কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৬ এএম
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কালবেলার বিশেষ সাক্ষাৎকার

টর্চার সেল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়ানক উদাহরণ

টর্চার সেল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়ানক উদাহরণ

কালবেলা: নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

সি আর আবরার: আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল কিছু লক্ষ্য সামনে রেখে। এর অন্যতম একটি লক্ষ্য ছিল সমাজে সমতা নিয়ে আসা। এমন একটি সমাজ তৈরি করা, যেখানে বিচার থাকবে এবং মানুষ তার অধিকারগুলো পাবে। কিন্তু আজ সেগুলো থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। এই দেশটি এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, যেটাকে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি একনায়কতন্ত্র। মানুষ হিসেবে ন্যূনতম মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল।

একটি সরকার মানুষের ওপর দমন-পীড়নের জন্য আইন নিজের মতো তৈরি করে ব্যবহার করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করেছে। বিপরীতে জনগণ কোনভাবে পরিত্রাণ বা সুরক্ষা পাবে, এর তেমন কোনো কাঠামো ছিল না। এককথায় এটাকে তুলনা করা যায় ইংরেজি ‘রুল অব জঙ্গল’ শব্দটির সঙ্গে।

হয়তো কাগজ-কলমে আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক ছিলাম; কিন্তু আসলে আমরা দাস হিসেবে বিবেচিত হয়েছি। কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্রের ধারক-বাহকরা আমাদের দাস হিসেবে বিবেচনা করেছে। আর এসব কিছুর একটি শেষ আমরা দেখেছি, একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে এখন। ছাত্র-জনতা একত্রে মিলে সেই দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। যাকে অনেকে বলছেন গণঅভ্যুত্থান। আমি মনে করি, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং একটি দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। এটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনা জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে। সেটা থেকে এই দেশকে মুক্ত করে জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র কাঠামো কাজ করে, সেই লক্ষ্য ধারণ করতে হবে।

কালবেলা: গুম, খুনসহ দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করার সংস্কৃতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

সি আর আবরার: প্রথম কাজ হবে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া। নাগরিক হিসেবে আমার একটি সিদ্ধান্ত থাকবে যে, আমি কাকে নির্বাচন করতে চাই বা কাকে ভোট দিতে চাই। রাষ্ট্রের যে কাঠামোগুলো রয়েছে, সেখানে যেন ক্ষমতার অপব্যবহার না হয়। সেখানে যেন আইনের শাসন বিদ্যমান থাকে। ক্ষমতা যেন এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত না হয়। মানুষের যেন এমনটা মনে না হয় যে, তিনি রাষ্ট্র দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন। মানুষের নিরাপত্তা পাওয়ার এবং বিচার পাওয়ার অধিকার থাকে। পুলিশ এবং আদালত যেন মানুষের রক্ষাকবচ হয়।

দুর্ভাগ্যবশত এ দেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই তার নিরাপত্তার এবং বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচার বিভাগকে বিগত সরকার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিটি সরকারের মধ্যে এই প্রবণতা কমবেশি দেখেছি। আমাদের বুদ্ধিজীবী এলিটরা এমন একটা বয়ান সৃষ্টি করেছেন যে, যত অপকর্ম তার শুরুই হচ্ছে ১৯৭৫ সাল থেকে। কিন্তু এটাই সত্যি যে, ১৯৭২ সালের পর থেকেই নাগরিক অধিকার অস্বীকার এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা চলে আসছে। বাকশালের মাধ্যমে তখনই একটি একনায়কতন্ত্র তৈরি হয়েছিল। বাকশালের মাধ্যমে সব গণতান্ত্রিক চর্চাকে জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছিল। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। একজন ব্যক্তি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট থাকবেন। ’৭৫-পূর্ববর্তী ইতিহাসগুলো মানুষের জানা দরকার।

রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যাদের দীক্ষিত করা হয়েছে, তারা কখনো এ কথাগুলো বলেন না। আমি যদি আমার জনগণকে সত্যি কথাগুলো না জানাই, যদি সত্যি ইতিহাসগুলো আড়াল করি, তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোথা থেকে আসবে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বায়বীয় বিষয় নয়। সংবিধান লেখার সময় সেখানে পরিষ্কারভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে—এই এই লক্ষ্যে আমরা যুদ্ধ করেছি এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা বা লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে কাজ করেননি। বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শব্দটিকে তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে যাচ্ছেতাই করে ফেলেছেন।

