অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, লেখক ও গবেষক। তিনি ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। তার গবেষণা ও প্রকাশনার ক্ষেত্র হচ্ছে গণতন্ত্র, সহিংস উগ্রবাদ, ধর্ম ও রাজনীতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি। ড. আলী রীয়াজ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তিনি সুইডেনের ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি (ভি-ডেম) ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কাজ করেছেন, ২০১৩ সালে উড্রো উইলসন ন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সে পাবলিক পলিসি বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ, রাষ্ট্র ও সংবিধানের সংস্কার, প্রশাসনের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন।
কালবেলা: বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। আপনি এ আন্দোলন কীভাবে দেখছেন?
আলী রীয়াজ: প্রথমে এ আন্দোলনকে আমি একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বলব। কারণ এ আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ পরিকল্পিতভাবে ঘটেনি। কোনো একজনের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ রাস্তায় নেমেছিল তেমনটাও নয়। ১৫-১৬ জুলাইয়ের পর থেকে এ আন্দোলনে এক ধরনের গুণগত পরিবর্তন ঘটে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আন্দোলনে যোগ দিতে থাকে।
আবার অন্যদিক থেকে এ আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না, এটাও বলা যায়। কারণ যে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনটি সংগঠিত করেছে, তাদের মধ্যে এক ধরনের সংগঠন ছিল। তারা যেভাবে এ আন্দোলন সংগঠিত করেছে সেটা অকস্মাৎ ছিল না। হঠাৎ করে তাদের আন্দোলনের পরিণতি এ পর্যন্ত এসেছে তেমনটাও নয়। আগে থেকেই তারা এক ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে জনগণের মধ্যে অনেক ক্ষোভ জমেছিল। বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ক্ষোভ আরও ব্যাপক হয়েছে। নির্বাচনের পর জনগণের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আন্দোলনের বাইরে আর কোনো পথ নেই। আর এ কারণে মানুষ মরিয়া হয়েই রাস্তায় নেমেছিল।
কালবেলা: ছাত্র-জনতার এ আন্দোলন আমাদের কী বার্তা দেয়?
আলী রীয়াজ: মানুষের মধ্যে একটি আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেটি হলো রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা। রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়ার আকাঙ্ক্ষা। একটি পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা। মানুষ বিশ্বাস করেছে যে, শুধু ক্ষমতার হাত বদলেই সমস্যার সমাধান হবে না। একজন স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে সরানোই যথেষ্ট নয়।
মানুষ অনেক আগে থেকেই পরিবর্তন চাইছে। কিন্তু সেই চাওয়ার জন্য প্রাণ দিতে পারা এবং সেটা এক-দুজন নয় বরং অসংখ্য মানুষ, এটি বড় বিষয়। অল্প বয়সী তরুণরা প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে বুক চিতিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। বন্দুকের গুলির সামনে তারা নির্ভীকভাবে দাঁড়িয়েছে। এমনটা আমরা আগে দেখিনি।
একটি কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার—এ আকাঙ্ক্ষাটি তরুণদের মধ্যে তীব্র হয়েছে। তবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়টি বুঝতে পারছে কি না, আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। তারা যদি এটা বুঝতে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আমি মনে করি। মানুষ আরও মরিয়া হয়ে রাস্তায় নামবে। আমি চাই না এমন কিছুর প্রয়োজন হোক, তবুও সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছি না।
কালবেলা: অনেকে বলছেন বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন। এ সংস্কার কীভাবে হতে পারে বলে মনে করেন?
