ইফতেখার হোসাইন
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩৯ এএম
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নোবিপ্রবি হবে সেন্টার অব এক্সিলেন্স

নোবিপ্রবি হবে সেন্টার অব এক্সিলেন্স

উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট আর বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রেক্ষাপট ও উচ্চশিক্ষার বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। তাদের সেই ভিন্নতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাডেমিক, গবেষণাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে পরিলক্ষিত হয়। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উপাচার্যদের কাজের পরিবেশ পুরোপুরি শিক্ষা ও গবেষণাবান্ধব; কিন্তু বাংলাদেশে এ চিত্রটা ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যকে একাডেমিক কাজে যে পরিমাণ শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয়, এর চেয়ে অনেক বেশি মেধা ও শ্রম দিতে হয় নন-একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সামলে নিতে। পরিস্থিতি যখন এমনই, ঠিক এই সময় প্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ ১৮ বছর পর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) পেয়েছে যোগ্যতম একজন উপাচার্য। যার পেশাগত ক্যারিয়ারে রয়েছে বিশ্বমানের একাডেমিক ডিগ্রি ও দেশীয় ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক দক্ষতার অভিজ্ঞতা। ৫ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং (কেমিক্যাল) বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি ও পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ অর্জন করেন। একজন গবেষক, পরামর্শক ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তার ১৮ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশ, কার্বন ক্যাপচার, জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুর দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জীবাশ্ম জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। উপাচার্য হিসেবে যোগদানের প্রথম দিনেই তিনি নোবিপ্রবিকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ কাজে তিনি সর্বাগ্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাদের উন্নয়নে কাজ করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে নোবিপ্রবিকে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের স্বপ্নসারথি হিসেবে পেতে চান তিনি।

কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বিনির্মাণের এ সময়ে একজন উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে সেখানকার শিক্ষার্থীদের। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরাই হলো অন্যতম অংশীজন। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের অব্যক্ত কথা শোনা হয় না, তাদের কথার গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, তাদের চাহিদা ও মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কার আনা হয় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নোবিপ্রবি উপাচার্য। যোগদানের প্রথম দিনেই আনুষ্ঠানিক প্রথম সভাটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই করেছেন তিনি। ওইদিন রাতেই হলগুলো পরিদর্শন করেন। হলগুলোয় ছাত্রছাত্রীদের খাবারের মান ও থাকার রুম সরেজমিন দেখেন। এরই মধ্যে হলে খাবারের দাম কমিয়ে এনেছেন। আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের ও বন্যার্তদের ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। আবাসিক হলগুলোয় যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র নোবিপ্রবিতেই সবার আগে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে সমর্থ হয়েছেন উপাচার্য। এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা যেন বিশ্বের যে কোনো দেশের গ্র্যাজুয়েটদের তুলনায় পিছিয়ে না পড়ে এবং কোনোভাবেই সেশন জটে না পড়ে, সে পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন।

দেশের ২২তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি সেক্টরে পঞ্চম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালে। একশ একর জায়গায় ৪টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ১৮০ শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। সময়ের পালাবদলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদ এবং দুটি ইনস্টিটিউটের অধীন ৩৩ বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ জন। শিক্ষক আছেন ৪২০ জন, যার মধ্যে পিএইচডিধারী শিক্ষক রয়েছেন ৯১ জন এবং পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত আছেন ১১৭ জন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ফার্মেসি ও ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগে পিএইচডি চালু করা হয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তথা অবকাঠামোগতভাবে উন্নত, একাডেমিক দিকে আধুনিক ও গবেষণাবান্ধব করে গড়ে তুলতে একজন দক্ষ নিবেদিতপ্রাণ উপাচার্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ, একজন উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী, যার যোগ্য নেতৃত্বে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে চলে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তেমনি এক উপাচার্য হলেন বরেণ্য গবেষক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি ৫৪টিরও বেশি পিয়ার রিভিউড গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্য, ইতালি, সুইডেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে ৫০টিরও অধিক সম্মেলনে অংশ নেন তিনি এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ রিসার্চ ফান্ড, ইউএসএআইডি-ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স ফান্ড, ইউএসএর মতো সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত ২০টি গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির মতো সংস্থার সঙ্গে তার কাজের অভিজ্ঞতা ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত। ড. ইসমাইল বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক ইনস্টিটিউট এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবেও যুক্ত। তার আওতায় শিক্ষার্থীরা পিএইচডি ও এমফিল করছেন এবং এ ধরনের সহযোগিতামূলক গবেষণা ও পরামর্শ প্রদানের কাজে তিনি আনন্দ খুঁজে পান। তাই প্রশাসন ক্যাডারের চাকরি ছেড়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে বেছে নেন তিনি।

