অজয় দাশগুপ্ত
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫৩ এএম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সদার্থক পরিবর্তন: শুভ প্রত্যাশা

সদার্থক পরিবর্তন: শুভ প্রত্যাশা

সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন নোয়াখালীর সেনবাগের রসুল করিম। তার চোখেমুখে এক ধরনের উচ্ছ্বাস আর আনন্দ লক্ষ করা গেল। গত সোমবার দুপুর সোয়া ১২টায় দেশের প্রধান বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে কথা হয় এই যাত্রীর সঙ্গে। সেই উচ্ছ্বাস ঠিক কী কারণে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিমানবন্দরে যে চিত্র দেখলাম, এরকম আগে চোখে পড়েনি। বিশেষ করে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ব্যবহার পুরাই চেঞ্জ। সবাই ‘স্যার’ বলে ডাকছেন।”

দুপুর সোয়া ২টায় নেপালের কাঠমান্ডু থেকে (বিজি-৩৭২) ঢাকায় পৌঁছায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট। ট্যুরিস্ট ভিসায় নেপালে যাওয়া আরাফাত হোসেন সেই ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন। তিনি ঢাকার নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা।

আরাফাতের কাছে বিমানবন্দরে সেবা পাওয়ার বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফ্লাইট থেকে নেমে দ্বিতীয় টার্মিনাল দিয়ে বের হতে সময় লেগেছে ৩৫ মিনিটের মতো। সাধারণত প্লেন থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন, লাগেজ সংগ্রহসহ অন্য ফরমালিটি মেনে বের হতে গড়ে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আজ প্রায় ৪০ মিনিটেই লাগেজসহ বিমানবন্দর থেকে বের হতে পেরেছি। আবার বিমানবন্দরের ভেতর থাকা ফ্রি টেলিফোন নাকি কাজ করছে শুনলাম। আগে করত না। সেটা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছি।’

আমার এক পরিচিতজনও ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশ। তার অভিজ্ঞতাও সুখকর। তিনি জানালেন, বিদেশি পাসপোর্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে অনাবাসী বা প্রবাসী বাংলাদেশি বলে তাকে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করে তাড়াতাড়ি যেতে দেওয়া হয়েছিল।

এই সদার্থক ভালো পরিবর্তনগুলো আমাদের মন ও চিন্তাকে আরাম দেয়। আমরা স্বস্তিবোধ করি। বলাবাহুল্য, সেজন্য ধন্যবাদ ও প্রশংসা তাদের প্রাপ্য। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমরা আনন্দিত হচ্ছি বটে কিন্তু চমকাচ্ছি কেন? আসলে কী চাই আমরা বা কী চাইতাম? দু-একটা ব্যক্তিগত ঘটনা বলি। সেবার আমি আর দীপা হ্যানয় থেকে ভিয়েনটাইন গিয়ে নামলাম। লাওসের রাজধানী। ছোট একফালি এয়ারপোর্ট। কিন্তু যাত্রীবোঝাই বিমানগুলো উঠছে আর নামছে। বোঝাই যাচ্ছে ব্যস্ত ওরা। সবকিছু শেষ কিন্তু আমাদের সবাইকে বেরোনোর পথে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখল। মনে মনে একটু বিরক্ত হচ্ছিলাম, কেন বাবা? এখন আমাদের হোটেলে গিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে কিছু খাবার সময়। কেন এই পথ আগলে রাখা? উত্তর মিলতে বিলম্ব হলো না। সুবেশী দুই তরুণী আর একজন যুবক এগিয়ে এলো হাতে ফুলের মালা। তারা আমাদের বরণ করে নিল সাদরে। স্বাগত জানাল পর্যটক হিসেবে বা যে কোনো কারণে তাদের দেশে আসার জন্য। কী দারুণ সেই অনুভূতি। একই আপ্যায়ন আমরা পেয়েছিলাম ফিজির নান্দি এয়ারপোর্টে।

ফিজিতে শুধু অভ্যর্থনা নয়, সেইসঙ্গে তারা সমস্বরে বলতে থাকে, ‘বুলা বুলা’। যার বিবিধ অর্থ। একসঙ্গে ‘স্বাগতম’ ‘ধন্যবাদ’ সবকিছু। আমেরিকার দ্বীপপুঞ্জ হাওয়াই। পৌঁছেছিলাম কাকডাকা ভোরে। দশাসই চেহারার এক নিগ্রো অফিসার। ভাবলাম কী জানি কী বলে? চমৎকার ব্যবহার কিন্তু বেশ ভারী গলায় আমাদের কাছে কাগজ দেখতে চাইল। যে কাগজটি ভিসাসমতুল্য। অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টে ভিসার দরকার না থাকলেও এ কাগজটির দরকার আছে। আমি সারারাত জার্নির পর ঘুম চোখে হাতড়াচ্ছিলাম সেটি কোথায় রেখেছি। ভদ্রলোক বলেছিলেন, দাঁড়াও তুমি ক্লান্ত তাই পাচ্ছো না। আমার নাম, জন্মতারিখ নিয়ে নিজেই কম্পিউটার থেকে তা বের করে এনেছিল। যদিও তখন আমি তা পেয়ে গিয়েছিলাম।

