সৈয়দ বোরহান কবীর
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০২:৫০ এএম
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কেরানি হওয়ার আন্দোলনে তরুণরা

কেরানি হওয়ার আন্দোলনে তরুণরা

বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এখন আন্দোলনে। গত ১ জুলাই থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলন এখন ঢাকা থেকে সারা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রধান দাবি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার। কোটা সংস্কার করা উচিত কি না বা কোটা নিয়ে বর্তমানে যে সংকট, তার সমাধান কে করবে, তা নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত। বর্তমান কোটাব্যবস্থা ভালো না মন্দ, তা নিয়েও বিতর্ক আছে। কোটা বিতর্কে বুঁদ হয়ে আছে দেশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, বন্যাদুর্গত মানুষের আহাজারি—সবকিছু ছাপিয়ে কোটা সংস্কার এখন জাতির সামনে সবচেয়ে বড় ইস্যু।

প্রচলিত যে কোটা পদ্ধতি আছে, তার বিজ্ঞানসম্মত এবং যুক্তিসংগত পরিবর্তনের পক্ষে সবাই। হাইকোর্ট কোটাসংক্রান্ত মামলায় যে আংশিক রায় প্রকাশ করেছেন, তাতেও সরকার চাইলে কোটা সংস্কার করতে পারবে বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে’। আদালত, সংসদ নাকি রাজপথ? এ নিয়েও চলছে এক ধরনের বাহাস। এখন সরকারি চাকরিতে যেভাবে কোটা বিন্যাস আছে, তার পরিবর্তন প্রয়োজন। আবার একেবারে কোটা বাতিল অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু সব ছাপিয়ে আমার কাছে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় হয়ে এসেছে, তা হলো আমাদের তরুণ প্রজন্ম কি শুধু একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন দেখে? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য কি শুধু একটি সরকারি চাকরি? তারুণ্যের স্বপ্নের সীমানা কি এত সংকীর্ণ? এই প্রশ্নগুলো আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আমরা আজকে সম্মান দিয়ে যাকে বলি আমলাতন্ত্র, আদতে তা ‘কেরানিতন্ত্র’। সরকারি চাকরি যারা করেন, তারা আসলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। জনগণের সেবক বা চাকর। কেরানি হওয়ার জন্য আমাদের তরুণরা এখন যে যুদ্ধ করছে, এটি আমার কাছে অবিশ্বাস্য, গ্লানিকর এবং ঘোরতর শঙ্কার।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস নতুন নয়। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা ২০০৭ সালে অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র আন্দোলন। সব আন্দোলনেই নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ কারণেই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা মহিমায় মহিমান্বিত। আন্দোলন, সংগ্রাম এবং মুক্ত ভাবনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়ে উঠেছে আগামীর নেতৃত্ব। যে কোনো সংকটে পথ দেখিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত। আর তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করেন, তখন আমরা সেদিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকি। এ আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করি। এই আন্দোলন জাতিকে পথ দেখাবে—এমনটা প্রত্যাশা করি।

এবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি কী ধরনের? এ আন্দোলন কি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণের আন্দোলন? এ আন্দোলন কি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন? এ আন্দোলন কি বাংলাদেশে লুণ্ঠন, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে তারুণ্যের প্রতিবাদ? এ আন্দোলন কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের দ্রোহ? এ আন্দোলন কি শিক্ষার বৈষম্য বিলোপের লড়াই? এসব কিছুই নয়। এটি একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা। গোটা দেশের শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফায়দা লোটার এক আত্মঘাতী কৌশল।

আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছাত্র আন্দোলন দেখছি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক আন্দোলন সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছেন গাজায় ইসরায়েলি বর্বর হত্যাকাণ্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলনের ঢেউ বাংলাদেশে লাগেনি। গাজার গণহত্যার প্রতিবাদে যখন বিশ্বের তাবৎ দেশের মেধাবী তরুণরা সোচ্চার, তখন আমাদের তরুণরা বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কসরতে ব্যস্ত। বিসিএস গাইড বুকে বুঁদ হয়েছিলেন তারা। তাদের এই আত্মকেন্দ্রিকতা এবং সমাজবিমুখতা হতাশার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন পথ দেখান না, সমাজ বদলান না, কেরানি হতে চান। সরকারি চাকরি চান। এ আন্দোলনকে একটি সামগ্রিক সমাজ পরিবর্তন, দেশ, রাষ্ট্র বা জাতির কল্যাণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এই আন্দোলন হতশ্রী, মেধাহীন সৃজনশীলতা বিবর্জিত তারুণ্যের প্রতিরূপ। দৈন্য তারুণ্যের মনোজগতের দারিদ্র্যের চিত্র এ আন্দোলন।

বিশ্বের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাম্প্রতিক সময়ে যে প্রতিবাদ করেছে, তার অগ্রভাগে আছে জেন. জি (জেনারেশন জুমাস) খ্যাত তরুণরা। তাদের চেতনা ও স্বতঃস্ফূর্ত নীতি আমাদের অতীত ছাত্র আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমাদের শিক্ষাজীবনকে উৎসর্গ করেছি। আমাদের ছাত্র-তরুণরা বুকের রক্ত দিয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, শিক্ষার অধিকারের জন্য। জয়নাল, জাফর, কাঞ্চন, দীপালি, রাউফুন বাসুনিয়া, সেলিম, দেলোয়ার শহীদ হয়েছেন দেশের জন্য, শিক্ষার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু এবার আন্দোলন কার জন্য? একটি সরকারি চাকরির জন্য। গত কয়েক বছরে সামগ্রিকভাবে এমন একটি পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যাতে মনে হচ্ছে, শিক্ষাজীবনের একমাত্র লক্ষ্য হলো সরকারি একটি চাকরি পাওয়া। সরকারি চাকরিই যেন সবকিছু। এবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে সেই কথাটি আরও বেশি করে মনে পড়ছে। সত্যিই আমি লজ্জিত।

