অবিস্মরণীয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের চল্লিশ দিন পূর্ণ হয়েছে গতকাল রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর)। আর প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এক মাস পূর্ণ করেছে গত ৮ সেপ্টেম্বর। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, রাজধানীর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে পুলিশকে পুরোপুরি সক্রিয় করতে পেরেছে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও এক কথায় এর জবাব হচ্ছে, না। কাজের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের মধ্যে এখনো আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনোবল ফিরে পাননি। রাজধানীর অনেক ট্রাফিক সিগন্যালে পুলিশ দেখা গেলেও, কোনো কোনো সিগন্যালে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ে না। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আগের মতো যথেষ্ট তৎপর নয়। গভীর রাতে রাজধানীর সড়কে বা বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের টহলও তেমন দেখা যায় না।
এ পরিস্থিতি তৈরি হলো কেন? জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কথা মনে করলেই বোঝা যাবে, পুলিশ কেন এত দুর্বল অবস্থানে চলে গেছে। পুলিশের দ্বারা সংঘটিত কিছু নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে—‘গুলি করলে মরে একটা, একটাই যায়, বাকিডি যায় না। এইটাই স্যার সবচেয়ে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের বিষয়।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ফুটেজে দেখা যায়, পতিত (এই লেখা পর্যন্ত পলাতক অথবা আত্মগোপনে থাকা) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মোবাইলে ছবি দেখিয়ে কথা বলছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। পাশে দাঁড়ানো বর্তমানে গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশের সাবেক আইজি (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। কতটা নিষ্ঠুর পর্যায়ে গেলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এভাবে কথা বলতে পারেন। আর খুব মনোযোগ দিয়ে তা শুনছেন এবং ফুটেজ দেখছেন পতিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিলেন। পুলিশ অন্তত দুবার গুলি চালালে সাঈদ তার বুক চেপে ধরেন। চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য অবসানের দাবিতে আন্দোলনরত আবু সাঈদ হয়তো ভাবতেই পারেননি, পুলিশ সরাসরি তার বুকে গুলি করবে।
আমরা নিশ্চয়ই এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাইনি সেই ছবিটির কথা, পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানের ওপর থেকে এক তরুণকে নিচে ফেলা হলো। তিনি সাঁজোয়া যানের কাছে সড়কে পড়ে থাকেন। এরপর পুলিশের এক সদস্য সাঁজোয়া যান থেকে নামেন। এক হাত ধরে তাকে টেনে আরেকটু দূরে সড়কে ফেলে রাখেন। নিষ্ঠুরতার এখানেই শেষ হয়, পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে তাকে টেনে রোড ডিভাইডারের ওপর দিয়ে ঠেলে অন্যপাশে ফেলে দেন। নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া তরুণ সাইখ আশহাবুল ইয়ামিন রাজধানীর মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইসিটি) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। একেবারে কাছ থেকে টার্গেট করে ইয়ামিনকে রাবার বুলেটে মারা হয়েছে। তার বুকের বাঁ-পাশে এক জায়গায় অনেক বুলেটের আঘাত ছিল।
আমাদের মনে আছে, গুলিবদ্ধ একজনকে পুলিশ রিকশার পাদানিতে তুলে দেয়, তখনো তিনি রিকশার রড ধরেছিলেন। রাজধানী বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র গোলাম নাফিজ গুলি খেয়ে এভাবেই রিকশার পাদানিতে পড়েছিলেন। আরও একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করতে হয়, যাত্রাবাড়ীতে এক যুবক আহত অন্য যুবককে নিরাপদে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিছুক্ষণ পর হেলমেট পরা সাদা পোশাকের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে তাদের দিকে গুলি চালাতে দেখা যায়। মারাত্মকভাবে আহত যুবককে পেছনে ফেলে যুবকটি পালাতে বাধ্য হন। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে। ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলায় পদচারী সেতুর কাছে মারা যান নারায়ণগঞ্জ আদমজীনগর এমডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমাম হাসান। ২৭ বছর ধরে পুলিশে কর্মরত জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক ময়নাল হোসেনের ছেলে ইমাম হাসান। ছেলের মৃত্যুর পর মা পারভীন আক্তার বিলাপ করে বলেছিলেন, ‘পুলিশের গুলিতে পুলিশের ছেলে মরল, আমার স্বামী এই প্রতিদান পাইল? আমার ছেলেরে কতগুলি গুলি দিছে, ছেলে তো চোর সন্ত্রাসী ছিল না, যে মারল, তার একটুও মায়া লাগে নাই? মারতে কয়টা গুলি লাগে?’