এটাই তো প্রত্যাশিত। এমনই তো হওয়া উচিত। আমাদের দেশে যেসব বাংলাদেশি বিদেশ থেকে যায়, তারা সবাই রেমিট্যান্সযোদ্ধা। আমি আর কোনো জাতিতে এমনটা দেখিনি। স্বল্প আয় থেকে ধনী সবাই টাকা পাঠায় দেশে। কারণ, আমাদের পরিবারের বন্ধন এমনই যে, আমরা তা না করে পারব না। এমন দেশের বিমানবন্দরে এলে সবাইকে বরণ করার মানসিকতা থাকাই উচিত ছিল। কিন্তু বিগত সরকার রেমিট্যান্সের বলে বলীয়ান হলেও, এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাত না। বা ঘামালেও তার কোনো কার্যকর ফল দেখা যেত না। আসলে বিষয়টা মন ও মানসিকতার। এই মন-মানসিকতার পরিবর্তন এক দিনে অসম্ভব। তাই ওপরের ঘটনাগুলো ঢাকা এয়ারপোর্টের সাময়িক চিত্র বলে ধরে নিতে পারি।

আমাদের সমাজ আর জীবনে সমতার বড় অভাব। আর একটা বিষয় হচ্ছে, বসগিরি। যে যেখানে সেখানেই হামবড়া ভাব আর চেয়ারের বড়াই। এবারের জনবিপ্লবে এটা তো পরিষ্কার যে, এসব ঠুনকো। ভেসে যেতে এক মিনিটের বেশি লাগে না। তাই এবার যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা যেন স্থায়ী হয়। সবচেয়ে বিরক্তিকর ছিল, হাঁ করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা। আর গা-ছাড়া ভাব। যারা কাউন্টারে বসেন, যারা মূলত দেশে ঢোকার পর প্রথম দেখা মানুষ; তাদের মুখে এক টুকরো হাসি থাকা শোভন। অমন গোমড়ামুখ করে ভয় দেখানো চেহারা করার কোনো কারণ নেই। তারপর হলো সময় নেওয়া। একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতে থাকে, হাতে যাত্রীর পাসপোর্টটি ধরা। কিছু জিজ্ঞেস করলে আপনি এর উত্তর পেতেন না। বরং আপনার সময় হতো আরও দীর্ঘ। এসব অপপ্রক্রিয়া বন্ধ হলে সেবার মান আপনাআপনি বেড়ে যাবে।

ভালো লাগছে এই ভেবে, আমাদের দেশের প্রবেশদ্বারগুলো পরিবর্তনের পথে। আজকে আপনি যেদিক থেকেই দেখেন না কেন, বাংলাদেশের জন্য এসব পরিবর্তন ছিল আবশ্যক। একটা গৎবাঁধা বা চালু নিয়মের খোপে পড়া পায়রার মতো বন্দিজীবনকে গণতন্ত্র বলে না। গণতন্ত্র বা উদারতার মানে হচ্ছে, আধুনিকতার সঙ্গে পরিবর্তনকে মেনে চলা। আশা করি ঢাকাসহ দেশের সব এয়ারপোর্টে এমন সুন্দর ব্যবস্থা থাকবে। চালু থাকবে মানুষকে সম্মান করার আইনকানুন।

আমরা পারি। চাইলেই পারি। কিন্তু সবসময় আমাদের ভালো স্রোতে অপস্রোত এসে মিশে যায়। দিকভ্রান্ত করে আমাদের পরিবর্তনকে ব্যাহত করে। এবার যে তা হবে না, তার কোনো গ্যারান্টি আছে? এরই মধ্যে কত ঘটনা আর কত গুজব। আমরা গুজবে কান না দিয়ে যা মঙ্গল, যা কল্যাণের, যাতে সবার ভালো হয়; তার কথা ভাবি। ভাবব সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার কথা। শুধু বিমানবন্দরে নয়, দেশের সব জায়গায় মানুষকে সম্মান আর মর্যাদা দেওয়ার চিন্তা ফলবতী হলেই দেশ ভালো থাকবে।

লেখক: সিডনিপ্রবাসী ছড়াকার ও প্রাবন্ধিক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কী আছে আজ আপনার ভাগ্যে, জানুন রাশিফলে

ফুটবলারদের ধর্মঘটের চিন্তা: সঠিক পদক্ষেপ কী?

দুই বছরের মধ্যে বিলীন হবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব : ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার

তাপপ্রবাহ কত দিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

চাঁদপুরে বিএনপির দুপক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

আজকের নামাজের সময়সূচি

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

সিলেটে মাছধরা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০

১০

চাঁদপুরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত

১১

সিলেটের সড়কে চিনির বস্তা ছিনতাই, আটক ৪

১২

চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত, বহিষ্কার ২ নেতা

১৩

৭ দিনের রিমান্ডে অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান

১৪

বগুড়ায় যুবদলের সাবেক নেতাকে কুপিয়ে জখম

১৫

শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার

১৬

শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার

১৭

ঢাবি-জাবির ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে জবিতে মশাল মিছিল

১৮

তোফাজ্জল হত্যায় ঢাবির ছয় শিক্ষার্থীর জবানবন্দি

১৯

পাহাড়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিবৃতি

২০
X