সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সুফি দরগাহ ও মাজারে হামলাকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এসব স্থাপনায় একের পর এক হামলার ঘটনায় কিছুটা বিলম্ব হলেও সরকারের এ অবস্থান অত্যন্ত ইতিবাচক ও সাধুবাদযোগ্য।
রোববার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, অন্তর্বর্তী সরকার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা এবং সুফি মাজার সম্পর্কিত যে কোনো ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য এবং এসব জায়গায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধর্মীয় উপাসনালয় এবং সাংস্কৃতিক স্থাপনা রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনায় বলা হয়, হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম স্বাক্ষরিত এ বার্তায় বলা হয়, কয়েক দিন ধরে কিছু দুর্বৃত্ত দেশের সুফি মাজারগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। বাংলাদেশে হাজার বছরের ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ’ উল্লেখ করে বলা হয়—এসব হামলার সঙ্গে জড়িতদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দেশ। ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করার যে কোনো প্রচেষ্টা সরকার দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করবে।
আমরা জানি, কয়েক দিন ধরে দেশের নানা জায়গায় বিভিন্ন স্থাপনা বিশেষ করে সুফি দরগাহ ও মাজারে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হচ্ছে। গত সপ্তাহে আক্রমণ হয় সিলেটের বিখ্যাত হজরত শাহপরাণের (রহ.) মাজারে। সেদিন সিলেটের শাহপরাণ (রহ.) থানার খাদিমপাড়া এলাকায় শাহ সুফি আব্দুল কাইয়ুমের মাজারও গুঁড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ মাজারে। সেখানে অন্তত চারজন আহত হন। এ ছাড়া সোনারগাঁ উপজেলার আয়নাল শাহ দরগা নামে পুরোনো একটি মাজার ভেঙে ফেলা হয়। নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার ফকির চাড়ু মিজি শাহ্ (রহ.) মাজারে (দরগাহ বাড়ির মাজার) শুক্রবার হামলা চালানো হয়। একই দিনে গাজীপুর মহানগরের শাহ সুফি ফসিহ উদ্দিন (রহ.) মাজারে ভাঙচুর-লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হামলা হয় সিরাজগঞ্জ তিন জায়গার মাজারে। হামলার শিকার হয় একই জেলার সদর উপজেলায় হজরত বড়পীর গাউসুল আজম দরবার শরিফ। এখানে হামলা-ভাঙচুরের পর তিনটি কবর খুঁড়ে হাড়গোড়-মাথার খুলি নিয়ে যায় একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত। এর আগে ২৯ আগস্ট কাজিপুর উপজেলার মনসুর নগরে ‘আলী পাগলার মাজার’ এবং ৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর গ্রামের ‘ইসমাইল পাগলার মাজার’ ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে গত সপ্তাহে রাজধানীর গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারে হামলা হতে পারে—এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে হামলা ঠেকাতে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয় সেখানে।
আমরা মনে করি, একটি সমাজের সব মত-পথ-ধর্ম-জাতির মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে হলে এসব দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি সাধারণ সচেতন মানুষেরও উচিত এসবের বিরুদ্ধে সরব অবস্থান নেওয়া। মনে রাখতে হবে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সবার অধিকার রয়েছে নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাস ও অপরাপর কার্যক্রম চালানোর। দেশব্যাপী অলি-আউলিয়ার মাজার-দরগাহ ভাঙায় যারা জড়িত, তাদের উদ্দেশে আমরা বলতে চাই, মাজার বিষয়ে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে তা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংশ্লিষ্টদের জানান। নিশ্চয়ই দেশের বিদ্যমান আইনেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। আমাদের চাওয়া, বাংলাদেশ যে ঐতিহ্যগতভাবেই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতির দেশ, সেই ধারা বজায় থাকবে এবং সাময়িক এ অসহিষ্ণুতা ও বিশৃঙ্খলা কেটে যাবে।