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল জানান, বিজ্ঞান এবং গবেষণার মৌলিক বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ২০২৮ সালের মধ্যে নোবিপ্রবিকে কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ৫০০ বা তারও আগে এগিয়ে নিয়ে আসা তার ভিশন ও মিশন। এ ছাড়া ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের যোগসূত্র বেগবান করে একাডেমিক এক্সিলেন্স হাব হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজাবেন তিনি। গবেষণা কার্যক্রমকে জোরদার করতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার আয়োজন করবেন। পাশাপাশি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে নোবিপ্রবির শিক্ষা সমন্বয় কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, যোগদানের ১৫ দিনের মধ্যে নোবিপ্রবির সঙ্গে তুরস্কের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন তিনি। আর ইরাসমাস প্লাস মোবিলিটি প্রোগ্রামের আওতায় আগামী নভেম্বরেই নোবিপ্রবির দুজন শিক্ষক ও একজন কর্মকর্তা তুরস্কে যাচ্ছেন। উপকূলীয় অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, সরকারের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্লু ইকোনমি সেলের কার্যপরিধি অনুসারে নোয়াখালীর মেঘনা উপকূলবর্তী জু প্লাঙ্কটনের মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করবে নোবিপ্রবি। এ ছাড়া এর আওতায় রয়েছে দুটি প্রকল্প। একটি বিলুপ্ত মৎস্য নিয়ে, অন্যটি ভারি খনিজ নিয়ে নিঝুম দ্বীপে গবেষণা প্রকল্প। অধিকন্তু নোবিপ্রবির উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘ইনস্টিটিউট ফর ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

লেখক: সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ ও তথ্য), নোবিপ্রবি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অ্যাম্বুলেন্স-অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ গেল কৃষি কর্মকর্তার

দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন বহু যাত্রী

চাল ধোয়া পানিতে লুকিয়ে আছে স্কিনের আসল রহস্য

দুই নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান

দেশ কোনো দলের কাছে ইজারা দেওয়া হয়নি : ধর্ম উপদেষ্টা

কসবায় উদ্ধার করা মর্টারশেলের বিস্ফোরণ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে কয়েকটি যানবাহনের সংঘর্ষ, নিহত ১

ঘন কুয়াশায় দুই নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ

কোন কোন বিভাগে বৃষ্টি হবে জানাল আবহাওয়া অফিস

১০

যৌথ বাহিনীর অভিযানে নারী মাদককারবারি গ্রেপ্তার

১১

শীতে অসুস্থ হতে না চাইলে খেতে পারেন এই সুপারফুডগুলো

১২

কম্পিউটার মনিটরে ওয়ারেন্টি সুবিধা বাড়াল ওয়ালটন

১৩

সকালে হালকা গরম পানি খেয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

১৪

নরসিংদীতে ছাত্রদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা

১৫

ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয় কল্পনাকে : পুলিশ

১৬

বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

১৭

আহ্ছানিয়া মিশনে চাকরির সুযোগ

১৮

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ৯ ডিগ্রির ঘরে

১৯

দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে জাসাস : মীর হেলাল

২০
X