তারা মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছিলেন। তারা অনেকে বলেন, অন্য ধরনের একটি শক্তি মাথা তুলতে পারে, মানুষের অধিকার হরণ হবে, পুরুষ-নারীর মধ্যে বৈষম্য ঘটাবে ইত্যাদি। অথচ তার কাউন্টারি আইডোলজি তারা সৃষ্টি করতে পারেননি। আজ আমাদের তরুণদের একটি অধিকারভিত্তিক সমাজ উপহার দিতে পারিনি। একজন তরুণ যে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, সেই হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং রাষ্ট্রের কাছে দাবি উত্থাপন করতে পারে, এটুকুও আমরা তাদের দিতে পারিনি।

আমরা দেখেছি, আমাদের পার্লামেন্টে যেটুকু আলোচনা হতো, সেখানে ৫ মিনিটের বক্তব্যে তিন মিনিটই চলে যেত অতীত এবং বর্তমান নেতৃত্বের প্রশংসা করতে করতে। জনগণের কথা তাদের মুখে জায়গা পেত না। এই সবকিছুকে ঢেলে সাজাতে হবে। দলীয় ও ব্যক্তির লেজুড়বৃত্তি থেকে বের হতে হবে।

দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হবে। বিগত দশকগুলোতে আমরা দেখেছি কীভাবে এদেশে লুটপাট চালানো হয়েছে। এই লুটপাটের রাস্তা বন্ধ করতে হবে।

এসব কিছু থেকে পরিত্রাণ পেতে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ আমরা চাই। আমি বারবার বলি আইনের শাসনের কথা, এদেশের মানুষ আইনের শাসন চায়। আইনের শাসন এবং মানুষের অধিকারের ওপর ভিত্তি করে আমাদের একটি রাষ্ট্র কাঠামো গঠন করতে হবে। এই রাষ্ট্র কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তুলতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময়ে। বাংলাদেশের দ্বিতীয়বার জন্ম হয়েছে। দ্বিতীয় রিপাবলিক তৈরি হয়েছে—এটা ধারণ করে এবং সেই উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র গঠনের জন্য আমাদের তরুণ সমাজ নতুন একটি সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।

কালবেলা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার কীভাবে করা যেতে পারে?

সি আর আবরার: আমি মনে করি, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আমূল সংস্কার প্রয়োজন। পরিতাপের বিষয় হলো, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এজেন্সিসহ প্রতিটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এমনভাবে অন্ধ দলীয়করণ হয়েছে, যা ভয়াবহ। ল এনফোর্সমেন্টের সঙ্গে যুক্ত বাহিনীগুলোতে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তখন প্রার্থীর বাড়ি কোথায়, সে ছাত্রলীগ করেছে কি না, তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না, আত্মীয়স্বজনরা ভিন্নমতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কি না—এগুলো বিচার করা হয়েছে। তার মেধা-যোগ্যতা কী, সেটা দেখার প্রয়োজন মনে করা হয়নি। এভাবে অনৈতিক দলীয় নিয়োগগুলোর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে দলীয় ক্যাডার তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে আমরা দেখলাম সাধারণ মানুষের ওপর তাদের হিংস্রতা।

নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ তৈরি এবং মানবিক অধিকারকে সম্মান করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে এসব বাহিনীর নেতৃত্বে সঠিক ব্যক্তিকে নিয়ে আসতে হবে। এটা খুব বেশি সময় সাপেক্ষ কাজ নয়। কালক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ নেই। যেসব জায়গা থেকে অপশক্তির উত্থান ঘটতে পারে, সেসব জায়গায় দ্রুত সংস্কার করতে হবে। সর্বোপরি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।

কালবেলা: আইনি সংস্কারের প্রয়োজন কতটা?

সি আর আবরার: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহির জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক আইন রয়েছে, যেগুলো প্রয়োগ হয় না। আইনের কেন যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এসব আইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জবাবদিহি থেকে পার পেয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। একই সঙ্গে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট থেকে শুরু করে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে—এমন যতগুলো আইন রয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।

কালবেলা: আয়নাঘর বা এ ধরনের যে টর্চার সেল নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আপনার মতামত কী?

