কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশব্যাপী উদ্ভূত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও ফের উত্তাল হয়ে উঠছে দেশ। গত শুক্রবারও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন, বিক্ষোভ, হামলা-পাল্টা হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবারও ছিল একই অবস্থা, অর্থাৎ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলনকারীরা তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল এই সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৫টা) নতুন করে কোনো নিহতের ঘটনা জানা যায়নি। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গণভবনে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টি সহজেই অনুমিত যে, দেশের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গলার্থে পরিস্থিতির যেন একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করা যায়—এ আহ্বান সে উদ্দেশ্যেই। এটি ইতিবাচক।
শনিবার গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।’ এর আগে অর্থাৎ শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। এ উদ্দেশ্যে সরকারের তিন নেতাকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার দায়িত্বও দেওয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতা হলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও মাহবুবউল-আলম হানিফ। তবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও আলোচনায় থাকার অনুরোধ জানানো হয়। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে আলোচনার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘এখন আর আলোচনার সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে।’ যদিও তখনো সমন্বয়কদের সঙ্গে এ তিন নেতার যোগাযোগ হয়নি।
জুলাইয়ে, বিশেষ করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশব্যাপী একটি বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সপ্তাহব্যাপী সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগে নাশকতাকারীরা যে তাণ্ডব চালায়, তা নজিরবিহীন। পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রের সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে একপর্যায়ে দেশে সেনা মোতায়েন করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ, যা দিনভর শিথিল অবস্থায় এখনো বলবৎ। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আবার উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে দেশ। এরই মধ্যে শুক্রবার একজন পুলিশ সদস্যসহ দুজন নিহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা শুক্রবার খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে। সে অমুযায়ী, তারা শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং আজ থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তবে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সারা না দিয়ে তারা এক দফা, অর্থাৎ সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।
আমরা মনে করি, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বসার আহ্বানকে স্বাগত জানানো উচিত বলে প্রতিপন্ন হচ্ছে। কেননা আন্দোলনকারীদের যে দাবি ছিল, তা এরই মধ্যে পূরণ হয়েছে। নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তিসহ তাদের সব দাবি পূরণের পথ যদি আলাপ-আলোচনা হয়, ক্ষতি কী? চলমান আন্দোলনে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক কর্মকাণ্ড, শিক্ষাদীক্ষাসহ সব অঙ্গনে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, যা চলতে থাকলে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও দেশের মানুষ। আমাদের প্রত্যাশা, সংঘাত নয়, আলাপ-আলোচনাই হবে সংকট সমাধানের পথ। দ্রুত এ অনিশ্চিত ও স্থবির অবস্থা কাটুক এবং সর্বত্র শান্তি ফিরুক।