সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে যোগ দিতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। গত শুক্রবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। এটি ড. ইউনূসের সরকারের দ্বিতীয় বড় কূটনৈতিক সাফল্য।
মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, ‘যখন আপনারা আমাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, সাত হাজার বা তার বেশিদের বিষয় বিবেচনার জন্য, যারা নিবন্ধন করেও রাজনৈতিক অবস্থা, এখানকার অভ্যুত্থানের কারণে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেটা বিবেচনা করেছি।’
এ সংখ্যা ১৮ হাজার হওয়ার কথা অধ্যাপক ইউনূস মনে করিয়ে দিলে ইব্রাহিম বলেছেন, প্রথম ধাপে সাত হাজার জনের যাওয়ার উদ্যোগ দ্রুত নেওয়া হবে। সব সন্তোষজনক হলে বাকিদেরও ক্রমান্বয়ে নেওয়া হবে। চলতি বছর নতুন-পুরাতন বিদেশি কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিমানের টিকিট স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে ওই সময়ের মধ্যে যেতে পারেননি প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যেতে না পারা এই কর্মীদের নিতে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় এসে সরকারের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার কথাই জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
আমরা মনে করি ড. ইউনূসের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সাফল্য আরব আমিরাতে আটক ৫৭ বাংলাদেশিকে মুক্তির ব্যবস্থা করা। গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, শারজাহ ও আজমানের বিভিন্ন এলাকার সড়কে বিক্ষোভের সময় ৫৭ বাংলাদেশিকে আটক করে আমিরাতের পুলিশ। দুদিন পর দাঙ্গা, যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং সম্পদহানির মতো অভিযোগে তাদের তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির আদালত। এরপর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সুবিধা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা দেয় আমিরাত সরকার। ইউএইর রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এমিরেটস নিউজ এজেন্সি (ওয়াম) তখন জানিয়েছিল, আটক বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তারা ‘বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন রাস্তায় বড় আকারের মিছিল সংঘটিত করেছিল’। এর ফলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। সেইসঙ্গে, আইন প্রয়োগের কাজে বাধা এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগও তোলা হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছিলেন যে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেছিল এবং সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তরা পুলিশের আহ্বানে সাড়া দেননি।
আমরা মনে করি, এ দুটি ঘটনা সরকারের জন্যও ইতিবাচক জায়গা তৈরি করবে। মানুষের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ভাবমূর্তি আরও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি অনেক মানুষের জীবন ইতিবাচক সমাধান পাবে।