কালবেলার নবযাত্রার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি আজ ১৬ অক্টোবর। ২০২২-এর এই দিনে কালবেলার নবযাত্রা শুরু। আজ প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ সংখ্যা, নিজ কার্যালয়ে রয়েছে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুভেচ্ছা বিনিময়। এবার আমরা নতুন বাংলাদেশে একটি নতুন পরিস্থিতিতে বর্ষপূর্তি উদযাপন করছি। মাত্র দুই মাস আগে দেশে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানে কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনার পতন হয়েছে এবং তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছেন অর্ধসহস্রাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন আরও ২০ হাজার ছাত্র-জনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদের প্রতি। আমরা আরও স্মরণ করছি তাদের, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, হারিয়েছেন তাদের চোখের দৃষ্টি। সেই বীরদের স্মরণ করছি যারা মিথ্যাচার, লুটপাট, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে একদফা দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আপনাদের ভাইবোনদের, আপনাদের সন্তানদের, যারা এ বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছেন।
কালবেলার নবযাত্রার দুই বছরে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে অগণিত মানুষের আস্থা এবং ভালোবাসা অর্জন। এত অল্প সময়ে এমন ঈর্ষণীয় সাফল্য বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে বিরল। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, দেশের অগণিত পাঠক প্রথম দিন থেকেই কালবেলাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। কালবেলার ওপর আস্থা রেখেছেন। অগণিত মানুষের এ ভালোবাসা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, সমসাময়িক জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষপাতমুক্ত মতামত, গঠনমূলক সমালোচনা, জীবন-ঘনিষ্ঠ ফিচার পরিবেশনে আমাদের বিশেষভাবে উৎসাহ জুগিয়েছে। গত দুই বছরে আমাদের আরও একটি বড় অর্জন—সকল মত ও পথের মানুষের মতামত প্রকাশ করা। আমাদের বিশ্বাস থেকেই আমরা এ কাজটি করেছি। কেননা আমরা মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। পক্ষ, বিপক্ষ ও প্রতিপক্ষ সবার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে আমরা তথাকথিত নিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী নই। আমরা সবসময়ই জনগণের পক্ষে। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে চাই। এ প্রচেষ্টা যেমন আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে, তেমনি রয়েছে সামগ্রিক উপস্থাপনাতেও।
কালবেলার যাত্রা শুরু হয় বিশ্বব্যাপী একটি জটিল, বৈরী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে। প্রাণঘাতী করোনা মহামারির ক্ষত এখনো কাটিয়ে ওঠেনি বিশ্ব। অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত সারা বিশ্ব। এমন সময় শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধ বৈশ্বিক এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র করে। এমন একটি পরিস্থিতিতে দেশের গণমাধ্যমগুলো যখন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে, তখন দেশের গণমাধ্যমের অঙ্গনে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই নতুনের কেতন উড়িয়ে যাত্রা শুরু করে দৈনিক কালবেলা।
পরিশেষে নবযাত্রার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা কালবেলার পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকার, শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের প্রত্যাশা, আঁধার পেরোনোর এ যাত্রায় আপনারা নিশ্চয়ই বরাবরের মতো আমাদের পাশে থাকবেন, আপনাদের প্রত্যাশা জানাবেন এবং পরামর্শ দেবেন। কেননা আমরা মনে করি, আপনারাই আমাদের পথচলার পাথেয়, আমাদের অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস।