আলফ্রেড টেনিসন ভিক্টোরিয়া রাজত্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংরেজ কবি। তিনি ১৮০৯ সালের ৬ আগস্ট ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারের জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তার। মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি একটি ৬ হাজার লাইনের মহাকাব্য লেখেন!
টেনিসন ১৮২৭ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়ালেখা শুরু করেন। একই বছর তিনি এবং তার ভাই চার্লস ‘পোয়েমস বাই টু ব্রাদার্স’ নামে তাদের কবিতাগুচ্ছ প্রথম পুস্তক আকারে প্রকাশ করেন। ১৮৩০ ও ১৮৩২ সালে টেনিসন দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। কিছু সমালোচক টেনিসনের কবিতাগুলোকে ধর্মীয়ভাবে প্রভাবিত এবং অস্পষ্ট হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। এটি তাকে ব্যথিত করেছিল। পরবর্তী ৯ বছরে তিনি আর একটিও বই প্রকাশ করেননি। ১৮৩৬ সালে এমিলি সেলউডের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন করেন। কিন্তু ১৮৪০ সালে একটি ভুল বিনিয়োগের ফলে তিনি তার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সহায়-সম্পত্তি হারান। এ কারণে সেলউডের পরিবার বাগদান ভেঙে দিয়েছিল। ১৮৪২ সালে টেনিসন কবিতার দুটি খণ্ড বের করেন, যা সমালোচক ও সাধারণ শ্রেণি উভয়ের কাছেই অসাধারণ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয় এবং অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন।
৪১ বছর বয়সে টেনিসন ভিক্টোরিয়ান যুগের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তার কবিতা থেকে আয়কৃত টাকায় তিনি তার লেখার পরিবেশের সুবিধার্থে নির্জন জায়গায় একটি বাড়ি কেনেন। বৃহৎ মুখমণ্ডল, বড় দাড়ি, নিয়মিতভাবে মাথায় একটি বিশাল সাহেবি টুপি পরা—সব মিলিয়ে তার উপস্থিতিকে এক আলাদা বিশেষত্ব দান করে। তিনি তার কবিতা পড়তেন খুব গুরুগম্ভীর গলায়। এ কারণে তাকে প্রায়ই ডায়লন থমাসের সঙ্গে তুলনা করা হতো। ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত হয় টেনিসনের ‘আইডিয়েলস অব দ্য কিং’-এর কিছু কবিতা। এটি এক মাসে ১০ হাজারের অধিক কপি বিক্রি হয়। ১৮৮৪ সালে তিনি একটি অভিজাত পদবি গ্রহণ করেন, তার পর থেকে তিনি হয়ে যান ‘লর্ড’ আলফ্রেড টেনিসন।
আলফ্রেড টেনিসনকে তার সমসাময়িকরা ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি ছিলেন কাব্যের একজন অসাধারণ কারিগর। আলফ্রেড লর্ড টেনিসনের দুনিয়াখ্যাত বেশকিছু সাহিত্যকর্ম রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—ইন মেমরিয়াম, নাথিং উইল ডাই, অল থিংস উইল ডাই, দ্য ডাইং সোয়ান অন্যতম। তার বিখ্যাত কবিতা ‘ইউলিসিস’, ‘টিথনাস’, ‘লকসলে হল’, ‘ব্রেক, ব্রেক, ব্রেক’ এবং ‘দ্য লেডি অব শ্যালট’ কবিতাগুলো কাব্যের জগতে একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করেছিল, যা তাকে স্থায়ী খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছতে সাহায্য সাহায্য করে। তার ১৮৪৭ সালে প্রকাশিত ‘দ্য প্রিন্সেস: এ মেডলি’, গ্রন্থটি নারী শিক্ষার ওপর একটি ব্যঙ্গরচনা, যা সে সময় জনপ্রিয় হয়। তার দ্য লাভ সং অব জে আলফ্রেড প্রুফক টেনিসনের আরেকটা মাস্টারপিচ, যা সারা বিশ্বে বহুলপঠিত হয়। লর্ড আলফ্রেড টেনিসন ১৮৯২ সালের ৬ অক্টোবর মারা যান।