সৈয়দ বোরহান কবীর
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০২:৫৪ এএম
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডাক দিয়ে যাই

কর্তারা করেন দুর্নীতি, দোষ হয় রাজনীতির

কর্তারা করেন দুর্নীতি, দোষ হয় রাজনীতির

দুর্নীতি নিয়ে দেশে এখন তোলপাড় চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যে-ই হোক, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, তাদেরই আমরা ধরব।’ প্রধানমন্ত্রীর এই অনুশাসনের পর একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, দুর্নীতির ক্ষেত্রে অতীতের সংস্কৃতি থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বেরিয়ে আসতে চাইছে। অতীতেও আমরা লক্ষ করেছি, বড় দুর্নীতি হয়েছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকারের মদদে। সব সরকারের আমলেই সরকারের ছত্রছায়ায় কিছু ব্যক্তি ভয়াবহ দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠেছিলেন। রাষ্ট্র তাদের সহযোগিতা করেছে। কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়নি কিংবা বিচারও হয়নি। একটি অস্বীকার করার সংস্কৃতিকে লালন করা হয়েছে। কিন্তু এবার সরকারের ভেতর যারা প্রভাবশালী, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, সরকারের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা সবাই জানত। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার বিষয়টি অস্বীকার করেনি। ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করছে। শেষ পর্যন্ত দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হবে কি হবে না, সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি জাগরণের সূচনা হয়েছে—এ কথা নিঃসংকোচ বলা যায়। অন্য দুর্নীতিবাজ যারা সরকারের প্রভাব বলয়ে থেকে, সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে দুর্নীতি করার সাহস পেতেন তারা কিছুটা হলেও দমে গেছেন। বেনজীর আহমেদকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হবে, তার সম্পত্তি জব্দ হবে এরকম স্বপ্নেও হয়তো তিনি ভাবেননি। ভাবেননি এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানও। কিন্তু সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকার পরও তারা শেষ পর্যন্ত রক্ষা পাননি। সামনের দিনগুলোতে এ ধারায় আরও যারা স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ আছেন তারাও আইনের আওতায় আসবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। দুর্নীতি নিয়ে এই চর্চার মধ্যই কে বেশি দুর্নীতিবাজ তা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। সরকারি চাকরিজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী না সুশীল সমাজ, কারা বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত? এই প্রশ্ন এখন সবার। এ নিয়ে নানাজনের নানা মত। আপাতত সাধারণ মানুষের চোখে সরকারি কর্মকর্তারাই শীর্ষস্থান দখল করে আছেন। ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হলেও তারা এক ধরনের দায়মুক্তি পাচ্ছেন। দুর্নীতিতে তারা ‘ভিকটিম’ হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে ব্যবসা চালাতে তারা রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্তাদের ঘুষ দেন। এটা যেন অন্যায় নয়, তাদের অসহায়ত্বের প্রকাশ। ঘুষ দিয়ে ব্যাংক ঋণ নিতে হয় ফলে ঋণখেলাপি হন। ঘুষের জন্যই অর্থ পাচার করেন। ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিতে দাতা পক্ষ, গ্রহীতা পক্ষ নন। সুশীল সমাজের দুর্নীতি শ্বেত শুভ্র। দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও তিনি নিজেকে ‘ধোয়া তুলসী পাতা’ প্রমাণে মরিয়া। অর্থ পাচার, অর্থ নয়ছয়ের সব অভিযোগকেই তিনি অসত্য বলে রীতিমতো বিক্ষোভ করেছেন। এভাবে সুশীলরা সুশাসন আর উন্নয়নের নামে লুণ্ঠনের দোকান খোলেন। যেগুলো নিয়ে কথা বললেই হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ। দুর্নীতি কোথায় নেই? কোন পেশা দুর্নীতিমুক্ত?

