কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ এএম
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

বরাদ্দ বাড়ে সুফল নেই

মাত্র তিনঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যায় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা। ছবি : কালবেলা
মাত্র তিনঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যায় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা। ছবি : কালবেলা

প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই নগরীর অলিগলি ও ছোট পরিসরের রাস্তাগুলোতেও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর একটু ভারি বর্ষণ হলে তো কথাই নেই। ঢাকা পানিতে ঢেকে যায়। ব্যাহত হয় রাজধানীবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এটি এখন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ নগরবাসীর তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্ত করতে বছর বছর নেওয়া হয় নানা প্রকল্প। ব্যয় করা হয় কোটি কোটি টাকা। দুর্ভাগ্যের বিষয়, দিন দিন এই চিত্রের অবনতিই হচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় ভোর থেকে শুরু হয় প্রবল বর্ষণ। কয়েক ঘণ্টা যেতেই তা রূপ নেয় চরম ভোগান্তি আর আতঙ্কে। শেষ পর্যন্ত দুর্যোগে পরিণত হয় আষাঢ়ের বৃষ্টি। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ছয় ঘণ্টার অঝোর ধারায় বর্ষণে অলিগলি, রাজপথে দেখা যায় থইথই পানি। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরসমান। গন্তব্যে পৌঁছাতে মানুষ হয়েছেন চূড়ান্ত নাকাল। রাস্তা উপচে ময়লা পানি ঢুকেছে বাজারে, দোকানে এমনকি বাসাবাড়িতে। সড়কে বিকল হয়ে সৃষ্টি করে তীব্র যানজট। দিনভর নিদারুণ দুর্ভোগে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। যান ও জলজটে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। সাপ্তাহিক ছুটির দিন না হলে পরিস্থিতি যে আরও ভয়াবহ হতো এতে কোনো সন্দেহ নেই। জলাবদ্ধতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনায় সরব হয় নগরবাসী। অধিকাংশই দায়ী করেন দুই সিটি করপোরেশনকে। কেননা বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে নগরবাসীকে ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোয় বেশি বিপদে পড়তে হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় পানি সরতে পারেনি। উল্টো কোথাও কোথাও ড্রেনের ঢাকনার মুখ দিয়ে পানি উপচে বের হয়ে আসে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন, এ যন্ত্রণার কি কোনো সমাধান নেই! প্রশ্নটি আমাদের সবার। দুই সিটি করপোরেশনে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে নগরবাসীর আসলে লাভটা হচ্ছে কী? গত চার বছরে দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কমপক্ষে ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে। এতে কতটা সুফল মিলেছে, শুক্রবারের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তা দেখা গেছে। রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত এক যুগে বিভিন্ন সংস্থা খরচ করেছে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। বিপুল এ অর্থ ব্যয় এবং একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি না মেলায় সব মহলে ‘ভোগান্তি শেষ কোথায়’—প্রশ্নটি আরও জোরালো হচ্ছে। আসলে ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনাসহ জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি যদি ঠিকঠাক হতো এবং বিরাট বিরাট ভবন নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন করতে গিয়ে জলাশয়গুলো ধ্বংস না করা হতো, তাহলে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্র ভয়াবহভাবে পানি জমতো না—এটা নিশ্চিত। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে টাকার অঙ্ক বাড়ালেই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। পানি কোন পথ দিয়ে নিষ্কাশন হবে, সেটি আগে করা উচিত। উন্নয়নকাজ সম্পন্নের পর তা রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে খাল ও ড্রেনের মুখ আবার ভরাট হয়ে যায়। সে কাজ সঠিকভাবে করতে হবে। যে উন্নয়ন ধ্বংসাত্মক, তা পরিহার জরুরি।

আমরা মনে করি, বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ কমাতে সংশ্লিষ্টদের আরও আন্তরিক ও স্বচ্ছ হতে হবে। জনগণের টাকা যেন সঠিক ও কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিতকরণ জরুরি। খাল, নর্দমা, ড্রেন সংস্কার, উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের নামে নতুন নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থব্যয় যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ নিরসনে দুই সিটি করপোরেশনসহ রাজধানীর অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গুলিতে পা হারানো ইমরানের চিকিৎসা অর্থাভাবে বন্ধ

ঢাবি-জাবিতে দুই খুন, যা বললেন ফারুকী 

নাটোরে শিশু হত্যা মামলায় ৩ জনের ৪৪ বছর কারাদণ্ড

ইরাকে তুর্কি বিমান হামলা, ২৪ স্থাপনা ধ্বংস

দ্বিতীয় সেশনেও টাইগারদের দাপট

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি ঐক্য পরিষদের

ভিসার মেয়াদ শেষ আজ, কী ঘটবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে

লক্ষ্মীপুরে পিটিআই প্রশিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ

সালমানকে নিয়ে যা বললেন শাবনূর

ট্রাম্পের তথ্য হ্যাক করে বাইডেনকে দিয়েছে ইরান!

১০

শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটের বড় জয় বাংলাদেশের

১১

নামাজ পড়ে বাসায় যাওয়া হলো না পুলিশ সদস্য জহিরুলের

১২

বিদেশি শিক্ষার্থী-কর্মীদের কানাডার দুঃসংবাদ

১৩

পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ঢাবি প্রশাসনের মামলা

১৪

জবির নতুন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াস উদ্দিন

১৫

ঢাবিতে মব জাস্টিসের প্রতিবাদে ‘ব্রিং ব্যাক জাস্টিস’ কর্মসূচি

১৬

ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় মিলল

১৭

আ.লীগ নেতা তুষার কান্তি মন্ডল ৭ দিনের রিমান্ডে

১৮

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ১৫

১৯

ঢাবি ও জাবিতে ‘পিটিয়ে হত্যা’ দুঃখজনক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

২০
X