সি আর আবরার: নিরাপত্তা বাহিনীর টর্চার সেল বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের গুম করে রাখা, এটা আগে থেকেই আলোচনায় এসেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের টর্চার সেল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়ানক একটি উদাহরণ। বছরের পর বছর কেউ কেউ ৮-১০ বছর সেখানে আটক ছিলেন। কোনো ধরনের বিচারিক অধিকার না দিয়ে তাদের এভাবে আটকে রাখা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজন জানতেন না যে তাদের কোথায় রাখা হয়েছে। তারা জানতেন না তাদের স্বজন বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।

রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা গুমের শিকার হওয়া বহু পরিবার মায়ের ডাক নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছে। বিভিন্ন সময় তারা রাস্তায় নেমেছেন, তাদের স্বজনদের খোঁজ চেয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে আমরা দেখেছি হাওয়া বুঝে পাল ধরতে। বিভিন্ন বৈরী পরিবেশে তারা তাদের মানবাধিকারের ঝান্ডা নামিয়ে ফেলেছেন। যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে এবং চাপ সহ্য করে অল্প কয়েকটি সংগঠন বা অল্প কয়েকজন ব্যক্তি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা গুম, খুন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে অনবরত কথা বলে গেছেন। আমি আনন্দিত যে, আমি নিজেই এমন একটি সংগঠন অধিকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।

হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছিল সরকার। সরকারি এজেন্সিগুলো সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছিল। অথচ আমরা জানি, সেখানে হোসপাইপ দিয়ে রক্ত সরানো হয়েছে। কিছু ভিডিও এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ায়। এ কথাগুলো দুয়েকজন বলার সাহস দেখিয়েছেন। এই মেরুদণ্ডওয়ালা মানুষগুলো আমাদের তরুণ সমাজের জন্য উদাহরণ। মানুষকে মনে রাখতে হবে, আমার কাজ আমি করব। এই রাষ্ট্রকে আমি কারও কাছে বর্গা দিয়ে দিইনি। আমি কোনো দাস না, আমি এই রাষ্ট্রের নাগরিক। আমি খুশি যে, আমাদের ছাত্রসমাজ এই দীক্ষাটা খুব ভালোভাবেই পেয়েছে।

আমরা দেখেছি পুলিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলছে, স্যার আমরা গুলি করি, মরে একটা, বাকিরা যায় না। একটা পড়ে যায়, বাকিরা দাঁড়িয়ে থাকে। আমাদের তরুণরা দেশপ্রেমে বলীয়ান। আমাদের তরুণরা নিজের মর্যাদা সুরক্ষা করার জন্য দৃঢ়চিত্ত। এ কারণেই তারা বিজয় ছিনিয়ে নিতে পেরেছে। আমার বিশ্বাস, এত ভয়, ভীতি, বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করে যারা এই দেশটাকে মুক্ত করেছে, তারা আগামীতেও এই দেশটাকে গড়তে বিরাট একটি ভূমিকা পালন করবে। আমি নিশ্চিত, আমাদের এই তরুণরা অমানিশার ঘোর কাটিয়ে নতুন সূর্যোদয় নিয়ে আসবে।

কালবেলা: গণঅভ্যুত্থানকে সফলতার দিকে নিয়ে যেতে হলে করণীয় কী বলে মনে করেন?

সি আর আবরার: এ বিষয়ে হয়তো একেকজন একেকভাবে চিন্তা করবেন। তবে আমার মনে হয়, আমাদের অতীত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুতি ঘটিয়ে একটি নতুন ধারা শুরু করা প্রয়োজন। আমাদের সংবিধানকে নতুন করে রচনা করা প্রয়োজন। যে সংবিধান স্বৈরাচার তৈরি করে, তার ওপর ভিত্তি করে শপথ নিয়ে কতটুকু বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারব, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

আমি কোনো আইনজ্ঞ মানুষ নই, সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে মনে করি, এই গণঅভ্যুত্থান কারও বদান্যতায় আসেনি। রাজনৈতিক দলগুলোরও তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। বিদেশি শক্তি বা কোনো ডোনার এজেন্সির শক্তি ছিল না। সুশীল সমাজের কোনো ভূমিকা ছিল না। ছাত্ররা এবং সাধারণ জনতা যারা শোষিত হয়েছেন, তারা নিজেরা সংগ্রাম করে এই দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে নতুন করে স্বাধীন করেছেন।

আমার কেন জানি ভয় হয়, যদি কখনো কোনো অপশক্তির উত্থান ঘটে বা অপশক্তি সুযোগ পায়, তবে এই সংবিধানের বলেই আজকে যারা ছাত্র-জনতার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, তাদের চরম মূল্য দিতে হতে পারে। এই সংবিধান এই আইন বা এই আদালতের বাইরে অন্য কোনোভাবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বৈধতা দেওয়া গেলে ভালো হবে। আমি মনে করি এখানে আইনগত জটিলতার কোনো বিষয় নেই, কারণ যারা এই বিপ্লব ঘটিয়েছে তারা এদেশের জনগণ। আর রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণই।

কালবেলা: রাষ্ট্রের সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে কী ধরনের সামাজিক উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন?

