মাজিদুর রহমান
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৫২ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঋণ থেকে মুক্তির আমল

ঋণ থেকে মুক্তির আমল

অনেক মানুষ ছোট-বড় ঋণের কবলে জর্জরিত। ক্রমেই বাড়ছে ঋণের চাপ। আসলে ঋণের মাত্রা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। প্রথমত সামর্থ্যের গণ্ডি অতিক্রম করা। অর্থাৎ, যার যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে, ততটুকু গণ্ডির মধ্যে না থেকে সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে পা রাখা ঋণগ্রস্ত হওয়ার প্রধান কারণ। ব্যাংকের লোভী অফার নিয়েও অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স ও ব্যাংক লিমিটেডের পক্ষ থেকে বেশি ঋণে অল্প সুদ পরিশোধযোগ্য অফার দেওয়া হচ্ছে। যেমন—৫০ হাজারে মাত্র ২-৪ হাজার টাকা সুদ দিতে হবে। ১ লাখে ৭-৮ হাজার সুদ দিতে হবে। তাই এমন অফারে লোভী হয়ে ঝাঁপ দেওয়ার ফলে আজ অধিকাংশই ঋণগ্রস্ত। এটা এজন্যই ঋণ বলা হচ্ছে, কেননা এর ফলে প্রতি সপ্তাহে কিংবা মাসে একটি নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট বাধ্যতামূলক পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা ব্যক্তি-মালিকানায় টাকা থাকুক আর না থাকুক।

অকল্পনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণেও বাড়ছে ঋণের প্রবণতা। ব্যক্তির যতটুকু আয় তার চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আয় বাড়ছে না চাকরিজীবীর। ফলে ৫ টাকার স্থলে ১০ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ, ৫ টাকা আয়ের (বেতন) স্থলে ১০ টাকা আয়ের স্কেল বাড়ছে না। যার কারণে ঋণের মধ্যে পা রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষিজীবীদের আরও শোচনীয় অবস্থা। যথার্থ জাকাত অনাদায়ও টেনে আনছে ঋণের অভিশাপ। প্রকৃতপক্ষে ধনীরা যদি সঠিকভাবে জাকাত প্রদান করত, তাহলে ঋণগ্রস্ত হওয়ার দূরের কথা, দারিদ্র্য পর্যন্ত দূর হয়ে যেত। অসহায় মানুষদের ঋণের পেছনে ছুটতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঋণ প্রতিকারের ক্ষেত্রে জাকাতেরও একটি ভূমিকা রয়েছে।

ঋণের লেনদেন স্বাভাবিক বিষয়। প্রয়োজনের কারণে ইসলামেও এটি নিয়ে আলোচনা রয়েছে। ঋণ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। তিনি নিজেও ঋণ গ্রহণ করেছেন। ঋণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। উম্মতকে ঋণমুক্তির দোয়া শিখিয়েছেন। এমনকি তিনি অমুসলিম থেকেও ঋণ নিয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, ইসলাম বিপদে-আপদে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি সঠিক সময়ে তা পরিশোধ করার প্রতি কঠোর নির্দেশও দিয়েছে। তবে ঋণের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা গেলে জান্নাতে প্রবেশ কঠিন হবে। তা ছাড়া রাসুল (সা.) মৃত ব্যক্তির সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টনের আগে মৃতের ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসের বাণী, ‘আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ব্যক্তিও ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসনাদ আহমাদ: ২২৪৯৩)।

ঋণ থেকে বেঁচে থাকতে দরকার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও বৈধ উপার্জনের উদ্যম। সতর্কতা হিসেবে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার—১. সাধ্যের মধ্যে চাহিদাগুলো সীমাবদ্ধ রাখা। ২. যথাসম্ভব ব্যাংক লোন থেকে বিরত থাকা। ৩. দারিদ্র্য দূর করতে বিভিন্ন কর্মসংস্থান গড়ে তোলার পাশাপাশি সুদমুক্ত কর্জে হাসানা ফান্ড প্রতিষ্ঠা করা। ৪. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে চাকরিজীবীদের উপযুক্ত বেতন স্কেল নির্ধারণ করা। যাতে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়ের ঘাটতি কমে আসে। ৫. সঠিকভাবে উপযুক্ত ব্যক্তিদের জাকাত প্রধান করা; যাতে ঋণের কবল ও দারিদ্র্য থেকে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। ৬. পারস্পরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। ৭. সামাজিকতায় যৌতুক প্রথার মতো নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডগুলো দূর করা।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে ঋণের কবল থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন।

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শরীয়তপুরে ১০২ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পূজা হচ্ছে

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

ইয়েমেনের ১৫ নিশানায় মার্কিন হামলা

‘বিরল’ এক সফরে পাকিস্তান যাচ্ছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

গাজীপুরে বাসচাপায় যুবক নিহত

দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকবে বিএনপি : আজাদ

সাড়ে ৩ কোটি টাকার চাল নিয়ে লাপাত্তা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা

সাতক্ষীরায় ৯ মাস বেতন পাচ্ছেন না ৪২০ শিক্ষক

সিরাজগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

১০

গাজীপুরে শান্তিপূর্ণভাবে চলছে পোশাক কারখানার উৎপাদন

১১

বৃষ্টি আর কত দিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১২

ইসরায়েলি হামলায় সিরিয়া-লেবানন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

১৩

দুপুরের মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১৪

আরেক দেশ থেকে ইসরায়েলে হামলায় ২ সেনা নিহত, আহত ২৪

১৫

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে জবির স্লোগান ‘বিপ্লবে বলীয়ান নির্ভীক জবিয়ান’

১৬

শিক্ষক দিবসে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে

১৭

হত্যা মামলায় রসিকের সাবেক কাউন্সিলর মিলন গ্রেপ্তার

১৮

বৈরুত বিমানবন্দরের পাশেই ইসরায়েলি তাণ্ডব

১৯

সিলেটে রায়হান হত্যা মামলায় ২ যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

২০
X