আলী রীয়াজ: রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি হলো, নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া। দলের নেতৃত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে আসবেন নাকি একেবারে প্রান্তিক স্তর থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নিয়ে কেউ আসবেন, তা নির্ধারণ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রথমে এ নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া ঠিক করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সামগ্রিকভাবে দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে আর্থিক বিষয় পর্যন্ত সব কাজে স্বচ্ছতা তৈরি করা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতার বড় অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন ক্ষমতায় গেছে তখন এটা আরও বড় করে লক্ষ করা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাহাবুদ্দিন সাহেবকে মনোনয়ন দেয় তখন সেটা কেউ জানত না। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাই সিদ্ধান্ত নেন এবং সবাইকে বিস্মিত করে সাহাবুদ্দিন সাহেবকে মনোনীত করেন।
আমি মনে করি এটি অস্বচ্ছতার একটি চূড়ান্ত জায়গা। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল, এটা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। রাজনৈতিক দল এভাবে চলতে পারে না। আবার আর্থিক স্বচ্ছতা নেই বলেই রাজনৈতিক দলগুলোতে মনোনয়ন-বাণিজ্যসহ নানারকম দুর্নীতি ও লেনদেনের কথা আমরা শুনি।
তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামোয় পরিবর্তন দরকার। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে সাংবিধানিকভাবে একসঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। একই ব্যক্তিকে বলা হচ্ছে দলের নেতা, তিনিই প্রধানমন্ত্রী, তিনি সংসদ নেতা। এভাবে ক্ষমতা এককেন্দ্রিক করে ফেলা রাজনৈতিক দলের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সাংগঠনিক কাঠামোগুলো এমনভাবে তৈরি করা দরকার, যাতে এককেন্দ্রীকরণ না হয়।
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ দুটি দলের ক্ষেত্রেই এ এককেন্দ্রিকতা দেখা যায়। আর এ কারণে দলের প্রধান ছাড়া অন্য কেউ আর জনগণের কাছে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকে না।
প্রাসঙ্গিকভাবে বলা যায়, এবারের ছাত্র আন্দোলনে কোনো একক নেতৃত্ব ছিল না। বরং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব ক্রমাগতভাবে বিস্তারিত হয়েছে। প্রথমে ছয়জন, তাদের যখন আটক করা হলো, তখন নিচ থেকে আরও নেতৃত্ব উঠে এসেছে। তারা দলের নেতৃত্বের পদ্ধতিটাই এমনভাবে তৈরি করেছে। তারা আন্দোলনের কৌশল হিসেবে বিষয়টি দেখিয়েছে, সাংগঠনিকভাবেও ঠিক এমনটাই হওয়া দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার করতে হলে এ তিনটি বিষয় অত্যন্ত জরুরি।
তবে আমি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ সংস্কার শব্দটি পছন্দ করছি না। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমি বলতে চাই—রাষ্ট্রের পুনর্গঠন দরকার। সমগ্র রাষ্ট্রটাকেই পুনর্গঠন করতে হবে।
কালবেলা: রাষ্ট্রের কোন জায়গাগুলোয় পুনর্গঠন প্রয়োজন বলে মনে করেন?
আলী রীয়াজ: রাষ্ট্রের কয়েকটি বেসিক ভিত্তি রয়েছে, সেখান থেকেই সংস্কার শুরু করতে হবে। যেমন, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ। বিচার বিভাগকে যতক্ষণ না পর্যন্ত পুনর্গঠন করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গতা পাবে না।
অন্যদিকে নির্বাহী বিভাগ বলতে জনপ্রশাসনকে বোঝানো হচ্ছে। জনপ্রশাসন কীভাবে চলবে, কারা দায়িত্ব নিচ্ছে, তাদের জবাবদিহিতার জায়গা রয়েছে কি না, তাদের আনুগত্য কার কাছে—প্রত্যেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। জনপ্রশাসন কি সংবিধানের প্রতি অনুগত নাকি কোনো ব্যক্তির কাছে অনুগত সেটা পরিষ্কার হতে হবে। এভাবে প্রায়রিটির ভিত্তিতে রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করতে হবে।
কালবেলা: আপনি সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন কি?
