সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৪ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে গত বুধবার ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে বদরুদ্দোজা চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি হন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা কালবেলা পরিবার সাবেক এই রাষ্ট্রপতির প্রয়াণে শোকাহত। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং নিহতের পরিবার-স্বজনদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাই।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে নানাবাড়িতে (প্রখ্যাত ‘মুনসেফ বাড়ি’) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহসভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। মেধাবী শিক্ষার্থী বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৪৭ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করার পর ১৯৫৪-৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে এফআরসিপি এবং এসসিপিএস লাভ করেন। খ্যাতিমান চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন এবং চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ছিলেন। রাজনীতিতে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিচিতি শুরু হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে। তিনি ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৯ সালে বদরুদ্দোজা চৌধুরী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া—দুই সরকারের সময়ই ছিলেন মন্ত্রী। বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। বিটিভিতে তার ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠান ছিল খুবই জনপ্রিয়। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে বদরুদ্দোজা চৌধুরী পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দুবার জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং একবার বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের জুন মাসে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ২০০৪ সালের ৮ মে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই তিনি ছিলেন দলটির সভাপতির দায়িত্বে। তার ছেলে মাহী বি চৌধুরী দলের মুখপাত্র ও প্রেসিডিয়াম সদস্য।
ব্যক্তিগতভাবে তো বটেই, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের একজন সৎ, প্রাণবন্ত ও বিনয়ী হিসেবে ছিলেন ব্যতিক্রমী চরিত্রের; দলমত নির্বিশেষে ছিলেন শ্রদ্ধেয়। যদিও দীর্ঘদিন তিনি রাজনৈতিক তৎপরতায় ছিলেন অনুপস্থিত, তবুও তার চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশেষ ক্ষতি। আমরা মনে করি, দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক অঙ্গন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।