শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মুফতি আরিফ খান সাদ
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ এএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা দেয় ইসলাম

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা দেয় ইসলাম

পৃথিবীর সব মানুষকে ইসলাম একটি অভিন্ন সূত্রে গেঁথে দেয়। পৃথিবীর সব মানুষ এক আদম-হাওয়া দম্পতির সন্তান—এই মানবিক পরিচয়ে পৃথিবীর সব মানুষকে একীভূত করে ইসলাম। পৃথিবীর প্রথম দম্পতির মাধ্যমেই বিস্তার লাভ করেছে মানবজাতি। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে মানববংশ গড়ে তুলেছে হাজারো সমাজ। প্রতিটি সমাজের অতীত ও সূচনা একবিন্দুতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। তাই পৃথিবীতে শান্তি ও স্থিতি গড়ে তুলতে হলে এ মানবিক ও সামাজিক সূত্রে সবাইকে একীভূত হতে হবে। সমাজে মানুষ তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও গ্রাম-মহল্লার লোকজনের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে। তাই সমাজজীবনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে হলে সমাজের সব ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়। সমাজবদ্ধ হয়েই মানুষকে বসবাস করতে হয়। সমাজে একে অন্যের সহযোগী হয়ে জীবনের পথ চলতে হয়। তাই সামাজিক জীবনে পারস্পরিক বন্ধন ও সাহায্য-সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বজগতের সমগ্র সৃষ্টি একটি অভিন্ন পরিবারের মতো। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। অতএব আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় সেই ব্যক্তি যে তার সৃষ্টির প্রতি উত্তম আচরণ করে।’ (শুআবুল ইমান: ৭০৪৮)। যেহেতু গোটা সৃষ্টিকুল একটি পরিবারের মতো, তাই সৃষ্টি জীবের সঙ্গে ব্যবহার হবে পরিবারের সদস্যদের ও আত্মীয়স্বজনের মতো। আবার সব মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। কারণ সব মানুষের পিতা একজন, স্রষ্টাও একজন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।’ (সুরা নিসা: ১)। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হে মানুষ! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু একজন। তোমাদের বাবা একজন। তোমরা সবাই আদম-সন্তান। সাবধান! আরবের ওপর কোনো অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং কোনো অনারবের ওপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কোনো কালোর ওপর লাল তথা সুদর্শন ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব নেই, শ্রেষ্ঠত্ব নেই সুদর্শনের ওপর কোনো কালোর। শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা যাবে কেবল তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির মাধ্যমে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪৮৯)।

মানুষের সমাজকে আরও উপমা দেওয়া হয়েছে একটি অভিন্ন দেয়ালের সঙ্গে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য একটি দেয়ালের ইটগুলোর মতো সম্পূরক স্বরূপ, তারা একে অন্যের দ্বারা স্থিতি অর্জন করে। এই বলে তিনি নিজের দুই হাতের আঙুলগুলো পরস্পরের মধ্যে ঢোকালেন।’ (বোখারি: ২৬৪৬)। এ হাদিসে রাসুল (সা.) মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। অন্য হাদিসে আছে, মুসলমান জাতি একটি দেহের মতো। চোখ অসুস্থ হলে গোটা দেহ অসুস্থ হয়। আবার মাথা অসুস্থ হলেও গোটা দেহে এর প্রতিক্রিয়া হয়। মুমিনরা যদি প্রকৃতই পরস্পরের সহমর্মী হয়, তাহলে তাদের একের ব্যথায় অন্যরা ব্যথিত হবে, একের সুখে অন্যরা আনন্দিত হবে। ইসলাম যেহেতু গোটা মানবতাকে একই পরিবারের সদস্য বলে বিবেচনা করে, সুতরাং তাদের মধ্যকার সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নানাভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামে বিভিন্ন ইবাদত, বন্দেগির নিয়মপদ্ধতি এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যে, তার মাধ্যমে যেন মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে মানবসমাজে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি ও উন্নয়ন সম্ভব হয়।

ইসলাম যেমনিভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নফল রোজা, জিকির, তাসবিহ-তাহলিলের মতো ইবাদতে উৎসাহ দিয়েছে, তেমনি সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করাকেও ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, তোমরা পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরাবে। বরং সৎকাজ হলো, তোমরা ইমান আনবে আল্লাহর ওপর, পরকালের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সব কিতাব ও নবী-রাসুলগণের ওপর। পাশাপাশি তোমরা সম্পদ ব্যয় করবে তারই মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং যারা কৃতপ্রতিজ্ঞা পালনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণকারী; তারাই সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই আল্লাহভীরু।’ (সুরা বাকারা: ১৭৭)। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা মুত্তাকি তথা আল্লাহভীরুদের গুণাবলিতে একদিকে যেমন ইমান ও নামাজের মতো মৌলিক ইবাদতের কথা উল্লেখ করেছেন, তেমনি অন্যদিকে তিনি জাকাত এবং সমাজের অসহায় নিঃস্বদের সাহায্য-সহায়তার মতো সামাজিক কার্যক্রমের কথাও উল্লেখ করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালনও ইবাদত হিসেবে গণ্য।

