দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ ওভারে নাটকীয়ভাবে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে ভারত। এবারের বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম পর্বে রানখরা থাকলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজে এসে রানে ফেরে বিশ্বকাপ। ফাইনালটা হয়েছে একদম টি-টোয়েন্টি স্টাইলেই। ভারতের ১৭৬ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেমেছে ১৬৯ রানে। প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তারা কোনো শিরোপা জেতেনি। বিশ্ব ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিচিতি চোকার হিসেবে, চাপের মুখে যারা ভেঙে পড়ে। ফাইনালে ৩০ বলে ৩০ রানের সহজ সমীকরণ তারা মেলাতে পারেনি। ১৭ বছর পর শিরোপা জিতেছে শক্তিশালী ভারত।
আজকের এই লেখা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে নয়, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স নিয়ে। পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বিশ্বকাপ এটিই। গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচের মধ্যে তিনটি জিতে গ্রুপ আটে উঠেছিল বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটিও জিততে জিততে হেরে গেছে। গ্রুপ পর্বের কথা যদি বলেন, বাংলাদেশের পারফরম্যান্স প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দেশ ছাড়ার আগে দলের সবাই টার্গেট হিসেবে গ্রুপ আটে ওঠাটাকেই পাখির চোখ করেছিলেন। সেই টার্গেট অর্জনের পর কোচ হাতুরুসিংহে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলেছিলেন, এরপর যা হবে তা বোনাস। অবশ্য বোনাসের ঘরে শূন্য মিলেছে। সফলতম বিশ্বকাপ নিয়ে দল সন্তুষ্ট, কোচ সন্তুষ্ট, বোর্ডও খুশি। কিন্তু দেশের মানুষ কি খুশি? আমার ধারণা, বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে খুশি হয়েছেন, এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে না। ব্যক্তিগতভাবে আমিও খুশি নই। আমার ভীষণ মন খারাপ হয়েছে, তবে আমি হতাশও নই। সেই ব্যাখ্যায় পরে আসছি।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরুর আগে গত ২৯ মে এই কলামে লিখেছিলাম—‘পরাজয়ে নয়, আপত্তি মানসিকতায়’। আবারও একই শিরোনামে লিখছি। কারণ বিশ্বকাপে আমার আপত্তির জায়গায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। সফলতম বিশ্বকাপের পরও সেই আপত্তিটা আমার বহাল রয়েছে। আমি হতাশ নই, কারণ আমি বাংলাদেশের সামর্থ্যের সীমাটা জানতাম। সেই লেখা থেকে উদ্ধৃত করছি, ‘এটা মানতেই হবে, বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স কখনোই সমান্তরাল নয়। এটা অবশ্য ক্রিকেটারদের দোষ নয়। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের আমজনতার আদিখ্যেতা অনেক বেশি। যে কোনো টুর্নামেন্ট বা সিরিজের আগে আগে প্রত্যাশার বেলুন ফুলিয়ে দূর আকাশে উড়তে থাকি। কিন্তু সেই বেলুন যখন ফুটো হয়ে যায়, আমরা যখন বাস্তবতার মাটিতে আছড়ে পড়ি; তখন ব্যথা পাই, হতাশ হই, সমালোচনা করি। প্রত্যাশার বেলুন যত বেশি ওড়ে, হতাশার বেদনাটা তত বেশি হই। এখন যদি আমরা প্রত্যাশার রাশ টেনে ধরি, তাহলে হয়তো বিশ্বকাপে আমাদের হতাশার মাত্রা কমে আসবে।’ যারা প্রত্যাশার রাশ টানতে পারেননি, তারা কষ্ট পেয়েছেন, হতাশ হয়েছেন। আমি হইনি, কারণ আমার প্রত্যাশা অত ছিল না। আমি লিখেছিলাম, ‘টি-টোয়েন্টিতে এখন ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকরেট ১৬০-এর আশপাশে। কারও কারও তার চেয়েও বেশি। সেখানে আমাদের মূল ব্যাটারদের স্ট্রাইকরেট ১৩০-এর আশপাশে। টি-টোয়েন্টিতে এখন ফাইটিং স্কোর হলো ১৮০-১৯০, সেখানে আমাদের সামর্থ্য ১৫০-১৬০। পার্থক্যটা এখানেই স্পষ্ট। হুট করে বিশ্বকাপে গিয়ে আমরা ২০০ করে ফেলব, এমনটা যদি কেউ ভেবে থাকেন, তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তার বা তাদের জন্য আগাম সমবেদনা।’ ক্রিকেটারদের ধন্যবাদ। তারা বারবার আমার অনুমানকে সত্যি বানিয়েছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৫৯, গ্রুপ পর্বে দুর্বলতম নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।
