এমিল জোলা বিশ্বখ্যাত ফরাসি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। তিনি তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশীল ও সমাজমনস্ক একজন লেখক। জোলা ১৮৪০ সালের ২ এপ্রিল প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার কর্মস্থল প্যারিসের বাইরে হওয়ায় তিন বছর বয়সে জোলা পরিবারের সঙ্গে ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলে চলে যান। ১৮৪৭ সালে বাবার অকালমৃত্যুর পর প্যারিসে ফিরে আসেন। প্যারিসে তার বাল্যবন্ধু পল সেজানের সঙ্গে দেখা হয়। অল্প বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন তিনি। জোলা অল্প বয়সেই অসংখ্য ছোটগল্প, প্রবন্ধ, গোটা চারেক নাটক এবং তিনটি উপন্যাস লেখেন। লেখক জীবন শুরু করার আগে নিজেকে তৈরি করতে থাকেন নানা পেশায়। প্রথমে এক জাহাজ কোম্পানির কেরানির কাজ করেন। ‘লে রুগুনমাকা’ হলো তার ২০টি উপন্যাসের সংকলনের নাম। ১৮৫২ থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ফরাসি সাম্রাজ্যের একটি কল্পিত পরিবারের দুটি শাখার সদস্যদের জীবনকথা নিয়ে তৈরি হয়েছে উপন্যাসগুলোর কাহিনি। ২০টি উপন্যাসে তিন শতাধিক প্রধান চরিত্র তৈরি করেছেন তিনি। পরিবারের দুটি শাখা থেকে তাদের বংশগতি হওয়ার কারণে তারা সবাই একে অন্যের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কে সম্পর্কিত। মানুষে মানুষে সংঘর্ষ, মাদকের প্রভাব এবং শিল্পবিপ্লবের দ্বিতীয় ধাপে বেড়ে ওঠা পতিতাবৃত্তি মানুষের জীবনে কী কী ভয়াবহ প্রভাব ফেলে, তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এসব কাহিনিতে।
নয়া সাংবাদিকতার সৃষ্টির সঙ্গে উলফ, কাপোতে, টমসন, মেইলার, ডিডিওনসহ যেসব লেখকের নাম জড়িয়ে আছে, তাদের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে জোলার। টম উলফ বলেন, তার কথাসাহিত্য লেখার পেছনে উৎসাহের মতো কাজ করেছে জন স্টাইনবেক, চার্লস ডিকেন্স এবং এমিল জোলার মতো করে সমসাময়িক সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার বাসনা। আসলে জোলা নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাসে বাস্তব সমাজের নিরাবেগ চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি মনে করতেন, প্রতিটি উপন্যাসের ভিত্তি হবে বাস্তবতার তথ্যাবলি।
জোলা মনে করেন, তার উপন্যাসে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ রয়েছে। তবে জর্জ লুকাসের মতো কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন, জোলার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বালজাক কিংবা ডিকেন্সের চরিত্রদের মতো জীবনঘনিষ্ঠ ও স্মরণীয় হয়নি। মানুষের গণঅবস্থার চিত্র বেশ ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলেও ব্যক্তিক চরিত্র স্মরণীয় হয়নি বলে মনে করেন তারা। অন্যদিকে জোলা মনে করতেন, কোনো চরিত্র যেন বাস্তবজীবনের চেয়ে বড় না হয়ে যায়। যদিও তিনি বৈজ্ঞানিকভাবে এবং শৈল্পিক দিক থেকে কোনো চরিত্রকে জীবনের চেয়ে বড় করে দেখানো উচিত নয় বলেই মনে করেন। তবু তার কিছু চরিত্র বাস্তব অবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে। ‘লা তেরে’ উপন্যাসে ফ্রান্সের মধ্যাঞ্চলের পল্লি এলাকার প্রাকৃতিক চলমানতার চিত্র যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে বীজ বপনের সময়, ফসল তোলার সময়, মৃত্যু ইত্যাদির মাধ্যমে মানব প্রবৃত্তিকে এক মহান প্রাণশক্তি দেওয়া হয়েছে, যেটা মানবীয় নয়; বরং জীবনেরই মৌলিক শক্তি। বিখ্যাত সাহিত্যিক এমিল জোলা ১৯০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্যারিসে মারা যান।