সমাজ জীবনের ভারসাম্য, শৃঙ্খলা, উন্নতি ও অগ্রসরতা অব্যাহত রাখতে পারস্পরিক সৌজন্যতা, মূল্যবোধ ও শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো জাতিকে সুসভ্য ও সফল রূপে প্রতিষ্ঠিত হতে এর বিকল্প নেই। আমাদের বিদ্যমান অশান্ত সমাজে শান্তি ও স্থিতি আনতে হলে সবাইকে শিষ্টাচারসম্পন্ন হতে হবে। কারণ শিষ্টাচারসম্পন্ন মানুষ কোনো তুচ্ছ বিষয়ে নিজেকে জড়ায় না, কারও সঙ্গে শত্রুতা করে না বা কারও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করে না। শিষ্টাচার হচ্ছে ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণ। একজন মানুষ ভালো না মন্দ তা বিবেচিত হয় মূলত সে ব্যক্তির আচরণ দেখেই। এ গুণ মানুষকে সংযমী ও বিনয়ী করে তোলে। শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি তার ভদ্র ও সংযত ব্যবহার দিয়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। এমন মানুষকে সবাই শ্রদ্ধা করে; হোক সে ব্যক্তি অসুন্দর কিংবা গরিব। ইসলামেও আদব শিষ্টাচার ও সৌজন্যতাকে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিষ্টাচারের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়তের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ।’ (আবু দাউদ: ৪৭৭৬)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘তুমি আদব ও শিষ্টাচার অন্বেষণ করো। কারণ আদব হলো বুদ্ধির পরিপূরক, ব্যক্তিত্বের প্রমাণ, নিঃসঙ্গতায় ঘনিষ্ঠ সহচর, প্রবাসজীবনের সঙ্গী এবং অভাবের সময়ে সম্পদ।’ (গিজাউল আলবাব: ১/৩৬-৩৭)। বিশিষ্ট ফকিহ আহনাফ আল-কায়েস বলেন, ‘আদব বা শিষ্টাচার বিবেকের জ্যোতি, যেমন আগুন দৃষ্টিশক্তির জ্যোতি।’ (ফাতাওয়া আল মিসরিয়া: ১০/৩৫৯)। রুওয়াইম ইবনে আহমাদ আল-বাগদাদি তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার আমলকে লবণ ভাববে, আর তোমার আদবকে মনে করবে ময়দা।’ (ড. আলী আব্দুল হামীদ, আত-তাহযিলুদ দিরাসি বিল কাইয়েমিল ইসলামিয়াহ: পৃ. ১৫৪; আল-কুরাফি, আল-ফুরূক: ৩/৯৬)। অর্থাৎ তুমি আমলের চেয়ে আদব ও শিষ্টাচারকে এত অধিক গুরুত্ব দেবে, লবণ ও ময়দার স্বাভাবিক মিশ্রণে উভয়ের অনুপাত যেভাবে কমবেশি হয়।

আল্লাহ পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মান দিয়েছেন। সম্মানিত করেই সৃষ্টি করেছেন। সব মানুষই সম্মানিত। মানবজাতির এই সম্মান ও মর্যাদা সর্বজনীন। প্রতিটি মানুষ সে বিশ্বাসী হোক বা অবিশ্বাসী, মৌলিক সম্মান ও অধিকারের ক্ষেত্রে সমান। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকেও ‘সাধারণ সম্মান সব মানুষের জন্য’ প্রমাণিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছি স্থলে ও জলে, তাদের দিয়েছি উত্তম জীবিকা এবং তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার সৃষ্টিজগতের অনেকের ওপর।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭০)। রাসুলুল্লাহ (সা.)ও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষকে সম্মান দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশ দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তাকে বলা হলো, লাশটি একজন ইহুদির। রাসুল (সা.) বললেন, সে কি মানুষ নয়?’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৬১)। মানুষের সম্মানসংক্রান্ত আয়াতে আল্লাহ যেমন বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যে পার্থক্য করেননি, তেমন মৌলিক অধিকারসংক্রান্ত আয়াতেও তা করা হয়নি। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন তাকে তোমরা আইনানুগ কারণ ছাড়া হত্যা কোরো না।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৫১)। এসব আয়াতের ভিত্তিতে ইসলামী আইনবেত্তারা বলেন, ‘মানুষ সত্তাগতভাবে সম্মানী। সুতরাং তাকে অপমান করা, তার প্রতি অবিচার করা, তার অধিকার নষ্ট করা, সম্মানহানি করা অন্য কোনো মানুষের জন্য বৈধ নয়। সবার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করা আবশ্যক। মোটকথা, পৃথিবীর সব মানুষকেই মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে, অধিকার আদায় ও রক্ষা করতে হবে, মানবিক ও সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে হবে। সুন্দর সামাজিক সম্পর্ক প্রকৃত মুমিন ও বিশ্বাসী মানুষের বৈশিষ্ট্য।

