অনুমতি এবং বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিম আমদানির ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এদিকে মাসখানেক ধরে উত্তাপ ছড়ানো সবজির বাজার খানিকটা কমতির দিকে হলেও, তা এখনো ক্রেতাদের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। দু-একটি বাদে বাকি সব সবজি চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে।
আমরা মনে করি, দেশের বাজার ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের সুযোগসন্ধানী অসাধু চক্র ভাঙার বিকল্প নেই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে বাজার সংকট দূর হবে না। জন্ম হবে নতুন নতুন সংকটের। মানুষেরও জিম্মিদশার সমাপ্তি ঘটবে না। এ মুহূর্তে নিত্যপণ্যের বাজারে যে পরিস্থিতি চলছে, বিশেষ করে সবজির বাজার পরিস্থিতির পেছনে কিছুটা সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দায়ী, পুরোটা নয়। এর পেছনেও রয়েছে বিভিন্ন হাতবদল, চাঁদাবাজি আর বাজার সিন্ডিকেটের কালোহাত। এ ছাড়া উৎপাদিত ও আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের বাজারে রয়েছে সেই পুরোনো অসাধু চক্র। এটি স্পষ্ট যে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর অনেক কিছুই ওলট-পালট হলেও সিন্ডিকেট চক্র যে বহালই রয়ে গেছে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বর্তমান বাজার পরিস্থিতি। বাজারে যে সিন্ডিকেট ও কারসাজি চক্র শক্তিশালী, তা অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাও স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছেন। তাহলে এ চক্রের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না? আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তৎপরতায় বাজারে স্বস্তি ফিরবে এবং দীর্ঘকাল ধরে বাজারে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসা বিদ্যমান সিন্ডিকেট ও মাফিয়া চক্র উৎখাত হবে।