ড. মইনুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ এএম
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

‘বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেল’অনুসরণে বাধা কোথায়

‘বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেল’অনুসরণে বাধা কোথায়

গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে উৎখাতকারী ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে অভিহিত করে। সব ধরনের বৈষম্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আয়বৈষম্য। অতএব, তারা ‘আয়বৈষম্য-নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেল’ বাস্তবায়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে—সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশের চারটি রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র ফেরত এসেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২০১০ সালের ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে। ২০১১ সালে দেশের সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সেটাকে সংবিধানে আবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের যে প্রাথমিক ফল গত বছর ১৩ এপ্রিল পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের জনগণের আয়বৈষম্য পরিমাপক গিনি সহগের মান নির্ধারিত হয়েছে ০.৪৯৯। অতএব, ২০২৪ সালে এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বাংলাদেশ একটি ‘উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশে’ পরিণত হয়েছে।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণকারী একটি দেশ উচ্চ-আয়বৈষম্যের দেশে পরিণত হওয়ার মানে হলো দেশটি হাইজ্যাক হয়ে শ্রমজীবী জনগণের মালিকানার দেশ থেকে সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের করায়ত্ত ‘শোষকের দেশে’ পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘মুক্তির সংগ্রামের’ মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে শ্রমজীবী জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল নির্ধারিত ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ ক্যাটাগরি থেকে ‘উন্নয়নশীল দেশের’ ক্যাটাগরিতে উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং ওই প্রক্রিয়ার সফল পরিসমাপ্তির পর ২০২৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের ‘নিম্ন আয়ের দেশ’ ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশ ‘নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ’ ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল। বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। ২০২০-২২ পর্বে করোনাভাইরাস মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে গেলেও, তা ৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫.৮ শতাংশ ছিল। ২০২০ সালে আইএমএফ ঘোষণা করেছে যে, বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি হয়ে গেছে। অতএব এটা অনস্বীকার্য, জিডিপি ও জিএনআই প্রবৃদ্ধিসহ নানাবিধ অর্থনৈতিক সূচক গত দুই দশক ধরে জানান দিয়ে চলেছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনুন্নয়ন ও পরনির্ভরতার ফাঁদ থেকে মুক্ত হয়ে টেকসই উন্নয়নের পথে যাত্রা করেছে।

