লুটপাটের মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশের আর্থিক খাত ধ্বংস করেছেন। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের সিংহভাগই প্রভাবশালী। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আর্থিকভাবে তারা ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত। ক্ষমতাকে তারা সম্পদ বিকাশের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। দুর্নীতির কারণে কমপক্ষে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার মতো খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এসব ব্যাংক বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ক্রমান্বয়ে সব ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে; এরপর প্রয়োজনে মার্জ করা হবে। তবুও গ্রাহকের আমানত ঝুঁকিতে ফেলা হবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন খাত রয়েছে। তার একটি হলো ব্যাংক খাতের সংস্কার। এ খাতে প্রথমে তারা রাষ্ট্রীয় এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পদ্ধতির উন্নতি করতে চান। ব্যাংকগুলোর ঋণখেলাপি অনেক বেড়ে গেছে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে তারা কাজ করছেন। যে বড় বড় পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো কোথায় এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই করবেন। ব্যাংকগুলো নিজস্ব পরিচালনা কাঠামোর দুর্বলতা এবং সমস্যাগুলো সমাধান করতে চান। ব্যাংক খাতের ওপর ফেরত আনতে চান মানুষের আস্থা। আমানতকারীরা ভরসা পাচ্ছেন না। ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ লুটপাট করে খালি করে দেওয়ায় অনেক সময় আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছেন না। অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। বিশেষ করে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাদের ব্যাংকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারা ছাড়া অন্যরা এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন। এ ছাড়া নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। সরকার এসব সমস্যা অ্যাড্রেস করতে চায় এবং ব্যাংক খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে চায়। দ্বিতীয়ত, দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধ করতে চায়। অনেকে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং করে টাকা পাচার করছে। অনেকে আবার হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করছে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অর্থ পাচারের কাজে যারা জড়িত তাদের দেশের ব্যাংকগুলোতে বড় বড় ঋণ রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে সেই অর্থ তারা বিদেশে পাচার করছে। এতে একে তো দেশের সম্পদ বিদেশে চলে যাচ্ছে, তার ওপর ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীরা যে টাকা রেখেছিলেন, সেখানে অনিরাপত্তা তৈরি হচ্ছে। তাই টাকা পাচার রোধ করার বিষয় অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব প্রশাসন এবং কার্যপরিধি সংস্কারও আমাদের অগ্রাধিকারে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক নীতি আগে দেশের অর্থনীতি এবং বাজার ব্যবস্থা খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। আগের সরকার ইচ্ছেমতো বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবহার করেছে। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকিং নিয়মনীতি না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে নিয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে। আর এর ভুক্তভোগী হয়েছে দেশের মানুষ। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার করাটাও এখন জরুরি।
আমরা মনে করি, ব্যাংক খাতের পাশাপাশি পুঁজিবাজারসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। আর এ কাজটি করতে পারলে আর্থিক খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। তবে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের একটি বার্তা দিতে হবে। উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ ক্ষমতাবানদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে। তবেই আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।