আজীজুল হক বাঙালি কবি, সুবক্তা, সংগঠক ও শিক্ষক। তার জন্ম ১৯৩০ সালের ২ মার্চ, মাগুরা জেলায়। নিভৃতচারী এই কবি নিজস্ব সৃষ্টিশীলতার জগতে জীবনযাপন করতে পছন্দ করতেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন এবং দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পর ১৯৮৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন প্রতিভার স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল। বিশ শতকের পঞ্চাশ-ষাট দশকের এক প্রতিশ্রুতিশীল কাব্যশিল্পী। সমকালীন সমাজ ও রাষ্ট্র বিষয়ে ক্রমাগত দ্বন্দ্ব-দ্রোহ ও রক্তপাতের প্রেক্ষাপটে অনিবার্য মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে তিনি শিল্পিত করেছেন তার কবিতায়। আপন অস্তিত্বকে বাঁধ করে তা রক্ষার প্রগাঢ় আর্তনাদে মুখর থাকতে দেখা যায় তাকে। তিনি ছিলেন আপন ইতিহাস-ঐতিহ্যে আস্থাশীল, মানবতায় পূর্ণ, প্রগতিধর্মে দীক্ষিত ও জীবনমুখীনতায় উচ্চকণ্ঠ। তিনি তার সমাজভাবনা ও স্থির কাল-জ্ঞান থেকেই ১৯৫৭ সালে সিকান্দার আবু জাফর ও কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত সমকাল সাহিত্যপত্রের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝিনুক মুহূর্তে সূর্যকে। এরপর ‘বিনষ্টের চিৎকার’, ‘ঘুম ও সোনালী ঈগল’ প্রকাশিত হয়। তার কবিতায় একদিকে যেমন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সচেতন শিল্পদৃষ্টি প্রতিভাত, অন্যদিকে অস্তিত্ববোধ ও ভাবনাপ্রসূত অনুষঙ্গ অভিনব মর্যাদায় সমৃদ্ধ হয়েছে। ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। আজীজুল হক ২০০১ সালের ২৭ আগস্ট মারা যান।