আলী রীয়াজ: আজ বাংলাদেশে যে সংবিধানটি রয়েছে তার এক-তৃতীয়াংশ আমরা সংশোধন করতে পারব না। আর এ কাজটি যে সংসদ করেছে, সেই সংসদ এটা করতেই পারে না। যদি সেই সংসদ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়েও ক্ষমতায় এসে থাকত, তবুও তাদের সেটা করার অধিকার ছিল না। মানুষ যখন একটি দলকে ভোট দেয় তখন তাদের মাত্র দুই-তিন বা পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় নিয়ে আসে। চিরদিনের জন্য আনে না।
সংবিধানের ১১৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির অধীন। আবার এর আগে-পরে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কিছু করতে পারবেন না। তাহলে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকল কোথায়? এ সংবিধানেই বিচার বিভাগকে তুলে দেওয়া হচ্ছে নির্বাহী বিভাগের হাতে আবার সেই নির্বাহী বিভাগ এক ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করেন। অর্থাৎ বিচার বিভাগটি এক ব্যক্তির হাতে দেওয়া হয়ে যায়।
এ সংযোগগুলো আলাদা করতে হলেও সংবিধানকে নতুন করে লিখতে হবে। আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যায়। বাংলাদেশের এখনকার সংবিধানে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেই আবার বলা হচ্ছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একেবারেই নিরঙ্কুশ নয়। যুক্তিযুক্ত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে স্বাধীনতার চর্চা করতে হবে। এরকম অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক কথাবার্তা রয়েছে। এগুলো সংশোধন করতে শুধু একটি-দুটি বাক্য বদলালে হবে না। এজন্যই আমি সংবিধানকে পুনর্লিখনের কথা বলছি।
এ সংবিধানে হয়তো এমন অনেক কিছুই রয়েছে যেগুলো পুনর্লিখনের পরও রেখে দেওয়া যাবে। আবার এমন অনেক কিছুও রয়েছে যেগুলোকে সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। সবাই মিলে আলোচনা করে একটি নতুন কাঠামো এবং একটি নতুন টেক্সট তৈরি করতে হবে।
কালবেলা: সংবিধান নতুন করে লেখার জন্য আপনি গণপরিষদের কথা বলছেন। গণপরিষদ কেন প্রয়োজন এবং সেখানে কারা কোন প্রক্রিয়ায় আসবে বলে মনে করেন?
আলী রীয়াজ: সংবিধান তৈরি করার অধিকার একমাত্র গণপরিষদেরই আছে। আমি আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনা করে সংবিধান পুনর্লিখনে তাদের প্রস্তাব পেশ করবেন। কারণ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের এবং রাজনৈতিক দলের। এখন আমরা যে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা দেখছি, এটা সাময়িক। এ সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, ক্ষমতায় আসেনি। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে, এ সরকার সূচনা করতে পারে কিন্তু এককভাবে সবকিছু করতে পারবে না।
সাংবিধানিক গণপরিষদ গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। আগামী নির্বাচনটি সাংবিধানিক গণপরিষদের নির্বাচন হতে পারে। হতে পারে সেটা তিন বা ছয় মাসের জন্য। এ নির্বাচনের জন্য বড় কিছুর দরকার নেই। এ নির্বাচনের জন্য দরকার হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাওয়া যেতে পারে। এমনকি এ ধরনের নির্বাচনে জাতিসংঘের অংশগ্রহণের ইতিহাসও রয়েছে।
একটি সাংবিধানিক গণপরিষদ তৈরি হলে তাদের কাজ হবে সংবিধানের একটি ড্রাফট তৈরি করা। এরপর সেটা মানুষের সামনে উন্মুক্ত করা যেতে পারে এবং মানুষের মতামত নেওয়া যেতে পারে। অধিকাংশ মানুষ যদি মনে করে হ্যাঁ, নতুন সংবিধান গ্রহণযোগ্য তাহলে সেটা গৃহীত হবে। আর মানুষ যদি গ্রহণযোগ্য মনে না করে তাহলে গণপরিষদ ড্রাফট সংশোধন করতে পারে অথবা পুরোনো সংবিধানের ফিরে যাওয়ার সুপারিশ করতে পারে।
সাংবিধানিক গণপরিষদ তৈরির জন্য নির্বাচন করা কোনো দুরূহ কাজ নয়। কিন্তু এর জন্য প্রথমেই দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা। আমরা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, তার ফলে আগের সংবিধান থাকতে পারে না। জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্যই নতুন সংবিধান দরকার।
কালবেলা: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের কোনো ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা দেখছেন কি?