সমাজে থাকে নানা ধর্ম-কর্মের মানুষ। মানুষ হিসেবে যে কোনো ব্যক্তি আমার থেকে ভালো কাজের প্রতিদান ও প্রশংসা পাওয়ার অধিকার রাখেন। সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকেও পেতে পারেন প্রতিদান-প্রশংসা-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সব সুযোগ-সুবিধা। তবে সেটি পরকালে নয়, পৃথিবীতে। অন্যের প্রতি সহানুভূতি, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, মা-বাবার সেবা, সৃষ্টির সেবা, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা—এসব কাজের প্রতিদান পাবেন একজন অমুসলিমও। তাদের প্রতিদান হবে দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তি লাভের মাধ্যমে কিংবা পরকালে শাস্তি হালকা হওয়ার মাধ্যমে। তবে পরকালের চিরস্থায়ী নাজাত ও মুক্তির জন্য ইমান পূর্বশর্ত। (ফয়জুল বারি: ১/১৩৬)। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অবিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি যদি পৃথিবীতে কোনো ভালো কাজ করে, তবে এর প্রতিদান হিসেবে পৃথিবীর জীবনে তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের ভালো কাজ আল্লাহতায়ালা আখেরাতের জন্য জমা করে রেখে দেন এবং আনুগত্যের প্রতিফল হিসেবে আল্লাহ তাদের পৃথিবীতেও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।’ (মুসলিম: ৬৯৮৩)

তাই আমার প্রতিবেশী কিংবা যে কোনো অমুসলিম যদি ভালো কাজ করে থাকেন, সেটা তাদের করতে দেওয়া উচিত। সম্ভব হলে সহযোগিতা করা এবং তাদের প্রতি সুধারণা ও কল্যাণচিন্তা রাখা আমার কর্তব্য। পাশাপাশি তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ, উত্তম ও ভালো ব্যবহারও করব আমি। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তারা যদি এমন কাউকে (প্রভুত্বে) আমার সমকক্ষ সাব্যস্ত করার জন্য তোমাকে চাপ দেয়, যে সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের কথা মানবে না। তবে পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদাচরণ ও উত্তম ব্যবহার করো।’ (সুরা লোকমান: ১৫)। হাদিসে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, হজরত সাহল ইবনে হুনাইফ ও কায়েস ইবনে সাদ (রা.) একদিন বসা ছিলেন। তারা তখন কাদিসিয়ায় অবস্থান করছিলেন। পাশ দিয়ে একটি লাশ নেওয়া হচ্ছিল। তা দেখে তারা দুজনই দাঁড়ালেন। উপস্থিত লোকেরা তাদের জানালেন, এটা একজন অমুসলিমের লাশ। তারা তখন বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশ দিয়েও একবার এক লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি যখন তা দেখে দাঁড়ালেন, উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম তখন বললেন, এ তো ইহুদির লাশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের বললেন, ‘সে মানুষ ছিল তো?’ (বোখারি: ১৩১২)। অর্থাৎ, মৃত্যুর মতো একটি মানবিক মুহূর্তে সে মুসলিম কি অমুসলিম, সেটা কেন দেখতে যাব? সে তো একজন মানুষ, সে কেন আমার সহমর্মিতা পাবে না?

আমার প্রতিবেশী মুসলিম হোক বা অমুসলিম; তার প্রতি সদয় হওয়া, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি করা, বিপদে পাশে দাঁড়ানো, ঘরে ভালো খাবার রান্না হলে তাদের ঘরে পাঠানো আমার মানবিক ও ধার্মিক দায়িত্বেরই অংশ। আল্লাহর রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মুসলিম-অমুসলিম সব ধরনের প্রতিবেশীর সঙ্গেই সদ্ভাব বজায় রেখে চলতেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর ঘরে একদিন বকরি জবাই করা হলো। খাবার রান্না হলে তিনি তার খাদেমকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে কি এ খাবার দিয়েছ?’ এরপর তিনি বললেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিবেশীর বিষয়ে জিবরাইল (আ.) আমাকে এত উপদেশ দিচ্ছিলেন, আমি মনে করছিলাম, তিনি হয়তো তাদের তার ওয়ারিশই বানিয়ে দেবেন!’ (তিরমিজি: ১৯৪৩; আবু দাউদ: ৫১৫২)।

মানুষ হিসেবে এবং মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য, সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা। এতে সুন্দর হবে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র।

লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাঁজা-জাল নোটসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

১০

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

১১

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১২

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১৩

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১৪

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৫

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৬

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

১৭

‘এক ফ্যাসিস্টকে হটিয়ে আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না’

১৮

জুলাই বিপ্লবে আহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বাবুকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড

১৯

মাদকাসক্ত ছেলেকে কারাগারে দিলেন মা

২০
X