কিন্তু মাথাপিছু জিডিপি যেহেতু একটি গড় সূচক, তাই মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যদি দেশে আয়বৈষম্যও বাড়তে থাকে, তাহলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর কাছে পুঞ্জীভূত হওয়ার প্রবণতা ক্রমেই শক্তিশালী হতে থাকে, যার ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। আয়বৈষম্য বৃদ্ধির মহাবিপদ এ দেশের ১৯৭৫-পরবর্তী শাসকমহল তাদের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক দর্শন ও উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে ডেকে এনেছে। দুঃখজনকভাবে আশির দশক থেকেই এ দেশে আয় ও সম্পদ বৈষম্য ক্রমেই বাড়তে বাড়তে এখন বাংলাদেশ একটি ‘উচ্চ-আয়বৈষম্যের দেশে’ পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিতে আয়বৈষম্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পরিমাপ করার জন্য নানা পরিমাপক ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে লরেঞ্জ কার্ভ এবং গিনি সহগ অন্যতম। কোনো অর্থনীতির গিনি সহগ যখন দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ০.৫ এর কাছাকাছি পৌঁছে যায় বা ০.৫ অতিক্রম করে, তখন নীতিনির্ধারকদের বোঝার কথা যে আয়বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে মোতাবেক বাংলাদেশের গিনি সহগ নির্ধারিত হয়েছে ০.৪৯৯, যা ১৯৭৩ সালে ছিল মাত্র ০.৩৬। আরেকটি পরিমাপকের গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে ২০১০ ও ২০১৬ সালের মধ্যে আয়বৈষম্য বিপজ্জনকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপক্ষে এবং ৫-১০ শতাংশ ধনাঢ্য গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি ফুটে উঠেছে—২০১০ সালে দরিদ্রতম ৫ শতাংশ জনসংখ্যার মোট আয় ছিল মোট জিডিপির ০.৭৮ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে মাত্র ০.২৩ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। ২০১০ সালে দরিদ্রতম ১০ শতাংশ জনসংখ্যার মোট আয় ছিল মোট জিডিপির ২ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা মাত্র ১.০১ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। সমস্যার আরেক পিঠে দেখা যাচ্ছে, দেশের ধনাঢ্য ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দখলে ২০১০ সালে ছিল মোট জিডিপির ৩৫.৮৫ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে বেড়ে ৩৮.১৬ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। আরও দুঃখজনক হলো, জনগণের সবচেয়ে ধনাঢ্য ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দখলে ২০১৬ সালে চলে গিয়েছিল মোট জিডিপির ২৭.৮৯ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল ২৪.৬১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’-এর প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮ মোতাবেক, ২০১২ থেকে ২০১৭—এই পাঁচ বছরে অতি ধনী বা ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলে সারা বিশ্বে এক নম্বর স্থানটি দখল করেছিল বাংলাদেশ। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩ শতাংশ হারে, বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ধনকুবেরের সংখ্যা ছিল ২৫৫ জন। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে ৩০ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ডলারের (প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা) বেশি নিট-সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিদের ‘আল্ট্রা-হাই নেট-ওয়ার্থ’ (ইউএইচএনডব্লিউ) ইন্ডিভিজুয়াল হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হলেও ১৯৭৫-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন মার্কিনপন্থি খোন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের সরকার পাকিস্তানি স্টাইলে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম (স্বজনতোষী পুঁজিবাদ) প্রতিষ্ঠাকে এ রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ফিরিয়ে এনেছিল। আশির দশকে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ‘কাঠামোগত বিন্যাস কর্মসূচি’ ‘নিউ লিবারেল’ নীতিমালা সংস্কারের ধারাবাহিকতা জোরদার করার জন্যই পরিচালিত হয়েছিল স্বজনতোষী পুঁজিবাদ। আমদানি উদারীকরণ, বিরাষ্ট্রীয়করণ, ব্যক্তি খাতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস ও অর্থনীতিতে সরকারি ভূমিকার সংকোচন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ তাদের প্রেসক্রিপশনগুলোর মূল ফোকাস ছিল। ১৯৯১ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সরকার পালাক্রমে এ দেশে গত ৩৩ বছরের মধ্যে ৩১ বছর সরকারে আসীন থাকলেও দেশে আয়বৈষম্য নিরসনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে নামকাওয়াস্তে সমাজতন্ত্রকে সংবিধানে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হলেও গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে নীরবতা পালনকেই নিরাপদ মনে করত।

সাধারণ জনগণের কাছে বোধগম্য যেসব বিষয় আয়বৈষম্য বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছানোর জানান দিচ্ছে সেগুলো হলো—এক. দেশে প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে ১১ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যেখানে মাতা-পিতার বিত্তের নিক্তিতে সন্তানের স্কুলের এবং শিক্ষার মানে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে; দুই. দেশে চার ধরনের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে; তিন. দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি বাজারীকরণ হয়ে গেছে; চার. ব্যাংকের ঋণ সমাজের একটা ক্ষুদ্র অংশের কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে এবং ঋণখেলাপি বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে; পাঁচ. দেশের জায়গাজমি, অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট, ফ্ল্যাট, মানে রিয়াল এস্টেটের দাম প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে; ছয়. বিদেশে পুঁজি পাচার মারাত্মকভাবে বাড়ছে; সাত. ঢাকা নগরীতে জনসংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছে গেছে, যেখানে আবার ৪০ শতাংশ মানুষ বস্তিবাসী; নয়. দেশে গাড়ি, বিশেষত বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে; দশ. বিদেশে বাড়িঘর, ব্যবসাপাতি কেনার হিড়িক পড়েছে; এগারো. ধনাঢ্য পরিবারগুলোর বিদেশ ভ্রমণ বাড়ছে; বারো. উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রবাহ বাড়ছে; তেরো. উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য ঘন ঘন বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে; চৌদ্দ. প্রাইভেট হাসপাতাল ও বিলাসবহুল ক্লিনিক দ্রুত বাড়ছে; পনেরো. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার হিড়িক পড়েছে; ষোলো. দেশে ইংলিশ মিডিয়াম কিন্ডারগার্টেন, ক্যাডেট স্কুল, পাবলিক স্কুল এবং ও-লেভেল/এ-লেভেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মচ্ছব চলছে। অন্যদিকে দরিদ্র জনগণের সন্তানদের জন্য মাদ্রাসা গড়ে তোলার হিড়িক চলছে; সতেরো. প্রধানত প্রাইভেট কারের কারণে সৃষ্ট ঢাকা ও চট্টগ্রামের ট্রাফিক জ্যাম নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত করছে; আঠারো. দেশে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি বেড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে পদে পদে। দুর্নীতিলব্ধ অর্থের সিংহভাগ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে বাংলাদেশের দারিদ্র্য সীমার নিচের জনসংখ্যার হার ২৪.৫ শতাংশ পাওয়া গিয়েছিল, ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে তা ১৮.৭ শতাংশে নেমে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। দারিদ্র্য সীমার নিচের জনসংখ্যার এ ক্রমহ্রাসমান হার প্রশংসনীয় হলেও আয়বৈষম্য বৃদ্ধিকে অশনিসংকেত বিবেচনা করতেই হবে। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি স্তিমিত হয়ে গেছে। এর মানে, আয়বৈষম্য না বাড়লে হয়তো দারিদ্র্য নিরসন আরও জোরদার হতো! কিন্তু হাসিনার সরকার শুধু মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়েই মাতামাতি করেছে।

