এম কে রহমান
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫৮ এএম
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৩৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কোটা আন্দোলন এবং একটি দামি রায়

কোটা আন্দোলন এবং একটি দামি রায়

পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, অতি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের কর্তৃক সূচিত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এবং সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ ছাত্রদের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে কোটা বাতিলসহ বৈষম্য নিরোধ ও সমতা আনয়নকল্পে একটি ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এবং এটা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে কোটা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু আরও দাবি উত্থাপিত হয়েছে।

দীর্ঘ সংগ্রাম ও পরবর্তীকালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। জাতির পিতার নির্দেশে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রবর্তনের পূর্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নীতি প্রণয়ন করা হয়। সংস্থাপন বিভাগ তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইংরেজি ০৫/০৯/১৯৭২ তারিখে একটি সার্কুলার জারি করে। তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখা হয়। পরে ১৭/০৩/১৯৯৭ ইং তারিখে আরেকটি সার্কুলার মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষিত ৩০ শতাংশ কোটা তাদের পুত্র-কন্যাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করা হয়। এভাবে প্রজাতন্ত্রের চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের কোটা, জেলা কোটা, আদিবাসী কোটা, অনগ্রসর এলাকার কোটা সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোট নির্ধারণ করা হয় এবং সেভাবে চলছিল।

পরবর্তীকালে ১৬/০১/২০১১ তারিখে আরেক স্মারকবলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা তাদের নাতি-নাতনিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালে চাকরিতে কোটা বাতিলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। সেই প্রেক্ষাপটে সরকার ০৪/১০/২০১৮ তারিখের স্মারকবলে প্রজাতন্ত্রের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার নিমিত্তে। ওই ০৪/১০/২০১৮ তারিখের স্মারকের আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম নামে একটি অনিবন্ধনকৃত সংগঠন হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নং-৬০৬৩/২০২১ইং দায়ের করে।

উল্লেখ্য যে, এই রিট পিটিশনের আগেও একাধিক রিট পিটিশন হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে হতে নিষ্পত্তি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের ব্যাপারে। সর্বশেষ রিট পিটিশন নং ২৩৫/২০২২ হাইকোর্ট বিভাগ ০৫/১২/২০২২ইং তারিখের রায়ের মাধ্যমে ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেন এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়টি বহাল রাখেন।

