টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকায় এডিস মশার বিস্তার লাভ ও ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কার কথা এ মৌসুমের আগে থেকেই বারবার বলা হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতানুগতিক প্রস্তুতি নিঃসন্দেহে হতাশার।
সোমবার কালবেলায় প্রকাশিত ‘বৃষ্টিতে বাড়ছে এডিসের বিস্তার’ শীর্ষক শিরোনামে এ বছরও ডেঙ্গু কী রকমের ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে এবং এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের পর্যাপ্ত ও কার্যকর প্রস্তুতির অভাবসহ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, এবার এডিস মশার উপদ্রবের সঙ্গে ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝুঁকি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশার প্রজনন ঘটবে দ্রুতগতিতে। ফলে এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এ ছাড়া এডিস মশা নিধনে বিকল্প পদ্ধতি ভাবারও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। এর প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই এ সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়। তবে এ মৌসুম শুরুর আগেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রভাব। ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে এবার বেশি। অথচ দুই সিটি করপোরেশনে প্রতি বছর শতকোটি টাকা ব্যয় হয় নগরবাসীকে মশার কবল থেকে মুক্তি দিতে। সে অনুযায়ী এ বিষয়ক কার্যক্রম ও উদ্যোগের কমতি নেই। কিন্তু কাজের কাজ হয় না কিছুই।
মশাবাহিত এ রোগ সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ছড়িয়ে থাকলেও এখন আর নির্দিষ্ট সময়ে সীমাবদ্ধ নেই। এ ছাড়া একসময় শুধু ঢাকাসহ কয়েকটি সিটিতে এটি সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এ মশা ও রোগের বিস্তার সারা দেশে। এরপরও আমরা দেখতে পাই, গতানুগতিক পদ্ধতিতে মশক নিধনের নানা আয়োজন, যার বেশিরভাগই ‘লোকদেখানো’ বলা চলে; যার একাধিক উদ্যোগ হয়েছে সমালোচিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের শিকার। তবে মশা বাগে আসেনি। উল্টো প্রতি বাজেটে যুক্ত হয় বাড়তি ব্যয়। জনগণের টাকার এ শ্রাদ্ধ গ্রহণযোগ্য নয়।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতাসহ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশের এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সফলতার কথা অজানা নয়। গত ২৩ বছরে আমরা এ রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। শুধু তাই নয়, দিন যত গড়িয়েছে, রোগটির প্রকোপ ও বিস্তার বেড়েছে এবং মৃত্যুসহ খারাপ পরিণতির শিকার হতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে। গত ২২ বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সর্বশেষ এক বছরে তার চেয়ে বেশি মানুষ এ রোগে মারা গেছে। পরিতাপের বিষয়, ডেঙ্গু পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান খারাপ দিকের এ যাত্রাকে থামানোর এবারও নেই যথাযথ প্রস্তুতি। এবারও ডেঙ্গু চোখ রাঙাচ্ছে। গত মে মাসেও কালবেলার একাধিক প্রতিবেদন ও মন্তব্য প্রতিবেদনসহ গণমাধ্যমগুলোয় এ শঙ্কার কথা সবিস্তারে তুলে ধরা হয়। এরপরও যদি প্রস্তুতির অভাব পরিলক্ষিত হয়, তা দুঃখজনক। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার অভাব ও উদাসীনতাই প্রতীয়মান হয়।
আমরা মনে করি, চলতি মৌসুমে এডিস মশা ও ডেঙ্গুর বিস্তারে যে ভয়াবহ রূপের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা যেন বাস্তব না হয় সেটা নিশ্চিত করতে এ স্বল্প সময়ের মধ্যেই সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ তৎপর ও উদ্যোগী হওয়া জরুরি। পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন ও দায়িত্ববান হওয়া চাই। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের ক্ষেত্রে যেসব দেশ ডেঙ্গু মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে, বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশী দেশের কলকাতায় যে মডেল প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা অনুসরণ করা যায় কি না, তা ভেবে দেখা উচিত। কেননা কলকাতার সঙ্গে আমাদের রয়েছে আবহাওয়াসহ বিভিন্ন দিকের মিল।