গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন করে ‘একদফা’র ডাক দিয়েছেন। সরকার পতনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। যখন ঢাকাসহ সারা দেশের পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করেছে, ঠিক সে সময়েই মির্জা ফখরুলের এই আন্দোলনের ডাক এক নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করল। কোটা সংস্কার আন্দোলন যে আসলে শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল না, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। বিএনপি-জামায়াতের আসল উদ্দেশ্য বেরিয়ে এলো। প্রমাণিত হলো, ১৭ জুলাই থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে যে নাশকতা এবং বর্বর নৃশংসতা চালানো হয়েছিল, তার মূল লক্ষ্য ছিল সরকার হটানো। এটি ছিল আসলে একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা। বিএনপি-জামায়াত জোট যেমন এই ‘ব্লু-প্রিন্টে’র সঙ্গে জড়িত, তেমনি এই নীলনকশার অন্যতম বাস্তবায়নকারী হলো দেশের সুশীল সমাজের একাংশ। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে দেশ থেকে পলাতক এবং দণ্ডিত ব্যক্তিরাও এই ষড়যন্ত্রের অংশ। সরকারবিরোধী সব শক্তি এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে, একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য। লক্ষ্যটি হলো, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা হয়েছে। নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে জনগণকে করা হয়েছে বিভ্রান্ত। বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যে বিপুল উন্নয়নযজ্ঞ সেগুলো ধ্বংস করার এক বীভৎস পৈশাচিকতা পেয়ে বসেছিল ষড়যন্ত্রকারীদের। ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি।
শুধু ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের ক্যাডার নয়; পেশাদার, প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের ভাড়া করা হয়েছিল সারা দেশে তাণ্ডব সৃষ্টির জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সহিংস আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। সরকার সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। সরকার হটেনি, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি। গুজব ছড়ানো হয়েছিল; কিন্তু সেই গুজবের ফলেও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারেনি ষড়যন্ত্রকারীরা। সরকারকে কোণঠাসা করলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং অখণ্ডতার প্রতীক সশস্ত্র বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে সাহসিকতার সঙ্গে। তবে, সেনা মোতায়েনের আগে এই আন্দোলন অথবা নাশকতা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। অনেকেই সরকার পতনের ‘খোয়াব’ দেখেছিলেন। কিন্তু আন্দোলন ছিল নেতৃত্বহীন। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও আদর্শহীন। তাই এই হঠকারিতা খুঁজে পায়নি গন্তব্য।
মধ্য জুলাইয়ের ঝটিকা সন্ত্রাসী আন্দোলন দেখে জাতির পিতার একটি উক্তি মনে পড়ল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে আন্দোলন সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যারা মনে করেন রাতের অন্ধকারে গুলি করে কিংবা রেললাইন তোলে, টেররিজম করে বিপ্লব হয় তারা কোথায় আছেন জানি না। এই পন্থা বহু পুরোনো পন্থা। এই পন্থায় দুনিয়ায় কোনোদিন কোনো কাজে লাগেনি। এই পন্থা দিয়ে দেশের মানুষের মঙ্গল করা যায় না। একটা রাস্তা ভেঙে দিয়ে, একজন লোককে অন্ধকারে হত্যা করে শুধু মানুষকে কষ্ট দেওয়া যায়। এই টেররিজম দিয়ে বিপ্লব হয় নাই, হতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জনগণকে ছাড়া, জনগণকে সংঘবদ্ধ না করে, জনগণকে আন্দোলনমুখী না করে এবং পরিষ্কার আদর্শ সামনে না রেখে কোনোরকম গণআন্দোলন হতে পারে না।’
সাম্প্রতিক সহিংসতা জাতির পিতার উক্তির মর্মার্থ উপলব্ধির সুযোগ সৃষ্টি করল আরেকবার। তিনি রাজনীতিতে একজন ঋদ্ধ পুরুষ। অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামের একজন অবিসংবাদিত রূপকার। এর মাধ্যমে শুধু তৎকালীন বিরোধী দলকেই সমালোচনা করেননি; বরং আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো প্রয়োজন, তার কথাও তিনি বলেছেন। এবারের আন্দোলন যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি, তাহলে দেখব এই আন্দোলনে সরকারকে উৎখাত করা ছাড়া কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। জনগণের কোনো দাবি নিয়ে এই নাশকতা নয়। জনগণকে স্বস্তি দিতে নয়; বরং নাগরিকদের জিম্মি করে ক্ষমতার পালা বদলের চেষ্টা হয়েছে। দেশকে এক অনিশ্চয়তার কৃষ্ণগহ্বরে প্রবেশ করাতে চেয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। কিন্তু যে কোনো আন্দোলনে একটি নেতৃত্ব লাগে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতবার আন্দোলন করে সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো হয়েছে, প্রতিটি আন্দোলনে নেতৃত্ব ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছে জাতির পিতার নেতৃত্বে। ৯০-এর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। ’৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বেগম জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতির নেতৃত্বেই আন্দোলন