এই সরকারি চাকরিকে কেরানিগিরি বলা যায়। এই কেরানিগিরির বিরুদ্ধে সৃজনশীল, উদ্ভাবনী মানুষের এক ধরনের অনীহা এবং ক্ষোভ ছিল সবসময়। বিশেষ করে মেধাবী তরুণরা ছকে বন্দি এই আনুগত্যের জীবনে আগ্রহী ছিলেন না কখনোই। আমরা বাংলা সাহিত্যেও এর প্রচুর উদাহরণ পাই। দুর্গাচরণ রায়ের ব্যঙ্গাত্মক ভ্রমণ কাহিনি ‘দেবগণের মর্ত্যে আগমন’ গ্রন্থে দেবতাদের বয়ানে সরকারি চাকরি বা কেরানিবৃত্তির অনবদ্য সমালোচনা করা হয়েছে। এই বইটিতে ব্রহ্মাদেব কলকাতা শহরে এসে বিস্মিত হন। বলেন, ‘কী আশ্চর্য! যাহাকেই দেখি, যাহার সঙ্গেই আলাপ করি, সেই কেরানি। দোকানদার, মহাজন, অধ্যাপক, চিকিৎসক, চামার, কুম্ভকার, কর্মকার আর চক্ষে দেখিতে পাওয়া যায় না। সকলেই কেরানি।’ ব্রহ্মার বিস্ময়ের জবাবে তার সফরসঙ্গী বরুণ দেব বলেন, ‘চাকরি করা বাঙালি জাতির সংক্রামক রোগ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। নচেৎ যে অধ্যাপকের জগৎজুড়ে মানসম্ভ্রম, যাহার গৃহে বিদায়ের ঘটি, বাটি, থালা, ঘড়া রাখিবার স্থান হয় না। তিনি নিজ ব্যবসাকে ধিক্কার দিয়ে পুত্রকে ১৫ টাকার কেরানি প্রস্তুত করিতেছেন। যে কবিরাজ ধন্বন্তরি নামে পরিচিত হইয়া অর্জিত ধন বহন করিয়া আনিতে পারিতেন না, তিনিও নিজ ব্যবসা পরিত্যাগ করিয়া পুত্রকে ইংরেজি শিখাইয়া কেরানি প্রস্তুত করিতেছে। যে কুম্ভকার উত্তম উত্তম ছবি ও পট আঁকিয়া স্বাধীনভাবে চল্লিশ টাকা উপার্জন করেন, সেও কাদা-ছানা অতি জঘন্য ব্যবসা বলিয়া পুত্রকে ইংরেজি শিখাইয়া কেরানি প্রস্তুত করিতেছেন। এরূপে ধোপা, নাপিত, মেথর, মুদ্দফরাস সকলেই কেরানি হইবার জন্য হাত ধুইয়া বসিয়া আছে।’ ১৮৮০ সালের দিকে দুর্গাচরণ এই গ্রন্থটি লিখেছিলেন। কিন্তু আজ বিভিন্ন সড়কে যে আন্দোলন হচ্ছে, সেই আন্দোলন দেখে আমার মনে হচ্ছে, দুর্গাচরণের লেখাটি আজকের বাস্তবতায় একেবারেই সত্যি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন কেরানি হওয়ার মনোবাসনায় এখন জীবন দিতেও প্রস্তুত! সব দেখে-শুনে পণ্ডিত বিনয় কুমার সরকারের মতো আমারও বলতে হচ্ছে করে, ‘কেরানির স্বরাজ প্রতিষ্ঠা হোক’। তরুণ সমাজের মধ্যে আমলা বা কেরানি অথবা সরকারি চাকরি করার আগ্রহ কেন এত তীব্র হলো? নতুন একটা সিনেমা, একটা উপন্যাস, একটা নতুন গানের চেয়ে ‘বিসিএস গাইড বই’ কেন তাদের এত প্রিয় হলো। কেন তারা পাঠ্যবই সেলফে রেখে বাংলা ব্লকেড করে। আমলাতন্ত্রে কি মধু আছে?

বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র বা কেরানিতন্ত্রের আবির্ভাব বা বিকাশ অনেক পুরোনো। ড. আকবর আলি খান ‘অবাক বাংলাদেশ, বিচিত্র ছলনাজালের রাজনীতি’ গ্রন্থে ‘আমলাতন্ত্র: গ্রেশাম বিধির মতো ব্যামো’ শীর্ষক নিবন্ধে বলেছেন, ‘আমলাতন্ত্র নিয়ে বিতর্কের শুরু কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর আগে। এ বিতর্ক শুরু হয়েছিল চীনে। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস আমলাতন্ত্রকে ধ্রুব তারার সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন, এ তারকা স্থির এবং সব তারকাই এর নির্দেশে চলে।... বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র আদৌ নতুন নয়। ২০০০ বছরের বেশি আগে মৌর্য সাম্রাজ্যে আমলাতন্ত্র ছিল। ‘কৌটিল্যের অর্থ শাস্ত্রে’ আমলাতন্ত্রের বিশদ বিবরণ ড. খান তার অন্য এক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ গ্রন্থে তিনি চাণক্যের উদ্ধৃতি দেন এভাবে—‘চাণক্য লিখেছেন, সরকারি কর্মচারীরা দুইভাবে বড়লোক হয়, হয় তারা সরকারকে প্রতারণা করে, অন্যথায় প্রজাদের অত্যাচার করে। চাণক্যের অর্থ শাস্ত্রে সরকারি কর্মচারীদের চল্লিশ ধরনের তছরুপের ও দুর্নীতির পন্থা চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্নীতির কুফল সম্পর্কে সজাগ থাকা সত্ত্বেও চাণক্য রাজস্ব বিভাগে দুর্নীতি অনিবার্য মনে করতেন। অর্থ শাস্ত্রে বলা হয়েছে: ‘জিহ্বার ডগায় বিষ বা মধু থাকলে তা না চেটে থাকা যেমন অবাস্তব, তেমনি অসম্ভব হলো সরকারের তহবিল নিয়ে লেনদেন করে একটুকুও সরকারের সম্পদ চেখে না দেখা। জলে বিচরণরত মাছ কখন জল পান করে, তা জানা যেমন অসম্ভব, তেমনি নির্ণয় সম্ভব নয় কখন দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা তহবিল তছরুপ করে।’ কৌটিল্যের ‘অর্থ শাস্ত্র’ যেন বর্তমান সময়ের আমলাতন্ত্রের আয়না! আমলামুখী তারুণ্যের স্রোত সেই মধুর আশায় এটা বুঝতে পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।

সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহের মহামারির কারণ হলো, সরকারি চাকরিতে চাকচিক্য এবং উপরি আয়ের অবারিত সুযোগ। কেউ দেশপ্রেম বা দেশকে বদলে দেওয়ার জন্য সরকারি চাকরি করছেন, এমনটি বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পাকিস্তানিদের পদলেহন করেছেন অনেক আমলা। এরপর আবার বাংলাদেশের অনুগত হয়ে মধু খেয়েছেন। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খোলস পাল্টানো আমলাদের বড় বৈশিষ্ট্য। তারা যখন যার এখন তার। বর্তমান সরকার টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে আমলাতন্ত্রের দ্বারা বশীভূত হয়েছে। পে স্কেল, আমলাদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের ফ্রি লাইসেন্স, আইন করে দায়মুক্তি তাদের ‘চাকর’ থেকে ‘প্রভু’ বানিয়েছে। যে কারণে এখন সরকারি চাকরি একটি ঝুঁকিহীন আকর্ষণীয় পেশা। সরকারি চাকরি হওয়া মানেই একটি নিশ্চিন্ত জীবন, দ্রুত প্রমোশন। সঙ্গে উপরি আয় তো আছেই।

সরকারি চাকরি করলে দুর্নীতি করা যায় অবাধে। তার বিচার হয় না। যৌন নিপীড়ন করলে শাস্তি হয় না। সাংবাদিক পেটালেও দম্ভ মওকুফ হয়। এ রকম বেহেশতি সুবিধা আর কোথায় আছে? সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি চাকরিতে যে দুর্নীতির বাক্স খুলে গেছে, তাতে বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, কিছু শিক্ষার্থী কেন কেরানি হতে মরিয়া।

কিন্তু সব তরুণ কি সরকারি চাকরি চায়? না, অনেক তরুণই সরকারি চাকরিতে আগ্রহী নয়। আমি এমন অনেক তরুণকে চিনি, যাদের কেউ কেউ সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে এখন গরুর খামার করছেন। কেউ নতুন করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান করার জন্য এখন সংগ্রাম করছেন। কেউবা ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করছেন। ফ্রিল্যান্সিং করছেন, কেউ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন মেধাবী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বিজ্ঞানী হয়ে আলোকিত হয়েছেন অনেক মেধাবী মুখ। কেউ আবার গবেষণা করছেন, খেলাধুলায় উজ্জ্বল তারকা হয়ে ওঠা তারুণ্যের সংখ্যাও কম নয়। সংগীত, শিল্পকলার নানা শাখায় আমাদের তারুণ্যের বিচরণ আছে। এ বহুমাত্রিকতাই আমাদের তারুণ্যের আসল রূপ। আমাদের তরুণরা সব ক্ষেত্রে নতুন কিছু করবে, তবেই না দেশ এগোবে। আমাদের তরুণরা ব্যবসায়ী হবে, উদ্যোক্তা হবে, শিল্পী হবে, সাহিত্যিক হবে, চলচ্চিত্র নির্মাতা হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এই বাংলাদেশে সব বন্ধ দুয়ার খুলে একটি মুক্ত প্রবাহের সূচনা করবে তরুণরা। কিন্তু তা না করে কিছু তরুণ সব সড়ক বন্ধ করে রাজপথে বসে আছে একটি সরকারি চাকরির প্রত্যাশায়। কী আশ্চর্য।