আলী রীয়াজ: রাজনৈতিক দলগুলোর কথাবার্তায় এখন পর্যন্ত এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যে তারা রাষ্ট্রের পুনর্গঠন করতে চান বা সংস্কার করতে চান। তবে অন্তর্বর্তী সরকারে যারা রয়েছেন তারা উৎসাহী এবং আগ্রহী। অধ্যাপক ইউনূস বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো সংস্কার করতে চান বলেই তিনি উল্লেখ করেছেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাজনৈতিক দলগুলো কখনো কখনো সংস্কারের কথা বলছে কিন্তু তা খুব একটা স্পষ্ট নয়। অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার চাইল আর রাজনৈতিক দলগুলো দেখা করে কিছু কথা বলে চলে এলো এমনটা হলে হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমার আহ্বান, আপনারা জনগণের ম্যান্ডেট বুঝুন। এই আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিন এবং আপনারাও নিজেদের বদলান। স্বচ্ছতার প্রথম ধাক্কাটা এখানেই আসুক। আপনারা কী চান সেটা জনগণের সামনে স্পষ্ট করুন। আপনারা স্বচ্ছতা তৈরি করুন। আলাপ-আলোচনা করুন এবং শুধু সংস্কার সংস্কার না বলে সুস্পষ্ট ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করুন। আপনারা কী কী করতে চান তা জনগণের সামনে তুলে ধরুন।
কালবেলা: ১৯৯১ বা ২০০৭ সালেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও তেমনটি ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
আলী রীয়াজ: গ্যারান্টিটা সংবিধান দিয়েই তৈরি করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের সময় সেই সেইফ গার্ড তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা থেকে শুরু করে তার স্বাধীনতা, জবাবদিহিতা এবং কার কাছে জবাবদিহি করবে সেগুলো যদি লিখিত থাকে এবং সংবিধান দিয়ে সেভ গার্ড করা হয়, তাহলেই সম্ভব। আমাদের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে যে, যতরকম ঐকমত্যই হোক না কেন, যদি সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে সেটা কাজে দেবে না।
কালবেলা: এবারের আন্দোলনে ছাত্রদের মধ্যে দেশ গঠনের বিষয়ে এক ধরনের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে তাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া যায় কি?
আলী রীয়াজ: ন্যাশনাল ভলান্টারি কোর তৈরি করা যেতে পারে। আমেরিকা কিউবাসহ অনেক দেশেই এটা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে বিপ্লবের পর বা পরিবর্তনের পর এমন ভলান্টারি কোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, এ দেশের যুবসমাজ, ছাত্র এবং তরুণদের দেশ গঠনে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তারা কিছু করতে চান। তাদের কিছু করার পথ তৈরি করে দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাজনৈতিক দলগুলোকেই এটা নিয়ে ভাবতে হবে।
এমনটা হলে হবে না যে, ক্ষমতায় আসার পর দল নির্ভর হয়ে পড়ে কিছু দলীয় ক্যাডার তৈরি করা হবে। দলে যুক্ত হয়ে গেলে নানা অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে এবং তাদের দিয়ে আর কখনোই দেশ গঠনের কাজ করানো যাবে না। তরুণ ও যুবকদের দলীয় ক্যাডার না বানিয়ে নাগরিক হিসেবে দেশের সেবায় নিয়োজিত করার পথ তৈরি করতে হবে।
কালবেলা: ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করতে আগ্রহী বলে আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আলী রীয়াজ: ছাত্ররা যদি দল গঠনে উৎসাহী হয় তাহলে অবশ্যই তারা সেটা করতে পারে। বিভিন্ন দেশে এমনটাও দেখা গেছে যে, খুবই তরুণ কেউ দল গঠন করে হঠাৎ দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছে। তরুণরা যদি দল গঠনের চিন্তা করে, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ যদি সেদিকে এগোতে চায়, তাহলে অবশ্যই তারা রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। প্রথমত নাগরিক হিসেবে তাদের সেই অধিকার রয়েছে। এর ওপর এই গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তাদের একটি বাড়তি অধিকার তৈরি হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন ঘটানোর মতো একটি বিশাল কাজ তারা করেছে, যা রাজনৈতিক দলগুলো পারেনি।
তরুণরা চাইলে রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। তারা জনগণের কাছে তাদের ম্যান্ডেট চাইতে যাবে। জনগণ যদি তাদের গ্রহণ করে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়, তাহলে তারা রাষ্ট্রক্ষমতাও গ্রহণ করতে পারে।
কালবেলা: বাংলাদেশ দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে পারছে না কেন? ৭১-এর পর বাকশাল, একাধিকবার সামরিক শাসন, প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার, অন্তর্বর্তী সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইত্যাদি…
আলী রীয়াজ: আমাদের রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়াটি অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কোনো উপায় নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সব দেশই এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে সবসময় বলা হয়, দেশে এখনো পারফেক্ট ইউনিয়ন তৈরি হয়নি। প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট সেটা মনে করিয়ে দেন।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে তা হলো, এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনো তৈরি করা হয়নি। একটি দেশ টিকে থাকে কতগুলো পিলারের ওপর। এ পিলারগুলো তৈরি না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাই স্থায়ী হতে পারে না। আমাদের পাশের দেশ ভারতে এ প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়েছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার অনেক কিছু করার পরও সে দেশের গণতন্ত্র এখনো টিকে থাকার অন্যতম কারণ শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে সমস্যাটি থেকে গেছে।
কালবেলা: যে কোনো একটি দল ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের প্রবণতা দেখা যায়। এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?