করে বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হওয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত অনির্বাচিত সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন আজকের প্রধানমন্ত্রী। জনগণ জানতেন কে তাদের নেতা। সরকার বিদায় নিলে কে দেশ চালাবেন। জনগণের কী লাভ হবে, তা ছিল পরিষ্কার। কিন্তু এ আন্দোলনের ভৌতিক নেতৃত্ব বলতে পারেনি, কেন তারা সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে চায়। জনগণেরই বা তাতে কী লাভ। শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন তাহলে কে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেবেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি ষড়যন্ত্রকারীরা। তাদের সামনে কোনো নেতা ছিল না। নেতৃত্ববিহীন আন্দোলন যে শেষ পর্যন্ত সফল হয় না; তার বড় প্রমাণ ১৭ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সহিংসতা এবং তাণ্ডব। ২০১৩, ২০১৪ এবং গত বছর এভাবেই ‘একদফা’ আন্দোলনের মৃত্যু ঘটেছে।
সরকার হটানোর জন্য বৈধ পন্থা হলো নির্বাচন, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল। নির্বাচন বানচালের জন্য গত বছরের ২০ অক্টোবর একই কায়দায় তাণ্ডব চালায়। তাদের আন্দোলন ও নির্বাচন বর্জন শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। বিএনপি-জামায়াতের বয়কট সত্ত্বেও নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। অনেক নির্বাচনী এলাকায় উৎসবমুখর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের পরপরই বর্তমান সরকারকে বৈধতা দিয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ। তখন থেকেই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। আন্দোলন করে সরকারকে হটানোর মতো যুক্তিসংগত কারণ বিএনপি-জামায়াতের নেই। বিএনপির আন্দোলন গতিহীন, দিশাহীন। তারা কখনো খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়, কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে। আবার কখনো একদফা আন্দোলন করে। তারা আসলে কোন দাবিতে আন্দোলন করছে সেটি জনগণের কাছে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের আরেকটি বড় ব্যর্থতার দিক হলো, তারা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের চেয়ে কি ভালো করবে বা আওয়ামী লীগের চেয়ে কেন তারা দক্ষ এটি জনগণের কাছে স্পষ্ট করতে পারেনি। জনগণ তাই গত ১৫ বছরে বিএনপির আন্দোলনে খুব একটা সাড়া দেয়নি। দলটির অবস্থা হয়েছে ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে পড়া কৃষক ‘গণি মিয়ার’ মতো। সেই গণি মিয়ার গল্প আমাদের অনেকেরই জানা। গণি মিয়ার নিজের জমি নেই। সে অন্যের জমি চাষ করে। সেরকম বিএনপিও ক্ষমতার পালাবদলের জন্য একেকবার একেক শক্তির ওপর ভর করে। গত বছর তারা আশা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাবে। এবার তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ওপর নির্ভর করেছে। আমার ধারণা, এই সহিংসতায় বিএনপি ছিল জামায়াত-শিবিরের ‘বি টিম’। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে নিজেদের মাথা ঢুকিয়ে, সন্ত্রাসী দিয়ে সরকারকে হটাতে গিয়ে বিএনপি রাজনীতিতে তাদের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করেছে। এর ফলে বিএনপি আরও অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। আরও নির্ভরশীল হবে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াতের ওপর।
অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করে তারা যতটুকু ঘৃণ্য, যতটুকু অপরাধী, নাশকতা করে, মানুষকে জিম্মি করে ক্ষমতা বদলের ষড়যন্ত্রও ঠিক একরকম অপরাধ এবং ঘৃণ্য কাজ। যারা সরকার হটানোর জন্য এই নৃশংসতার আশ্রয় নিয়েছে তারা অবশ্যই সংবিধানের ৭(ক) লঙ্ঘন করেছে বলে আমি মনে করি। সংবিধানের ৭(ক)-তে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।’
আমি আশা করি, যারা এই নাশকতা এবং তাণ্ডব করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ উত্থাপন করবে এবং এই অপরাধে তাদের বিচারের আওতায় আনবে।
এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় ইস্যু কোটা সংস্কার। সরকার কখনো বলেনি কোটা সংস্কার তারা করবে না, কোটা সংস্কারে তারা রাজি নয়। ২০১৮ সালেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সরকার সম্মান দেখিয়েছিল। সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করেছিল। কোটা নিয়ে এবারের সংকট সরকার সৃষ্ট নয়। আইনি লড়াই থেকে সৃষ্টি। আন্দোলনের গতি প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন ধাপে আন্দোলনকে নানাভাবে অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হয়েছে। সেজন্যই ‘রাজাকার’ ইস্যুটি সামনে আনা হয়েছিল। অথচ প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলেননি। একদফার কোটা আন্দোলন ৮ দফায় রূপ নেয়। টার্গেট করা হয় প্রধানমন্ত্রীকে। শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চেপে লক্ষ্য অর্জনের জন্য পেশাদার সন্ত্রাসীদের নামানো হয় মাঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেকে অন্তত তিন থেকে পাঁচ লাখ লোক আনা হয়। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বা গন্তব্য একরকম আর বিএনপি-জামায়াত, বিদেশে পলাতক দুর্নীতিবাজ এবং সুশীলদের দুরভিসন্ধি এবং লক্ষ্য ছিল অন্যরকম। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অধিকাংশ কোমলমতি শিক্ষার্থী চেয়েছিল সরকারি চাকরিতে মেধার প্রাধান্য। সেটি অর্জিতও হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত এবং সুশীলদের ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো। সেজন্য তারা এই সন্ত্রাসকে আন্দোলন বলতে চাইছে। একটি বিষয় নিষ্পত্তি হওয়ার পর সেটাকে টেনেহিঁচড়ে লম্বা করতে চাইছে।