রিট পিটিশন নং-৬০৬৩/২০২১ শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ ০৫/০৬/২০২৪ তারিখের রায়ের মাধ্যমে কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ০৪/১০/২০১৮ তারিখের স্মারক অবৈধ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের কোটা বহাল রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন, রিট পিটিশন নং ২৩৫/২০১২-তে প্রদত্ত ০৫/১২/২০১২ইং তারিখের রায়ের নির্দেশনার আলোকে যা আপিল বিভাগ কর্তৃক বহাল রাখা হয়েছে। ১ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে সারা দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয় এবং কোটা বাতিলের জন্য ৪ জুলাই পর্যন্ত চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। পরে ২ জুলাই শাহবাগে এক ঘণ্টা অবরোধসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ২০ মিনিট অবরোধ করা হয়, ৩ জুলাই আবারও শাহবাগ মোড়ে ছাত্ররা অবরোধ করাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ ও অবরোধ করে, ৪ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করায় ৫ ও ৬ জুলাই আবারও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ও বিভিন্ন সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা, ৭ জুলাই বাংলা ব্লকেড পালন, ৮ জুলাই ঢাকার ১১ স্থানে অবরোধসহ ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভসহ রেলপথ ও সড়কপথ অবরোধ করা হয়, ৯ জুলাই সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে সকাল-সন্ধ্যা, ১০ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের ০৫/০৬/২০২৪ তারিখের রায়ের ওপর আপিল বিভাগ পক্ষগণকে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করেন এবং ৭ আগস্ট লিভ পিটিশন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই স্থিতাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জুলাই পুলিশ বাধা দিলেও ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে, ১২ জুলাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, ১৩ জুলাই কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং ওইদিনই হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-৬০৬৩/২০২১-তে প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়, ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পেশ পূর্বক ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, ১৬ জুলাই সরকারপক্ষে আপিল বিভাগে লিভ পিটিশন দাখিল, ১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ও ছয়জন নিহতের ঘটনা ঘটে এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করাসহ ১৭ জুলাই আবারও আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিক্ষোভসহ অবরোধ ও নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা এবং কফিন মিছিলের আয়োজন করা হয়। ১৮ জুলাই সারা দেশে সর্বাত্মক অবরোধ হয় এবং দেশব্যাপী সংঘর্ষ ও গুলি হলে ২৭ জন নিরীহ আন্দোলনকারী নিহত হলে সরকার আলোচনার প্রস্তাব দিলে ছাত্র আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮ জুলাই বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল আইনমন্ত্রীর নির্দেশ (শব্দচয়ন ঠিক হয়নি) মোতাবেক সরকারের পক্ষে আপিল বিভাগের বিশেষ চেম্বার আদালতে ফুল কোর্টে লিভ পিটিশন শুনানির জন্য আবেদন করেন এবং চেম্বার আদালত ২১ জুলাই লিভ পিটিশন দুটি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। সেই মোতাবেক ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগ প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষে কানায় কানায় পূর্ণ তিলধারণের ঠাঁই নাই অবস্থায় আসন গ্রহণ করেন। কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালতে এ মামলায় বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করায় প্রধান বিচারপতি তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি শুনানির জন্য ডাকলে অ্যাটর্নি জেনারেল প্রায় দেড় ঘণ্টা তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। রিটকারীর পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে সিনিয়র আইনজীবীরা যারা বক্তব্য দিয়েছেন, তারা সবাই অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য সমর্থন করেন যে, রিট পিটিশনটি আদৌ লক্ষণীয় নয়; এই মর্মে যেহেতু সরকারের পলিসি ম্যাটার রিট পিটিশনটির বিষয়বস্তু। শুনানির সময় দু-একবার জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবীরা একটু উচ্চৈঃস্বরে কথা বলেন, কিন্তু প্রধান বিচারপতি আদালতে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ফুল কমান্ড ছিলেন। এভাবে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে শুনানির কার্যক্রম শেষ করে আবারও ১টা ১৫ মিনিটে এজলাস কক্ষে আসবেন বলে ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিসহ আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। যখন কানায় কানায় পূর্ণ আদালত কক্ষে অবস্থারত আইনজীবী ও সাংবাদিকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন তখন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্য আসন গ্রহণ করেন। তখন দুপুর ১টা ২৯ মিনিট। প্রধান বিচারপতি তখন জানতে চান কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে কেউ আছেন কি না। কেউ কোনো উত্তর না দেওয়ায় প্রধান বিচারপতি একটি প্রাণবন্ত বক্তব্য প্রদান করেন উপস্থিত সবার উদ্দেশে এরপর বাংলায় একটি সুলিখিত আদেশ প্রদানের মাধ্যমে সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার নিশ্চিতকল্পে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা, ১ শতাংশ নৃগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য নির্ধারণ করে লিভ পিটিশনটির নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন। আদেশ সমাপ্তিতে প্রধান বিচারপতি আশা প্রকাশ করেন যে, ছাত্ররা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে নিজ নিজ ক্লাসে ফিরে যাবেন এবং আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন। সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে কোটা সমস্যার নিষ্পত্তি হয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু এর মধ্যে বহু প্রাণ চলে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনার, তাই এ রায়টি অত্যন্ত দামি।

এখানে উল্লেখ্য যে, কোটা আন্দোলনের প্রথম দিক থেকে সরকারের কতিপয় মন্ত্রী বিশেষ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী যিনি আওয়ামী লীগের তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত আছেন এবং পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ ওবায়দুল কাদের ও বিচক্ষণ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলে আসছিলেন, সরকার নীতিগতভাবে কোটা সংস্কারের পক্ষে এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে চায় এবং হয়তো তারা বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করেছেন কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি। পরবর্তীকালে তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে বলেন। ছাত্রদের আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলছিল সারা দেশে এবং হতাহতের ঘটনা প্রতিদিন ঘটছিল। আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় আঘাত করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হতাহতদের ঘটনা বাড়তে থাকে এবং সংকট উত্তরণে বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং অদ্যাবধি সেনাবাহিনী মাঠে থেকে পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় দেশব্যাপী শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে লিপ্ত আছে।

