ড. সায়েমা হক বিদিশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য। শ্রম অর্থনীতিতে পিএইচডি করেছেন যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শ্রমবাজার, দারিদ্র্য, খাদ্যনিরাপত্তা, জেন্ডার ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও তরুণ জনগোষ্ঠী, অভিবাসন ও রেমিট্যান্স আয়, শিক্ষা ও দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করে আসছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির সংস্কারের নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি
কালবেলা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি সংস্কারকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলছেন অনেকে। আপনার মতে, অর্থনীতির কোন কোন দিকে সংস্কার করা জরুরি?
ড. সায়েমা হক বিদিশা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবং সরকার পতনের আগেও অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা যেন সম্পদের সুষম ও যৌক্তিক বণ্টন নিশ্চিত করতে পারি, সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। কিছু কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য স্বল্পমেয়াদি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ মুহূর্তে আমাদের অর্থনীতির সামনে সব থেকে বড় দুটি চ্যালেঞ্জ হলো, মূল্যস্ফীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ভারসাম্যহীনতা। যে কোনো মূল্যে আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং রিজার্ভ সংকট মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান স্থিতিশীল করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ সমস্যাগুলো মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, এ সমস্যাগুলো এক দিনে তৈরি হয়নি, সমাধানও এক দিনে হবে না। পূর্ববর্তী সময়ের বিভিন্ন ভুল নীতির কারণে বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে নীতি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার কারণেও অর্থনীতিতে সমস্যা বেড়েছে।
সুদের হার বেঁধে রাখার ফলে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার ফলে হঠাৎ করে অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়ে গেছে। আমদানীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে যখন টাকার মূল্যমান কমেছে তখন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ এটি। একই সঙ্গে সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা ১০ শতাংশের ওপরে মূল্যস্ফীতিতে রয়েছি। মুদ্রানীতি, রাজস্ব নীতিসহ বিভিন্ন কলাকৌশল ব্যবহার করে হয়তো মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু বিগত সরকার সেখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি কমে আসবে এবং বড় ধরনের পরিবর্তন হবে এমনটা আমি মনে করি না। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সরকার দ্রব্যমূল্য মোটামুটি পর্যায়ে কমিয়ে আনার দিকে যাচ্ছি কি না। ছয় মাস বা এক বছরের একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে জিনিসপত্রের দাম কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আস্তে আস্তে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগোতে হবে। এখন থেকেই দ্রব্যমূল্য কমানোর সে প্রক্রিয়াটি শুরু হওয়া জরুরি। সরকার এ মুহূর্তে বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে জোর দিতে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবকিছুতে এক ধরনের শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হঠাৎ করে পরিবর্তন হবে, সেটা ভাবা যাবে না। তাই আমাদের মুদ্রানীতি, নীতিসুদ হারসহ বিভিন্ন সূচকের পরিবর্তনের মাধ্যমে কৌশলে মূল্যস্ফীতি নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। উন্নত বিশ্বে এ নীতিগুলোই অনুসরণ করা হয়।
কালবেলা: বাজার স্থিতিশীল করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
ড. সায়েমা হক বিদিশা: আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি প্রাইস কমিশন তৈরি করা যেতে পারে। সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে সংযুক্ত করতে হবে। বাজারে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে পণ্যের দাম নির্ধারণ হবে। প্রাইস কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বাজার মনিটরিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে। বাজারের স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা যারা নষ্ট করার চেষ্টা করবে, যারা পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে বা সিন্ডিকেট করবে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শাস্তিটা এমন কঠোর হতে হবে, যেন পরবর্তী সময়ে তারা আর এ ধরনের কাজ করার সাহস না করে।
মূল্যস্ফীতি যেহেতু এখনই ব্যাপকভাবে কমানো যাচ্ছে না, তাই সাধারণ মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা প্রতিদিন দেখি টিসিবির পণ্য নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন। সেখানে পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। যে দামে টিসিবির পণ্য দেওয়া হচ্ছে সেখানে আরও ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে। দেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ যেন সুলভ মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য হাতে পায় তার জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
সামাজিক সুরক্ষা খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। বিশেষ করে শহরের বস্তিবাসীর সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বছরের পর বছর আমরা তাদের জন্য কিছু করার কথা বলে আসছি; কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। পাশাপাশি ব্যক্তি খাতের মালিকদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। প্রতি বছর বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া হয়। এই প্রণোদনা ব্যক্তি খাতের মালিকদেরও দেওয়া যেতে পারে। তাহলে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য কিছুটা হলেও সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারবেন।
কালবেলা: সরকারের অর্থ ব্যবস্থায় কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন?
