অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরই মধ্যে ৪০ দিন অতিবাহিত করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগের তিন দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। শেখ হাসিনা দেশকে একটা পুলিশের রাষ্ট্রে পরিণত করায় তার পতনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের পুলিশ বাহিনীও আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে সারা দেশে প্রশাসনের সব স্তরে বিরাজ করে শূন্যতা। দেশ ও জাতির এমন একটি ঘোরতর সংকটময় মুহূর্তে ড. ইউনূস দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার গত ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। তার পরিবার এবং দলের লোকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ভোটের সংস্কৃতি। শেখ হাসিনার শাসনামলে মানুষের বাক ও চিন্তাস্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। তার দলের লোকেরা বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। নিত্যপণ্যের দাম এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। উন্নয়নের নামে হাসিনা সরকার দেশের সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে পাহাড়সমান ঋণের বোঝা। এসব কিছু নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে। বর্তমান সরকারে সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে দেশের সব মহলে এখন চলছে জোর আলোচনা। তবে ‘অভ্যুত্থানের চল্লিশ দিন: মানুষ কী ভাবছে’ শীর্ষক এক জরিপে পুরুষ এবং শহরের মানুষের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আশাবাদ তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৭১ শতাংশ মানুষ। আর ৮১ শতাংশ মানুষ চান সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে যত দিন প্রয়োজন, তত দিন ক্ষমতায় থাকুক অন্তর্বর্তী সরকার। ‘পালস সার্ভে ২০২৪: জনগণের মতামত, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক জনমত জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২ হাজার ৩৬৩ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয় টেলিফোনে। এতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ, বর্তমান সময়ের সমস্যা, সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের মতামত নেওয়া হয়। গত ২২ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে দুটি প্রশ্ন ছিল। একটি হলো, এ সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোন বক্তব্যটির সঙ্গে একমত পোষণ করেন? এখানে দুটি বিকল্প ছিল। এক. যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা ছাড়া। দুই. অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে যত দিন প্রয়োজন ক্ষমতায় থাকা। ফলাফলে বলা হয়, ৮১ ভাগ মানুষ চান যে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার সম্পন্ন করার জন্য যত দিন প্রয়োজন, তত দিন ক্ষমতায় থাকুক। আর ১৩ ভাগ মানুষ মনে করেন, অতিদ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরকারের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত। জরিপে সরকারের মেয়াদ নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন ছিল—অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হওয়া দরকার? এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৮ শতাংশ বলেছেন, সরকারের মেয়াদ তিন বছর বা তার বেশি হওয়া দরকার। দুই বছর মেয়াদ হওয়া দরকার বলে মত দেন ৯ শতাংশ। এক বছরের পক্ষে মত দেন ১১ শতাংশ।
দেশের সাধারণ মানুষের মতো আমরাও মনে করি, বিগত সরকার দেশটা বহুমাত্রিক সংকটের মধ্যে রেখে গেছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে যেমন সব স্তরের মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন, তেমনি সময়ও প্রয়োজন। রাতারাতি এসব সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।