আমাদের তারুণ্যের ইতিহাস বর্ণাঢ্য সংগ্রামের ইতিহাস। আমাদের তারুণ্যের ইতিহাস গৌরবের ইতিহাস। এ তরুণরা দেশকে বদলে দিয়েছে, এগিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ এখন একটি চাকরির কুঠিরে বন্দি হওয়ার জন্য উদগ্রীব। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ কি তাহলে বিভ্রান্ত? পথহারা? না, এটি তরুণদের খণ্ডিত রূপ। অধিকাংশ, বিশেষ করে মেধাবী তরুণরা এর সঙ্গে সংশ্রবহীন। আমাদের তরুণদের একাংশের মধ্যে গত কয়েক বছরে যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের কেউ এখন দেশে থাকছে না। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে সেখানেই ঠিকানা করছে। ভালো চাকরি, নিরাপদ জীবন থেকে তারা দেশে আসতে চাইছে না। বাকিরা বিসিএস যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করছে। সরকারি চাকরি না পেয়ে নিজেকে ব্যর্থ মনে করে বেসরকারি চাকরিতে মেধাহীন শ্রম দিচ্ছে। তরুণদের একটি অংশ এখনো সৃষ্টিশীল, উদ্ভাবনী চিন্তার মশাল জ্বালিয়ে রেখেছে। এই তরুণদের সামনে আসতে হবে। এটাই আমাদের তারুণ্যের আসল পরিচয়। চাকরির জন্য ‘বাংলা ব্লকেড’ করা তরুণরা আমাদের তারুণ্যের প্রতিনিধি নয়।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: [email protected]

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্রীড়াঙ্গনের মাধ্যমে অবৈধ মাদককে ‘না’ বলতে পারব : আমিনুল হক

আইসিসির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি মার্কিন সিনেটরের

এআই নিয়ে কাজ করবে গ্রামীণফোন ও এরিকসন

লন্ডন-দিল্লির নতুন প্রেস মিনিস্টার আকবর-ফয়সাল

জেলের জালে ‘দানব আকৃতির’ কাছিম

দুই স্বামীর সঙ্গে সংসার করছিলেন জান্নাতুল, অতঃপর...

ডেঙ্গু / একদিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৭৯

৩৯তম বিশেষ বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিতদের স্মারকলিপি প্রদান

বর্তমান সরকারের কাছে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা বেশি : দেবপ্রিয়

দুই মাস সূর্যের দেখা মিলবে না শহরে

১০

সন্তানকে যেন হাত পাততে না হয়, আর্তনাদ অন্তঃসত্ত্বা সুমির

১১

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১২

আইপিএলে নতুন ইতিহাস, ২৭ কোটিতে বিক্রি হলেন পান্ত

১৩

আসছে নতুন বৃষ্টিবলয়, কৃষকদের জন্য জরুরি সতর্কবার্তা

১৪

সম্পদের হিসাব দিতে আরও ১ মাস পাবেন সরকারি কর্মচারীরা

১৫

ইমরান খানের চূড়ান্ত ডাক / শহরে শহরে উত্তেজনা, গণঅভ্যুত্থানের দিকে যাচ্ছে পাকিস্তান?

১৬

১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইনে উঠে যুবকের কাণ্ড

১৭

ঢাকা ওয়াসায় চাকরির সুযোগ, নেবে ৭০ জন 

১৮

কোহলির সেঞ্চুরি ও বুমরাহর আগুনে বোলিংয়ে বিপর্যস্ত অস্ট্রেলিয়া

১৯

ট্রাক-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে বৃদ্ধা নিহত

২০
X