আলী রীয়াজ: প্রথমত প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশনে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকে তাহলে একজন নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোট জালিয়াতিতে সহযোগিতা করতে পারবেন না। তিনি হয়তো তার দায়িত্ব পালন করবেন নয়তো চাকরি ছেড়ে দেবেন। আর না হলে জেলে যাবেন। যদি নিয়মিত জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো আর দলীয়করণ হবে না।
উদাহরণস্বরূপ, যদি নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহির ব্যবস্থা এমন করা হয় যে, শক্তিশালী পার্লামেন্টে শুনানির জন্য সিলেক্ট কমিটির সামনে তারা উপস্থিত হবেন। সবার সামনে তাদের প্রশ্ন করা হবে এই নির্বাচনে এটা কেন ঘটল? ওই ঘটনা কীভাবে মোকাবিলা করেছেন? আপনারা তথাকথিত ইভিএমের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা চেয়ে বসলেন কেন? কোথায়-কীভাবে-কেন খরচ হবে? এ প্রশ্নগুলো যদি নিয়মিত করা হয় তাহলে দেখা যাবে নির্বাচন কমিশনে কে রয়েছেন তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে কি না।
কালবেলা: অনেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার কথা বলছেন। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
আলী রীয়াজ: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। আমি সরকারে পাঁচ বছরের জায়গায় চার বছর মেয়াদের পক্ষপাতী। যদি চার বছরের জন্য সংবিধানে একটি নিম্নকক্ষ তৈরি হয় এবং দুই বছর যাওয়ার পর একটি উচ্চকক্ষ তৈরি হয়, তাহলে জবাবদিহির জায়গাটা অনেক বাড়বে। নিম্ন কক্ষে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তারা ভালো কাজ না করলে দুই বছর পর জনগণ তাদের উচ্চকক্ষে যেতে ভোট দেবে না। বরং বিরোধী দলকে দেবে। এভাবে একটি সিস্টেম দাঁড়ালে সেটা কাজে দেবে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একই দলকে বারবার ক্ষমতায় নিয়ে না আসার একটি প্রবণতা রয়েছে। ফলে নিম্নকক্ষে যদি একটি দল ক্ষমতায় এসে ভালো কাজ না করে, তাহলে দুই বছর পর উচ্চকক্ষে বিরোধী দলের জেতার সম্ভাবনাই বেশি।
কালবেলা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য দাবি করছেন কেউ কেউ। এই বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখছেন?
আলী রীয়াজ: আমি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে একদমই সমর্থন করি না। একটি ছাত্র আন্দোলনের পটভূমিকায় এসে মানুষ বলছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে? এটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হয়। একই সঙ্গে আত্মঘাতী বলেও মনে হয়। ছাত্ররাজনীতি করা যাবে না এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না। এমনকি ছাত্ররা কোনো বিশেষ দল করতে পারবে না সেটাও বলা যাবে না। কারণ সাংবিধানিকভাবে সেই অধিকার নেই। রাজনীতি করবে কি করবে না সেটা ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার। এর চেয়েও বড় বিষয় হলো, আমরা কোনটাকে রাজনীতি বলব আর কোনটাকে বলব না সেটা। কোনটা রাজনীতি নয়? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এগুলো কি রাজনীতির বাইরে? একজন যদি এই দাবি তোলে যে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, সেটাও রাজনীতির অংশ।
আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ নয় বরং রাজনীতিকে আরও উৎসাহিত করতে হবে, তবে সেটি ভালো জনকল্যাণমূলক রাজনীতি হতে হবে। রাজনীতিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। ছাত্র সংসদগুলোতে নিয়মিত নির্বাচন দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের বিতর্কের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সহনশীলতা তৈরি হয় এবং ছাত্ররা রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কে বুঝতে পারে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখের পর এখনো কেউ ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলতে পারে সেটি ভেবে আমি অবাক হই।
কালবেলা: বিগত সরকারের আমলে আমরা গুম, হত্যাসহ জনগণের ওপর নিপীড়নমূলক বিভিন্ন আচরণ দেখেছি। এই সংস্কৃতি থেকে মুক্তির উপায় কী?