দুর্নীতি নিয়ে এ আলোচনার একটি বিষয় নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। দুর্নীতিবাজদের কথা যখন বলা হচ্ছে তখন রাজনীতিবিদদের দিকেই তীর ছোড়া হচ্ছে। রাজনীতিকে দূষিত ও কলঙ্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে। দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির যোগসাজশ আবিষ্কারের এক প্রাণান্ত চেষ্টা লক্ষণীয়। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, দুর্নীতির ভয়াবহ দূষণের জন্য রাজনীতিই দায়ী।

রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির যে ঘটনাগুলো আমরা দেখি, সেটি এখন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির চেয়ে কমই শুধু নয়, তুচ্ছও বটে। কিন্তু তার পরও সব দুর্নীতির পেছনে রাজনীতির সম্পর্ক কেন খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদের অনেক গভীরে যেতে হবে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিনের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের কলঙ্কিত করার একটি নীরব প্রচেষ্টা সবসময় ছিল। সবসময় সুশীল জনগোষ্ঠী, বুদ্ধিজীবী এবং সরকারি আমলারা রাজনীতিবিদদের মূর্খ, অযোগ্য এবং দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণের জন্য একটি সংঘবদ্ধ মিশনে ছিলেন, আছেন। যে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। রাজনীতিবিদ মাত্রই খারাপ, এমন একটি প্রচারণা চলে সারাক্ষণ। এর উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে রাজনীতিমুক্ত করা। বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা। এতে বেশি লাভবান হবেন সুশীল এবং আমলারা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যদি ব্যাহত হয়, তাহলে বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা গ্রহণ সম্ভব হবে। ক্ষমতালোভী সুশীলরা সিংহাসনে বসে তাদের ইচ্ছামতো লুণ্ঠন করতে পারবেন। আসলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’-এর ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতা দখল করা। বিভিন্ন সময়ে অবৈধ শাসকদের সেবাদাস হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের কিছু সুশীল।

আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে ৭৫-পরবর্তী সময়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তির বিরোধ সমান্তরালভাবে চলছে। এই বিরোধ সবসময় দৃশ্যমান। জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি যেসব স্তাবক এবং চাটুকারকে নিয়ে দল গঠন করেছেন, তাদের মধ্যেও সত্যিকারের রাজনীতিবিদ ছিলেন কম। যারা রাজনীতিবিদ হিসেবে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তারা ছিলেন পরিত্যক্ত উদ্বাস্তু এবং রাজনীতিতে উৎকট আবর্জনা, নীতিভ্রষ্ট সুবিধাবাদী। এসব আবর্জনাকে নিয়ে জিয়াউর রহমান একটি রাজনৈতিক ক্লাব খুলেছিলেন, যার নাম ‘বিএনপি’। এই ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতায় প্রাক্তন সামরিক-বেসামরিক আমলা, উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবী এবং কিছু পতিত রাজনীতিবিদদের নিয়ে একটা খিচুড়ি করা, যা দিয়ে সৎ, আদর্শের রাজনীতিকে ধ্বংস করা যায়। জিয়া নিজেই বলেছিলেন, ‘আমি রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করব।’ এরশাদও একই ধারাই বাংলাদেশের রাজনীতিকে হাস্যকর করার চেষ্টা করেছিলেন। এরশাদ রাজনীতিতে কিছু ঝাড়ুদার, চাটুকার ক্লাউনও যোগ করেন। এভাবেই রাজনীতিকে দূষিত হয়েছে অগণতান্ত্রিক ধারায়। দুর্নীতির বিস্তার ঘটে এদের হাত ধরেই।

