রাজধানীর বহুল পরিচিত একটি স্কুলে চলতি বছরের প্রথম দিকে ১৬৯ শিশু ভর্তি, প্রায় তিন মাস ক্লাস, একাধিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, বেতন পরিশোধ এবং একপর্যায়ে কোমলমতি এ শিশুদের ভর্তি বাতিল! এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বিষয়টি আদালত অবধি পৌঁছানো; তবে ভর্তি পুনর্বহাল অথবা শিশুদের জন্য সন্তোষজনক কোনো সুরাহাই হয়নি। উপায়ান্তর না পেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন, মানববন্ধন করেছেন। ভর্তি ও ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত যে কারণেই হোক না কেন, সে প্রশ্ন তো থাকছেই। বড় প্রশ্ন হচ্ছে, পুরো প্রক্রিয়ায় শিশুদের অপরাধটা কোথায়? প্রতিষ্ঠানের সব নিয়মমাফিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যদি শিশুদের ভর্তিসহ যাবতীয় কার্য সম্পন্ন হয়, তাহলে শিশু কিংবা অভিভাবকদের দায় কতটুকু?
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে একটি মানববন্ধন করে শিশু শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে দাবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান নেন অভিভাবকরা। তারা জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষে রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয় তাদের সন্তানরা। তারা তিন মাস ক্লাস করার পর জানতে পারেন, বয়সসংক্রান্ত জটিলতায় ভর্তি বাতিল করা হয়েছে ১৬৯ শিক্ষার্থীর। অথচ স্কুলের নিয়মকানুন মেনে ভর্তি করা হয়েছে তাদের। এমনকি শিশুরা বিভিন্ন পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছে। বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। শিক্ষাবর্ষের মাঝখানে স্কুলের এমন সিদ্ধান্তে দিশাহারা তারা। তাই তারা সিদ্ধান্ত বাতিল করে ভর্তি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। শিশুরা প্ল্যাকার্ডে লিখেছে, সবার স্কুল আছে, আমাদের স্কুল কোথায়? আমরা স্কুলের ইউনিফর্ম পরতে চাই। এর আগে একই দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেন অভিভাবকরা। হাইকোর্টেও বহাল থাকে ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের ভর্তিবাণিজ্য ও দুর্নীতির শিকার তাদের সন্তানরা। দ্রুত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার ব্যবস্থা করতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
জানা যায়, ভিকারুননিসায় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা (নিজেদের নির্ধারিত) অনুসরণ না করে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি হয় ২০১৫ ও ’১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৬৯ শিশু শিক্ষার্থী। তবে তা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন অন্য দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক। স্কুল কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া না দিলে তারা গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত সূত্র অনুযায়ী, ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন স্কুলটিকে। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই ভর্তি বাতিল করতে চিঠি দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভর্তি বাতিল করা হয়। পরে ভর্তি বাতিলের বৈধতা নিয়ে ১৩৬ জন অভিভাবক আরেকটি রিট করেন। এ ছাড়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে গত ২৬ মে দুটি লিভ টু আপিল করা হয়। গত ১৪ জুলাই ভর্তি বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলও খারিজ হয়। এই হচ্ছে মোটামুটি ঘটনাপ্রবাহ।
আমরা আদালতের রায়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করছি না। শুধু এটুকু বলতে চাই, কোমলমতি এ শিশুদের মনে বিদ্যালাভের প্রারম্ভেই যেন বিদ্যাপীঠ সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা তৈরি না হয় এবং তাদের শিক্ষাজীবন থেকে একটি বছর যেন ঝরে না যায়, সংশ্লিষ্টরা দ্রুত তৎপর হবেন এবং সন্তোষজনক একটি সমাধানের পথ খুঁজবেন। পাশাপাশি এই শিশুদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় কী ধরনের অনিয়ম হয়েছে, কারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে—এটাই চাওয়া।