আলী রীয়াজ: প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে। নাগরিকের জন্য সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তৈরি করতে হবে। যারা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছিল সেগুলোর কেবলমাত্র ব্যক্তির পরিবর্তন নয় বরং কাঠামোগতভাবে তাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে। যেন এ ধরনের কাজগুলো চিরতরে বন্ধ করা সম্ভব হয়। অন্যথায় দুজন লোককে সরিয়ে দিলে হয়তো দুই বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না কিন্তু আরেকটি রাজনৈতিক দল সরকারে এসে আবারও সেই একই অপরাধ ঘটাতে পারে।
কালবেলা: পুলিশ প্রশাসনসহ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এটি কীভাবে পুনর্গঠন করা যাবে এবং এ অবস্থার উন্নতি কীভাবে করতে হবে?
আলী রীয়াজ: দ্রুততার সঙ্গে সমস্যাগুলো মোকাবিলা করে যেসব জায়গায় গ্যাপ তৈরি হয়েছে সেখানে নতুন নিয়োগ দিতে হবে। বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ বেকার যুবক রয়েছে। সবাই সব কাজ পারবেন, সেটা আমি বলছি না। প্রশাসনের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতা দুটোই প্রয়োজন। হয়তো দক্ষ জনগোষ্ঠী পাওয়া যাবে কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে না। আবার দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হলে প্রশিক্ষণেরও দরকার হতে পারে। তাই যথাসম্ভব দ্রুত এ কর্মোদ্যোগ শুরু করা দরকার।
অন্তর্বর্তী সরকার এটা কতটা পারবে জানি না; কারণ তাদের সামনে আরও অনেক কাজ রয়েছে। এ কারণে আমি মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার একেবারে মৌলিক বিষয়গুলোর দিকে আগে দৃষ্টি দিক এবং সেগুলোর সংস্কার করুক। সংস্কারের এ আকাঙ্ক্ষা জারি থাকার মধ্যেই আরেকটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক। তারা দায়িত্ব নিয়ে বাকি সংস্কারগুলো করুক।
কালবেলা: অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কয়েকটি দায়িত্বের কথা বলছেন। সেগুলো কী?
আলী রীয়াজ: প্রথমটি হলো, অতি দ্রুত যতটা সম্ভব স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, বিদেশি চাপ মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। তৃতীয় কাজটি হলো, প্রশাসনিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব কাঠামোগুলো ঠিক করা। চতুর্থত, সংবিধান পরিবর্তনের জন্য ঐকমত্য তৈরি করা। আর সর্বশেষটি হলো, মানবাধিকারবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের বিচারের আওতায় আনা। যত দ্রুত সম্ভব এ বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা।
এ প্রসঙ্গে আমি বলব, গণহারে যে মামলাগুলো হচ্ছে তা বরং ক্ষতি করছে। আমার মাঝেমধ্যে সংশয় হয়, যারা এসব মামলা করছে তারা ইচ্ছে করেই এ লোকগুলোকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্যই এগুলো করছে কি না। কেউ কেউ অবশ্য তাদের আবেগের জায়গা থেকে করছেন। আরও একটি বিষয়ে আমি গুরুত্ব দেব; সেটা হলো, দেশের অর্থনীতি ঠিক করা। এরই মধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা একটি ভালো ভবিষ্যতের জন্য সবাই মিলে কাজ করব এটাই প্রত্যাশা।