টি-টোয়েন্টি মূলত ব্যাটসম্যানদের খেলা। বাংলাদেশের টপ অর্ডার; মানে লিটন, শান্ত, সৌম্য তাদের অফ ফর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন বিশ্বকাপেও। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ‘নাই বনে শিয়াল রাজা’ বলেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছিলেন ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ‘ফাইটার’, ‘ফিনিশার’ মাহমুদউল্লাহ সেই সম্মানজনক পরাজয়ের যুগের প্রতিনিধি হয়েই ছিলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একমাত্র তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটেই কিছুটা টি-টোয়েন্টি স্টাইলের ব্যাটিংয়ের ছোঁয়া ছিল। বাকি সবাই নিজেদের ক্যারিয়ার বাঁচানো, মান বাঁচানো, সম্মানজনক পরাজয়ের চেষ্টায় মশগুল ছিলেন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তা এসেছে বোলারদের হাত ধরে। বারবার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ঢেকে দিয়েছেন বোলাররা। সত্যি বলতে, বোলারদের পারফরম্যান্স আমার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সহঅধিনায়ক তাসকিন আহমেদের নেতৃত্বে পেস বোলাররা চমকে দিয়েছেন সবাইকে। মোস্তাফিজ যেন নতুন করে চিনিয়েছেন নিজের জাত। দল ঘোষণার পর সাইফউদ্দিনের বাদ পড়া নিয়ে যা কিছু ফিসফাস, তা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছেন তানজিম সাকিব দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। তানজিম সাকিব এতটাই ভালো খেলেছেন, স্কোয়াডে থেকেও ফর্মে থাকা শরীফুল সুযোগই পাননি। আর এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আবিষ্কার যদি বলেন, তাহলে সেটা রিশাদ হোসেন। অনেক দিন পর বাংলাদেশ একজন ম্যাচ উইনার লেগ স্পিনার পেয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, রিশাদ আসলে বিশ্ব ক্রিকেটেরই নতুন সেনসেশন।
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জিতে প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় বাংলাদেশ। সেই সাফল্য পুঁজি করে পরের বছরই পেয়ে যায় টেস্ট স্ট্যাটাস। তারপর গত সিকি শতাব্দীতে বাংলাদেশ অনেক উত্থান-পতন দেখেছে। দেশের জনগণের কাছে অন্য সব খেলা ছাপিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যায় ক্রিকেট। এই ২৫ বছরে টুকটাক সাফল্য পেলেও বলার মতো কোনো অর্জন নেই আমাদের। বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন একটা টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে। মাশরাফী, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ—এ পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরে বাংলাদেশ অনেক সাফল্যও পেয়েছে। পঞ্চপাণ্ডবের যুগ এখন শেষের পথে। মাশরাফী অনেক আগেই খেলা ছেড়েছেন। তামিমও বিদায়ী রেসে আছেন। টি-টোয়েন্টি দলে নেই মুশফিকও। পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ ছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না থাকলেই ভালো হতো। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এখন অনেক ব্যস্ত—রাজনীতি, ব্যবসা, উদ্বোধন, বিজ্ঞাপন, পরিবার মিলিয়ে ক্রিকেট এখন তার প্রায়োরিটির অনেক পেছনে। এই বিশ্বকাপের মধ্যেও নিউইয়র্কে ফান্ডরেইজিং প্রোগ্রাম করেছেন। এত কিছু করে এ বয়সে আর ক্রিকেট খেলা যায় না।
ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে শক্তির ফারাক খুব বেশি থাকে না যেদিন যে দলের সবকিছু ঠিকঠাক মতো হবে, সে দলই জিতবে। এখানে শক্তি বা র্যাঙ্কিং খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, যেখানে আমাদের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল, সেখানেই আমাদের অর্জন তলানিতে।