বিএনপি-জামায়াত সরকার হটাতে চায়। কিন্তু সরকার হটানোর পর তারা কোন ধরনের সরকার গঠন করবে? এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। এটা কি হবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অনির্বাচিত সরকার? নাকি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ভাইসরয় করে যুক্তরাষ্ট্রের ঔপনিবেশিক শাসন? কারণ ড. ইউনূস তার বিবৃতিতে তেমনটি ইঙ্গিত করেন। একজন বাংলাদেশের নাগরিক কীভাবে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ চান? আমরা জেনেছি, তারা (ষড়যন্ত্রকারী) টেলিভিশন দখল করে ঘোষণা দিতে চেয়েছিল, বিমানবন্দর দখল করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সব বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল, সংসদ ভবন দখল, গণভবনে হামলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু এসবের পর কী হবে? বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্র হবে না গৃহযুদ্ধ শুরু হবে? সেই প্রশ্নের উত্তর পায়নি জনগণ। সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর ছাত্রশিবির তাদের স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিয়েছে অনেক স্থানে। কিন্তু তারা জানে না বর্তমানে সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করলে তা সর্বোচ্চ দণ্ডনীয় অপরাধ। তা ছাড়া আমাদের সেনাবাহিনী এখন যেমন প্রশিক্ষিত এবং আন্তর্জাতিক মানের। তাদের পেশাদারিত্বের উৎকর্ষতা এবং দক্ষতা এত বেশি যে, তারা এ ধরনের অপতৎপরতার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবে না। তাদের পেশাদারিত্ব বিসর্জন দেবে না কোনো অবস্থাতেই। আর সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। এখানে ষড়যন্ত্রকারীরা সবচেয়ে বড় হোঁচট খায়।
ড. ইউনূসের তৎপরতা দেখে মনে হয়, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মামলা থেকে বাঁচতে এবার তিনি ক্ষমতা গ্রহণে মরিয়া ছিলেন। বিদেশিরা তাকে সিংহাসনে বসাবে এই আশায় বিবৃতি দিতে সময় নেননি মোটেও। এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন এই সুদ ব্যবসায়ী। তিনিও মামলা থেকে বাঁচবেন, সরকারও বিদায় নেবে। আবার একটি এক এগারোর স্বপ্নে তিনি খানিকটা হলেও পুলকিত হয়েছিলেন বলেই তার বিবৃতি দেখে মনে হয়। কিন্তু ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সুশীলরা ২০০৭ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রমাণ করেছিল তারা কত অযোগ্য এবং অথর্ব। দেশ পরিচালনার ন্যূনতম যোগ্যতা তাদের নেই। আর থাকে বিএনপি। কিন্তু এই আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপির সরাসরি ক্ষমতায় আসার কোনো পথ নেই। একটি রাজনৈতিক দল কি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারে? তার পরও এই আন্দোলনে (ষড়যন্ত্রে) জয়ী হলে একটি সাজানো নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা কি এখন ক্ষমতায় আসতে চায়? এ মুহূর্তে যদি বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতা আসে সেক্ষেত্রে কে সরকারপ্রধান হবে? খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ এবং দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত। নির্বাচনের অযোগ্য। তারেক জিয়ার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং অর্থ পাচার মামলায় দণ্ডিত, নির্বাচনের অযোগ্য, বিদেশে পলাতক। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ। নিজেই তিনি বিএনপির নেতৃত্ব ছাড়তে চান। বিএনপিতে কি একজন ব্যক্তি আছেন যিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য এবং জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য? তাকে কি তারেক জিয়া মানবেন? অন্য কোনো রাজনৈতিক দলেও কি এরকম কোনো ব্যক্তি আছেন, যিনি শেখ হাসিনার বিকল্প? বাংলাদেশের বাস্তবতা এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সমার্থক। শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ যেন মাঝিবিহীন এক নৌকা।
আর এ কারণেই দেশের মানুষ শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগের অনেক দোষ আছে। আওয়ামী লীগের ভেতর সমস্যা রয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার পক্ষে এদেশের মানুষের কোনো ধরনের সংশয় নেই, দ্বিধা নেই। তিনি এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। বিরোধী দলের মূল ভুল এখানেই। তারা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিকে টার্গেট করেছে, তাকে হটানোর চেষ্টা করেছে একটি ছোট্ট আন্দোলনকে ইস্যু করে। কিন্তু শেখ হাসিনা যতবার আক্রান্ত হয়েছেন, ততবারই তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিপুল ভালোবাসায় ষড়যন্ত্রকারীদের তিনি পরাস্ত করেছেন।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল: [email protected]