সি আর আবরার: প্রথমত প্রত্যেক নাগরিককে এটা বুঝতে হবে যে, তিনি এই রাষ্ট্রের একজন অংশীদার। রাষ্ট্রের অংশীদার হিসেবে নাগরিকরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। রাষ্ট্রের ভালোমন্দ নিয়ে তারা চিন্তা করবেন। রাষ্ট্রের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা প্রতিষ্ঠা পায়। যে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হবে, তার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বিচার বিভাগ পর্যন্ত যেভাবে ক্ষমতাশূন্য হয়েছিল, সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তার নিজ নিজ ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে দিতে হবে। শুধু তখনই আমরা রাষ্ট্রকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে পারব।

কালবেলা: নাগরিক সুরক্ষার জন্য নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন আছে কি?

সি আর আবরার: রাষ্ট্র সবসময় জনগণের ক্ষমতাকে ভয় করে। যদি আমরা রাষ্ট্রকে উপভোগ করতে চাই, তাহলে অবশ্যই রাষ্ট্রকে রুল অব ল মেইনটেইন করাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। নতুন আইন তৈরির থেকে বেশি প্রয়োজন বিদ্যমান যে আইন আছে সেটার প্রয়োগ। রাষ্ট্র নাগরিকের সুরক্ষা দিতে বাধ্য। রাষ্ট্র যখন সেটা করতে পারবে না তখন নাগরিকরা এর জবাবদিহি নেবে। নাগরিকদের আগে জেগে উঠতে হবে। দেশের পুরো সিস্টেমকে পচে-গলে এমন একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখান থেকে উত্থান সম্ভব নয়। তাই একটু কমপ্লিট ব্রেক দরকার। আমার মনে হয়, এখানে সংস্কার শব্দটি সঠিক না। আমি সংস্কার বলব না; বরং বলব এই রাষ্ট্রের পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন।

কালবেলা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে?

সি আর আবরার: আমি তাদের বলতে চাই, এই দেশটা কেন স্বাধীন হয়েছিল, সেটা আগে তারা চিন্তা করুন। কেন এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেটা আগে ভাবুন। তারপর জনগণের জন্য জনগণের কল্যাণে সিদ্ধান্ত নিন। সমতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন। এগুলো নিয়েই আপনাদের কর্মকাণ্ড চলুক। নাগরিকরা যে নাগরিক, সেই স্বীকৃতি রাষ্ট্রের প্রত্যেক মানুষ উপভোগ করুক। রাষ্ট্রে একজন মন্ত্রীর যে মর্যাদা, একজন সাধারণ নাগরিকেরও সেই একই মর্যাদা—এটা মানুষকে অনুভব করান। একজন প্রধানমন্ত্রীও সর্বেসর্বা না, তিনি ক্ষমতার উৎস না; বরং জনগণই ক্ষমতার উৎস—সেটা এদেশের মানুষকে অনুভব করান। রাষ্ট্র থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য যেগুলো কাঠামো হিসেবে কাজ করে, সেগুলোকে উপড়ে ফেলে এই রাষ্ট্রকে নতুন করে নির্মাণ করুন। রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক গড়ুন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মালয়েশিয়ার মেঘের রাজ্য ক্যামেরন হাইল্যান্ড

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাস

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন / নিজেদের স্বার্থে টিউলিপকে ব্যবহার করে লেবার পার্টি

সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে বর্তমান প্রেমিক ‍নিহত

ময়মনসিংহে হুমগুটি খেলায় জনতার ঢল

ম্যানচেস্টার-সিলেট-ঢাকা রুটে বিমান বন্ধের শঙ্কা, প্রবাসীদের ক্ষোভ

প্রধান উপদেষ্টার কাছে আজ সংস্কার প্রস্তাব জমা দেবে চার কমিশন

ফের মন্ত্রী হয়ে ফিরতে পারেন টিউলিপ!

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার চায়ের দোকানে

১০

দিনাজপুরে হিমেল বাতাসে কনকনে ঠান্ডা

১১

ববির লাইব্রেরি ও দুই হলের নাম পরিবর্তন করলেন শিক্ষার্থীরা

১২

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেপ্তার

১৩

সাবেক আইজি এম আজিজুল হক আর নেই 

১৪

টিউলিপের স্থলে নিয়োগ পেলেন এমা রেনল্ডস

১৫

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা

১৬

শৈত্যপ্রবাহের কবলে পঞ্চগড়, তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি

১৭

চবিতে ছাত্রশিবিরের নববর্ষ প্রকাশনা উৎসব

১৮

শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলা শিক্ষকের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ

১৯

১৫ জানুয়ারি : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X