অবৈধ শাসক জিয়া যেমন রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ প্রমাণের চেষ্টা করেন। তেমনি ১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেও রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য, অশিক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত করেন। আবার এরশাদের পতনের পর বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা সূচনা হয়, তা নষ্ট করার জন্য সুশীলদের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ ফর্মুলা চালু হয়। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি ছিল গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্র। যে ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিবিদরা অযোগ্য, রাজনীতিবিদরা একটি নির্বাচন করতে অক্ষম এরকম একটি ধারণাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১৯৯১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল তার মূল লক্ষ্য ছিল সুশীলদের ক্ষমতায়ন এবং রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করা। ক্ষমতায় সুশীলদের হিস্যা নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ থাকত তিন মাস। সুশীল এবং বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অনির্বাচিত সুশীল শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। আর এটি করার জন্যই রাজনীতিবিদদের বিরোধ উসকে দিয়ে ২০০৭ সালে আনা হয় অনির্বাচিত সরকার। তারা রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করে। রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণ করার নিরন্তর প্রচেষ্টা করে। এক-এগারোর সরকারের সময় আমরা দেখি রাজনীতিবিদদের চরিত্র হরণের চেষ্টা করা হয়। তাদের দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণের জন্য শুরু হয় নানারকম তৎপরতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির অভিযোগগুলোর সত্যতা কতটুকু প্রতিষ্ঠা করা গেছে? রাজনীতিবিদরা কত টাকা দুর্নীতি করেছেন? রাজনীতিবিদরা দেশের বারোটা বাজিয়েছেন বলে যেসব গালভরা খবর সে সময় করা হয়েছিল, তার কতটুকু সত্যতা পাওয়া গেছে এ নিয়ে ভালো গবেষণা হতে পারে।

রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজ, চোর, দুর্বৃত্ত বানিয়ে তাদের চাঁদাবাজ হিসেবে প্রমাণ করে এক-এগারোর সরকার নিজেরাই দুর্নীতির এক মহোৎসব শুরু করেছিল। দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল এক-এগারোর সরকার। মূলত এক-এগারোর সময় একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা হলো আমাদের সুশীলদের চেয়ে রাজনীতিবিদরা অনেক সৎ। সুশীলরা সুযোগ পেলে যে কী ভয়ংকর দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠতে পারেন—তার প্রমাণ এক-এগারো।

এক-এগারোর পর বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি স্থায়ী রূপ নিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে। সুশীলদের আক্ষেপ ও হতাশা এবং নানা অপপ্রচারের পর দেশে একটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রয়েছে। এ সময় আমলাতন্ত্র সুশীলদের বিকল্প হয়ে সামনে এসেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের দুর্বলতা সুযোগ নিয়ে আমলারা দারোয়ান থেকে গৃহকর্তা হয়ে যাওয়ার কসরত করছেন। গণতান্ত্রিক সরকারকে নানাভাবে বশীভূত করে আমলারা আসলে ক্ষমতাকেন্দ্র প্রায় দখলের চেষ্টা করেছেন। এ প্রবণতাটি ভয়ংকর আকার ধারণ করে কভিডের সময়। সে সময় রাজনীতিবিদদের ঘরে তুলে আমলারা দেশে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে যান। বিভিন্ন জেলায় আমলাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসকরা সংসদ সদস্যদের ওপর খবরদারি শুরু করেন। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হন জনগণের প্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যানরা। আমলাতন্ত্রের এই সর্বগ্রাসী থাবার ফলে দেশে রাজনীতি কোণঠাসা হয়ে যায়। বিরোধী দলহীন সংসদ, গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবে সরকার পুরোপুরি আমলানির্ভর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়টি ছিল মূলত রাজনৈতিক দলের অবয়বে একটি আমলাতান্ত্রিক সরকার। এই ভূতুড়ে ব্যবস্থার কারণেই বেনজীর-মতির সৃষ্টি। এ সময় যেসব আমলা ক্ষমতাবান হয়েছিলেন তাদের লুণ্ঠনের তদন্ত হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। তাদের দুর্নীতির যদি নির্মোহ তদন্ত হয় তাহলে দেখা যাবে যে, দুর্নীতিতে তারা সুশীলদেরও হারিয়ে দিয়েছেন।