ড. সায়েমা হক বিদিশা: সরকারের অর্থব্যবস্থায় সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে, যেগুলোতে সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। এগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে হবে। তবে এই সংস্কার এক দিনে হবে না। এজন্য আমরা একটি শ্বেতপত্রের কথা বলছি, সরকার কমিটিও গঠন করেছে। ব্যাংক এবং সরকারের আর্থিক খাতের ক্ষতগুলোকে নিরূপণ করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে এই ক্ষত নিরাময়ে কাজ করতে হবে।
কালবেলা: ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের কথা উঠেছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
ড. সায়েমা হক বিদিশা : ব্যাংকিং খাত এবং সরকারের অর্থব্যবস্থার ক্ষতগুলো হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে এ সমস্যাগুলো বেড়ে উঠেছে। যদি সমস্যার শুরুতেই তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হতো, তাহলে আজ দেশের আর্থিক অবস্থা এমন খারাপ জায়গায় আসত না। আর্থিক খাতের সংস্কারে বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট যে আইন রয়েছে, সেখানে বড় ধরনের পরিমার্জনা দরকার। ব্যাংক ঋণের পুনঃতপশিল করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন সময় ঋণগুলোকে পুনঃতপশিলি করতে দেওয়ার ফলে ঋণের সংজ্ঞাই অনেক সময় ভুল হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, কে ঋণখেলাপি এবং কে ঋণখেলাপি নয়, সেটাই ধরা যায় না। এখানে খুব দ্রুত হাত দিতে হবে। ঋণ দেওয়ার সময় আগের ঋণগুলোর অবস্থা আরও কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, ১০ লাখ টাকা ঋণখেলাপি এবং ১০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি দুটি এক জিনিস নয়। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র এবং মধ্যম আকারের উদ্যোক্তাদের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
কালবেলা: সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন?
ড. সায়েমা হক বিদিশা: সরকারের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ করকে গুরুত্ব দিতে হবে। আয়করকে কয়েকটি স্লাবে ভাগ করতে হবে। যার বার্ষিক আয় ১০ লাখ টাকা এবং যার বার্ষিক আয় ১ কোটি টাকা দুজন একই হারে কর দেবেন, সেটা যৌক্তিক নয়। বরং প্রগ্রেসিভ হারে ট্যাক্স বাড়াতে হবে। সরকার নতুন করে সম্পদ করের বিষয়টি চিন্তা করতে পারে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে আয়করকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ মূসকের ক্ষেত্রে বোঝাটা সব মানুষের ওপর পড়ে।
কালবেলা: বিগত সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। কীভাবে একে দক্ষ করা যেতে পারে?
ড. সায়েমা হক বিদিশা: এবার কথা বলতে চাই সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে। বছরে অন্তত দুবার প্রকল্পভিত্তিক মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন দরকার। মনিটরিং পাবলিকলি না করলেও সেমি-পাবলিক করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এক্ষেত্রে বিভিন্ন এক্সপার্ট, প্ল্যানিং কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয় সংযুক্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া প্রকল্পগুলোর কাজের মান কেমন, কত টাকা খরচ হয়েছে, কী ধরনের উপকরণ ব্যবহার করছে সেগুলো মনিটরিং করতে হবে। অনেকে প্রতিবছর বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের টাকা খরচ হচ্ছে না, তাহলে টাকা দিয়ে কী লাভ। খরচ কেন হচ্ছে না, সেটা খুঁজে বের করা দরকার। এর পেছনে কে দায়ী, তা খুঁজে বের করতে হবে। সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। সরকার ব্যয় ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে কাজগুলোতে গতি সঞ্চার হবে।
কালবেলা: সামাজিক অবকাঠামো, কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়গুলোয় কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন?