আমার মনে হয়, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবির গুরুত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল ও সরকারি দল সময়মতো অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। পরপর চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। কিন্তু এ সংকটকালে কোনো দলীয় নেতা কিংবা এমপিদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। বরং শোনা যায় অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। আদালতের শুনানির পদক্ষেপ সরকার আরও আগেই নিতে পারত। না করে বরং সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তির অপেক্ষা না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কোটা সংস্কার আগেই নিষ্পত্তি করা যেত, তাতে এত জানমালের ক্ষতি হতো না। ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে নামানো ঠিক হয়নি। রাষ্ট্রপতিও উদ্যোগ নিতে পারতেন। সমস্যা সমাধানে কথাসাহিত্যিক ও লেখক ইমদাদুল হক মিলন লিখেছেন—‘জটিলতা নিরসনে আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা কি একান্ত জরুরি?’ তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে পারতেন। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নামে সাধারণ শিক্ষার্থীর কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ যাবৎ ছাত্র, সাধারণ নিরীহ মানুষ, সাংবাদিক, পুলিশসহ দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষ দুই শতাধিক নিহত হয়েছেন (পত্রিকার সূত্রমতে)। ১৯৪৭ সাল থেকে (মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় বাদে) কোনো আন্দোলনে এত মানুষ নিহত হয়নি। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারবর্গকে পর্যাপ্ত সাহায্য এবং যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। অবশ্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কিছু নিহতের পরিবারকে সাহায্য করেছেন, আহতদের দেখতে গিয়েছেন এবং যাবতীয় চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন ও অন্যদের করার অঙ্গীকার করেছেন। আন্দোলনকারী ছাত্রদের যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব, কোটা আন্দোলনের ছত্রছায়ায় যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদেরও বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। সামগ্রিক বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে সব হত্যাকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের বিষয়টি একটি শক্তিশালী কমপক্ষে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করে তদন্ত করতে হবে।

লেখক: সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল।

ইমেইল: [email protected]

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, ভাতিজার হাতে চাচার মৃত্যু

সুপার ওভারে ইংল্যান্ডকে হারাল বাংলাদেশ

ছাগলকাণ্ড : মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ কারাগারে

জয়ী না হলে দোষী সাব্যস্ত হতেন ট্রাম্প

পুলিশ সদস্যদের ওপর অটোরিকশাচালকদের হামলা, আহত ৪

খেলাধুলাকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে চাই : আমিনুল হক 

টাকার বিনিময়ে পুত্রশোক ভোলা যায় না : শহীদ আশরাফুলের মা

এক উপজেলায় বছরে ৬০ জনের অপমৃত্যু

সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সংসদ নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা

দ্রুত সেরে উঠুক আশিক রহমান, কামনা রাষ্ট্রদূত মুশফিকের 

১০

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ সুবিচার নিশ্চিত করা : আসিফ নজরুল

১১

ধার-দেনা করে আলু চাষ, লাভের বদলে কাঁধে ঋণের চাপ

১২

যে শঙ্কায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন টিউলিপ

১৩

তিন কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ৫

১৪

দাবানলে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মক ঝুঁকিতে

১৫

সরাইলে বিএনপির নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল

১৬

মানিকগঞ্জে নিজ বাড়িতে নারীকে গলা কেটে হত্যা 

১৭

ভৈরবে আ.লীগ কার্যালয় থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

১৮

আন্দোলন-ধর্মঘটে ‘কার্যত অচল’ রাবি, ব্যাহত শিক্ষার পরিবেশ

১৯

রাজবাড়ীতে জমি বন্ধক নিয়ে গাঁজা চাষ, চাষি আটক

২০
X