২০২৪ সালে টানা চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক আবহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। মন্ত্রিসভায় বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা এলাকার কর্তৃত্ব গ্রহণ করছেন। বেনজীর-মতি বা যেসব সরকারি কর্মকর্তাদের হাঁড়ির খবর বেরিয়ে আসছে, আমি তাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখি না। এটি আমলাতন্ত্রের ক্ষত। এর মাধ্যমে একটি জিনিস প্রমাণিত হয়েছে, সুশীলরা যেমন ক্ষমতা পেলেই দুর্নীতিবাজ হয়, আমলারাও ক্ষমতা পেলে হয় দুর্বিনীত। সরকারের ভেতর এরকম অনেক বেনজীর-মতি রয়ে গেছেন। প্রয়োজন হলো তদন্ত করে তাদের খুঁজে বের করা এবং তাদের আইনের আওতায় আনা। রাজনীতিবিদরা শেষ পর্যন্ত দেশপ্রেমী। শেষ পর্যন্ত তাদের জনগণের কাছে যেতে হয়। শেষ পর্যন্ত তাদের জবাবদিহি করতে হয়, তা যে প্রক্রিয়ায় হোক না কেন। তাই একজন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদও জনগণের জন্য কাজ করেন। সম্পদের একটি অংশ জনগণের মধ্যে বণ্টন করেন। এর মানে এই নয় যে, রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিকে আমি সমর্থন করছি কিন্তু রাজনীতিবিদদের দুর্নীতির ছিটেফোঁটাও তার কর্মী-সমর্থকরা পায়।

অন্যদিকে আমলা বা সুশীলদের দুর্নীতির টাকা চলে যায় বিদেশে। তাই এ ঘটনাগুলোই একটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিবিদদের চালকের আসনে বসতে হবে। ক্ষমতার সবটুকু রাজনীতিবিদদের দিতে হবে। রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করলে জনগণ তার বিচার করবে। রাজনীতিবিদদের জেলে যাওয়ার নজির অনেক। এই দেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে জেলে গেছেন। শত শত মন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে জেল খেটেছেন। কজন সচিব, কজন সরকারি কর্মকর্তা জেল খেটেছেন? কজন সুশীল দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন? আমলা বা সরকারি কর্তারা দুর্নীতি করলে দেশ থেকে পালিয়ে যাবেন। সুশীলরা দুর্নীতি করে বিদেশে ঠিকানা করেন। দুর্নীতি মুক্তির যুদ্ধে রাজনীতিবিদদেরই সামনে আনতে হবে। আমলাতন্ত্র ও সুশীলমুক্ত আদর্শবাদী রাজনীতি দুর্নীতি প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: [email protected]

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরাকে তুর্কি বিমান হামলা, ২৪ স্থাপনা ধ্বংস

দ্বিতীয় সেশনেও টাইগারদের দাপট

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি ঐক্য পরিষদের

ভিসার মেয়াদ শেষ আজ, কী ঘটবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে

লক্ষ্মীপুরে পিটিআই প্রশিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ

সালমানকে নিয়ে যা বললেন শাবনূর

ট্রাম্পের তথ্য হ্যাক করে বাইডেনকে দিয়েছে ইরান!

শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটের বড় জয় বাংলাদেশের

নামাজ পড়ে বাসায় যাওয়া হলো না পুলিশ সদস্য জহিরুলের

বিদেশি শিক্ষার্থী-কর্মীদের কানাডার দুঃসংবাদ

১০

পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ঢাবি প্রশাসনের মামলা

১১

জবির নতুন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াস উদ্দিন

১২

ঢাবিতে মব জাস্টিসের প্রতিবাদে ‘ব্রিং ব্যাক জাস্টিস’ কর্মসূচি

১৩

ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় মিলল

১৪

আ.লীগ নেতা তুষার কান্তি মন্ডল ৭ দিনের রিমান্ডে

১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ১৫

১৬

ঢাবি ও জাবিতে ‘পিটিয়ে হত্যা’ দুঃখজনক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৭

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্ত দাবি ঐক্য পরিষদের

১৮

ঢাবির হলে পিটিয়ে হত্যা, তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তার আহ্বান

১৯

জাবিতে ছাত্রলীগ নেতা হত্যা নিয়ে আ.লীগের বিবৃতি

২০
X