ড. সায়েমা হক বিদিশা: আমরা এবার যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দেখলাম, সেখানে শিক্ষিত তরুণদের অংশগ্রহণ সব থেকে বেশি ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তরুণদের অংশগ্রহণের সঙ্গে দেশের শ্রমবাজারের বড় সম্পর্ক রয়েছে। তরুণদের জন্য উপযোগী একটি শ্রমবাজার তৈরি করা সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। একই সঙ্গে তরুণদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদন সব জায়গাতেই নজর দিতে হবে। আজকের তরুণদের কনসার্নের জায়গাগুলো, তাদের আইডিওলজি এমনকি তাদের রাজনৈতিক চিন্তাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেশে একটি অন্যতম সমস্যা বেকারত্ব। তাই বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করতে হবে। কীভাবে কম বিনিয়োগে অধিক কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়, সেই লক্ষ্যে এগোতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যাতে কোনোভাবে বাধার সম্মুখীন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন, ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স আবশ্যকীয় করার কোনো অর্থ হয় না। এর ফলে ছোট ব্যবসায়ী এবং নারী উদ্যোক্তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের ক্ষেত্রেও ফ্লেক্সিবিলিটি দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
গ্রামাঞ্চলে অনেক শিক্ষিত তরুণ কৃষিকাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাদের কথা মাথায় রেখে কৃষিভিত্তিক শিল্প তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে জেলাভিত্তিক বা কয়েকটা জেলাকে নিয়ে এক একটা জোন তৈরি করা যেতে পারে। এবং এই জোনগুলো কেন্দ্র করে পরিকল্পনা করতে হবে এখানে কী ধরনের শিল্পায়ন করা যেতে পারে। প্রকল্পগুলো হতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তিতে।
দেশের টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল এডুকেশনে আরও উন্নতি করতে হবে। এখানে দুটি বড় সমস্যা রয়েছে: প্রথমত এখানে একটি সোশ্যাল স্টিগমা রয়েছে। এটা দূর করার জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল এডুকেশনের কারিকুলাম অনেক পুরোনো আমলের। এটাকে আধুনিকায়ন করতে হবে। দক্ষ প্রশিক্ষকের ব্যবস্থা করতে হবে।
যারা উচ্চশিক্ষা অর্থাৎ টারশিয়ারি এডুকেশনে গিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা হলো স্কিল মিস ম্যাচ। এ সমস্যা সমাধানের জন্য একাডেমি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়ালের এক ধরনের সমন্বয় দরকার। আমার মনে হয়, কিছু বেসিক স্কিলের ক্ষেত্রে আমাদের তরুণদের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতিগুলো পোষানোর লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আর এ দায়িত্ব পালন করতে হবে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকেই। উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করতে উৎসাহিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির কোলাবোরেশনে প্রাইভেট সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আজ তরুণরা উদ্যোক্তা হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং করছে, আরও অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। তাদের অনেক ধরনের দক্ষতা রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এর জন্য আলাদা তহবিল গঠন জরুরি। এটা হবে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ। ২০২৪ সালে এসে আমরা দেখছি, যেখানে গ্রামে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়ছে, সেখানে শহরে এটা কমছে। নারীদের জন্য নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
আমরা দেখেছি, আমাদের দেশের নারী কর্মীরা বিদেশে গিয়ে নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। আমরা যদি তাদের কিছুটা দক্ষ করে কেয়ার সেক্টরে নিযুক্ত করতে পারি, তাহলে অনেক ভালো ফল আসবে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানের জনসংখ্যার বেশিরভাগ বৃদ্ধ বয়সের। সেখানে কেয়ার ওয়ার্কারের চাহিদা অনেক। ফিলিপাইন যেভাবে বিভিন্ন দেশে নার্সদের পাঠায়, সেভাবে আমরা বিভিন্ন দেশে দক্ষ কেয়ার ওয়ার্কার পাঠাতে পারি।
নারীদের শ্রমবাজারে আসা এবং কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা রয়েছে। এই জায়গাগুলোয় কাজ করার জন্য বিভিন্ন পলিসি এবং নতুন স্ট্র্যাটেজি দরকার। সব থেকে জরুরি হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। দেশের স্বাস্থ্য খাতে হেলথ ইন্স্যুরেন্স চালু করতে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি এই বেসিক জায়গাগুলোয় কিছু কাজ করে যেতে পারে, তার সুফল পাবে সমগ্র দেশের মানুষ।