গুলি করে হত্যা করে লাশের স্তূপ তৈরি করা হয়েছিল। আশুলিয়ায় লাশের এই স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। বিদেশে পালাতে গিয়ে বিমানবন্দরে তিনি আটক হন। এত এত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ লিখে শেষ করা যাবে না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা আট শতাধিক। নিহতদের মধ্যে আছে ৬৬ শিশু-কিশোর। শিশুদের কেউ কেউ বাসায় থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ২০০ জনের বেশি। চোখ নষ্ট হয়েছে ৪০০ শতাধিকের। অনেকে সারাজীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। আহত অনেকের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখা এক তরুণ পা হারিয়েছেন। আর কখনো ব্যাট হাতে তার মাঠে নামা হবে না। ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ দমনে ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই নির্বিচারে গুলিবর্ষণের অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও বিক্ষোভের পর সংঘাত দমনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ১৬ আগস্ট জেনেভায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির লাঠি, ইট বা প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহারের বিপরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাবার বুলেট, পিলেট শটগান, হ্যান্ডগান, রাইফেলসহ প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার করেছে। জাতিসংঘ বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার সহিংসতার মাত্রাকে তীব্রতর করেছে।
দেশে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার এই আমলে ছাত্র-জনতার ওপর যে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে চলতি জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত আর কখনোই তা দেখা যায়নি। শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ, খালেদা জিয়ার ১৯৯১ ও ২০০১ সালের সরকার, শেখ হাসিনার ১৯৯৬ সালের আমলের পুলিশকে স্বৈরাচারী রেজিমের পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে কোনোভাবেই তুলনা করা যাবে না। বিপরীতে পুলিশ যে মাত্রায় আক্রমণের শিকার হয়েছে, তাও অতীতে কখনো হয়নি। এসব আক্রমণে পুলিশের ৪৪ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। থানা, ফাঁড়ি, রাজধানীর পুলিশ-বক্সসহ পুলিশের প্রায় ৪০০ স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সহকর্মীদের নির্মম হত্যাকাণ্ড, থানা-ফাঁড়িতে আগুনের ঘটনা, পুলিশ বাহিনীকে বিপর্যস্ত করেছে, আরেকদিকে তারা হারিয়েছে মনোবল। অথচ এই পুলিশ বাহিনীর রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের গৌরব। ১৯৭১ সালের কালরাতে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যা শুরু করে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এ রাতেই শুরু হয় প্রতিরোধ লড়াই। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে রাজারবাগে ও সংলগ্ন এলাকায় আক্রমণ চালায়। পুলিশ সদস্যরা সেই রাতে সামান্য থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে প্রাণপণ লড়াই করেছিলেন। এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ। এরপর অফিসারসহ পুলিশ বাহিনীর ১৮ হাজার সদস্য পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান স্মরণে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নির্মিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ১ হাজার ১০০ সদস্য শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে পুলিশ স্মৃতিসৌধ। শহীদ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৭৫১ জনের নাম রয়েছে স্মৃতি ফলকে।
একাত্তরের আত্মত্যাগের ইতিহাসের উত্তরসূরি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর আজকের এ পরিণতি কেন? কেন তারা ছাত্র-জনতার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াল, তবে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার দায় কি শুধু পুলিশ বাহিনীর? পুলিশের দায় অবশ্যই আছে। তবে এর প্রধান দায় কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার ওপরই বর্তায়। টানা সাড়ে ১৫ বছর জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করেছেন। পুলিশ একপর্যায়ে রাষ্ট্রের বাহিনী না থেকে অনেকটা সরকারি দলের বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। আর এ সুযোগ নিয়ে পুলিশের মধ্যমসারি থেকে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, জড়িয়ে পড়েন ব্যাপক দুর্নীতিতে। অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। অনেক থানার ওসি সরকারদলীয় এমপিকে পাত্তা দিতেন না। এটা আবার তারা বেশ গর্ব করে বলতেন, ‘আমরাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছি।’ কোনো কোনো ওসি নিজেদের এতটাই ক্ষমতাধর ভাবতেন যে, জেলার পুলিশ সুপারকেও গুরুত্ব দিতেন না। ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোটের’ নির্বাচনে পুলিশ বাহিনী প্রধান ভূমিকা পালন করে। শেখ হাসিনা যেমন ভাবতেন যে, তিনি আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন। পুলিশও বিশ্বাস করত, আওয়ামী লীগ শাসনের অবসান হবে না। আওয়ামী লীগই লাগাতারভাবে ক্ষমতায় থাকবে।