ক্রিকেটের একদম শুরুর দিকে আমরা খুব রক্ষণাত্মক ছিলাম। জয় নয়, সম্মানজনক পরাজয়ই হতো আমাদের লক্ষ্য। কোনোরকম টিকে থাকা, মোটামুটি স্কোর করা, বোলারদের দিকে চেয়ে থাকা—এই ছিল আমাদের নিয়তি। আমাদের প্রথম জিততে শিখিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের প্রথম সুপারস্টার আশরাফুলই বাংলাদেশ দলে সাহসের সঞ্চার করেছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে সেঞ্চুরি করা আশরাফুল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত বা শ্রীলঙ্কার বিশ্বমানের বোলারদের মাটিতে নামিয়ে এনেছেন। মাশরাফীর নেতৃত্বে ২০১৫ বিশ্বকাপে এবং তারপর আমরা সাহসের কিছু ঝলক দেখেছি। কিন্তু এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে সেই সাহসটাই হারিয়ে গেছে। আমরা আবার সেই সম্মানজনক পরাজয়ের যুগে ফিরে গেছি। আমার আপত্তিটা এখানেই। ক্রিকেট এখন অনেকটাই বদলে গেছে। সবাইকে চমকে দিয়ে আফগানিস্তান তো সেমিফাইনাল খেলেছে। চমক দেখিয়েছে নেপাল, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও। সেখানে সিকি শতাব্দী পর এসেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে সবাই হতাশ।
সুপার আটে ওঠার পরই বেরিয়ে আসে বাংলাদেশের আসল চেহারা। তবে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে হারার পরও বাংলাদেশের সামনে সেমিফাইনালে যাওয়ার একটা দারুণ সুযোগ এসেছিল। শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের দেওয়া ১১৬ রানের টার্গেট ১২ দশমিক ১ ওভারের মধ্যে টপকাতে পারলেই বাংলাদেশ সেমিফাইনালে চলে যেতে পারত। ১২ দশমিক ১ ওভারে ১১৬, আস্কিংরেট ১০-এরও নিচে। এমন সুযোগ আসলে কালেভদ্রে আসে। যে সমীকরণটা ছিল, সেটা কঠিন তো নয়ই, অসম্ভবও নয়। ওভারপ্রতি ১০ রান, এখন আকসার ঘটে। বিশ্বের যে কোনো দল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার এ চেষ্টাটা করত। বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র দল যারা এ সুযোগটা নেয়নি। বাংলাদেশ আসলে সেমিফাইনালে যেতে নয়, নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিততে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জিততেও পারেনি। ভাগ্য সবসময় সাহসীদের পক্ষে থাকে। বাংলাদেশ এখন সাহসী ক্রিকেট খেলছে না। তাই ১১৫ রান করেও সাহসী আফগানিস্তান জিতেছে এবং সেমিফাইনালে গেছে। অনেকে এমনও বলেছেন, বাংলাদেশ আসলে সেমিফাইনাল যাওয়ার যোগ্য দল নয়। তাই আফগানিস্তানের যাওয়াটাই ন্যায্য হয়েছে। ন্যায্য-অন্যায্য পরে। ১২ দশমিক ১ ওভারে ১১৬ রান করতে পারলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যেতে পারত। এমন সুবর্ণ সুযোগটা পেয়েও কাজে লাগানোর চেষ্টাই করেনি, এটা দুর্ভাগ্যজনক, লজ্জাজনক। সেদিন বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হেরেছে। কিন্তু কাপুরুষের মতো জিতলেও মানুষ খুশি হতো না। বরং ১২ দশমিক ১ ওভারে জেতার চেষ্টা করে ৫০ রানে অলআউট হয়ে গেলেও আমি অন্তত তাদের অভিনন্দনই জানাতাম।
বাংলাদেশের ক্রিকেট একটা টার্নিং পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে। পুরোনোকে বিদায় বলে নতুনদের দিয়ে নতুন করে সাজিয়ে এগোতে হবে। দিনের পর দিন অফ ফর্মের খেলোয়াড় নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কোনো মানেই হয় না। বিশ্বকাপ জিতেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় বিরাট কোহলি, অধিনায়ক রোহিত শর্মা। আর ৩৭ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে আরও একটি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহ এখনো দলে টিকে থাকার লড়াই করছেন। এভাবে টিম এগোবে না। নতুনদের দিয়ে টিম সাজাতে হবে। অধিনায়ক, কোচ ও বোর্ডকে সাহসী হতে হবে।
কোনো দলই সব ম্যাচ জিতবে না। জয়-পরাজয় খেলারই অংশ। কিন্তু আমার মূল আপত্তি মানসিকতায়। টি-টোয়েন্টি হলো সাহসের খেলা—মারো, নয় মরো। কিন্তু আমরা বারবার মরতে মরতে বাঁচতে চাই। কোনো কোনো দিন হয়তো বেঁচেও যাই। কিন্তু খেলার স্টাইল, রক্ষণাত্মক মানসিকতা নিয়ে প্রবল আপত্তি। বাংলাদেশ কোনো ম্যাচে হারবে, কোনো ম্যাচে জিতবে। আমি শুধু চাই, বাংলাদেশ সব ম্যাচ জেতার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামুক। তাতে কোনো ম্যাচে মারবে, কোনো ম্যাচে মরবে। কিন্তু মরার আগে মনে মনে মরে থাকাটা, খেলার আগেই হেরে বসাটা আমাকে বেশি কষ্ট দেয়।
লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