আয়বৈষম্য বাড়তে থাকলে শুধু মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে প্রান্তিক অবস্থানের শ্রমজীবী জনগণের দারিদ্র্য নিরসন করা যায় না। উচ্চ ও ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্য এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে, তারা জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুফল যতখানি পাওয়ার কথা, অতখানি পাচ্ছে না। সুতরাং আয়বৈষম্যের ব্যাপারে হাসিনা সরকারের দুঃখজনক অমনোযোগ আমার কাছে বরাবরই অগ্রহণযোগ্য ছিল। বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন ‘বৈষম্য নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেল’। এ মডেলের মূল কথা হলো, আয়বৈষম্য নিরসনকারী অবস্থান গ্রহণ করলে কোনো দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে যে ধারণা সাইমন কুজনেৎস অর্থনৈতিক উন্নয়ন তত্ত্বে চালু করেছিলেন, সেটা একটা ‘ভুয়া ধারণা’। পুঁজিবাদের পক্ষে তার অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে কুজনেৎস ওই তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন, যেখানে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন দেশ ও সেগুলোর উন্নয়ন-পথের সময়কালকে সুপরিকল্পিতভাবে বাছাই করেছিলেন তিনি। ওই তত্ত্ব মানবজাতির বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করেছে। গত ছয় দশকের অনেক আলোড়ন সৃষ্টিকারী গবেষণা ওই তত্ত্বকে ভুল প্রমাণিত করেছে, যার মধ্যে বাঙালি নোবেল পুরস্কারজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জির গবেষণাপ্রাপ্ত ফলও অন্যতম।

এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, যেসব দেশ আয়বৈষম্য বাড়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বৈষম্য নিরসনে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে জনগণের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার প্রদান করে বৈষম্যবিরোধী অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে, সেসব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমার পরিবর্তে বেড়ে যাচ্ছে। চীন, ভিয়েতনাম, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এই ‘বৈষম্য-নিরসনকারী প্রবৃদ্ধি মডেলের’ সফল কয়েকটি উদাহরণ।

লেখক: একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘সব আসনে এককভাবে প্রার্থী দেবে গণঅধিকার পরিষদ’

ঢাবির আওয়ামীপন্থি সিন্ডিকেট সদস্যদের পদত্যাগ দাবি

গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন ড. ইউনূস

মিরপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ

প্রকাশ পেল ইকরাম কবীরের ‘খুদে গল্পের বই’

সৈনিক থেকে শিল্পপতি হাবিবুর

‘নবীর দেখানো পথে রাষ্ট্র উপহার দিতে চায় জামায়াত’

টাঙ্গাইলে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

১৬ বছর পর সাতক্ষীরায় জামায়াতের রুকন সম্মেলন

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

১০

ঢাবিতে হত্যাকাণ্ডে ৮ শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

১১

দলের নির্দেশনা না মানলে কঠোর পরিণতির হুঁশিয়ারি নয়নের

১২

মোংলায় নিলামে উঠছে ৪০ গাড়ি

১৩

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না সিলেটের যেসব এলাকায়

১৪

একদিনে ৬ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করল চীন

১৫

বগুড়া জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল

১৬

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়ন দাবিতে মোংলায় র‌্যালি

১৭

হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল

১৮

‘হাসিনা লুকিয়ে থেকে তার প্রেতাত্মাদের উসকে দিচ্ছে’

১৯

পিটিয়ে মানুষ হত্যা ও ঢাবিতে রাজনীতি বন্ধে ইউট্যাবের উদ্বেগ

২০
X