দেশ কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মনোবল হারিয়ে গুটিয়ে যাওয়া পুলিশ বাহিনী এখন কী করবে? বর্তমান অবস্থা থেকে তাদের বের করে আনার উপায় কী? গণঅভ্যুত্থানের পরপর পুলিশ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আশ্রয় নেয়। সহকর্মীদের হত্যা, পিটিয়ে মারা, থানা-ফাঁড়িতে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে তারা সেখানে বিক্ষোভ করে। কাজে ফিরে যেতে অস্বীকার করে। তবে তিন দিন পর তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। সেই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি পুলিশের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি পেশ করা হয়। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
পুলিশের কাজে গতি আনার জন্য বাহিনীর পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। নিজেদের বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্ত হতে এবং জনগণের সামনে নতুনভাবে উপস্থাপনের জন্য দ্রুত পুলিশ বাহিনীর লোগো ও পোশাক পরিবর্তন হওয়া দরকার। শুধু পোশাক ও লোগো বদলে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। তবে এটি একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের জন্য পুরো বাহিনী যে দায়ী নয়, সেজন্য দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা দরকার। শুধু কর্মকর্তা নয়, বাহিনীর যে কোনো পর্যায়ের সদস্য ছাত্র-বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতার আশ্রয় নিয়েছেন; তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, যারা হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী, বিভিন্ন সময় বাড়াবাড়ি করেছেন, ব্যাপক দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়েছেন, তাদের জন্য সমগ্র বাহিনী দায়ী হতে পারে না। কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা পদোন্নতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখা দরকার। ট্রাফিক পুলিশসহ অনেক সদস্যকে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। তাদের ছুটি পাওয়া নিয়েও সমস্যা রয়েছে। বারবার ছুটির আবেদন অগ্রাহ্য করায় একজন পুলিশ সদস্যের আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনীতে জনবল ঘাটতি হয়ে থাকতে পারে। এ ঘাটতি পূরণে সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরতদের মধ্যে যারা শেষ পর্যায়ে অথবা মাঝামাঝি পর্যায়ে আছেন, তাদের কাজে নিয়ে আসা যেতে পারে। পরিস্থিতি জরুরি বিবেচনায় এটা করা বেঠিক হবে না। তবে আইনশৃঙ্খলায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে প্রশিক্ষণের বাকি মেয়াদের জন্য তারা একাডেমিতে ফিরে যেতে পারেন। স্বৈরাচারী সরকার বা রাজনৈতিক দলের না হয়ে পুলিশ কীভাবে রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী হতে পারে, সে উদ্যোগ নিতে হবে। পুলিশের মনোজগতে পরিবর্তন আনার বিষয়টিও ভাবতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। অথচ এখনো এ কাজে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, সেনাবাহিনীকে দেখা যাচ্ছে। এ দুই বাহিনীকে তাদের নিজ নিজ জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া দরকার।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের গত ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের একটি ঘোষণা পুলিশ বাহিনীর মধ্যে আশার সঞ্চার করবে। প্রফেসর ড. ইউনূস সংস্কারের জন্য ছয়জনের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। সফর রাজ হোসেনকে প্রধান করে পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন ১ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ কমিশনের সুপারিশের আলোকে পুলিশ বাহিনী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পুলিশ হয়ে উঠবে কি না, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশ্লেষক