সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০২:১৪ এএম
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাবির হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের ভাবনা

ঢাবির হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের ভাবনা

গত ১ জুলাই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পালিত হলো ১০৪তম জন্মদিন হিসেবে। তবে দিবসটি সেভাবে উদযাপিত হয়নি, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছে শিক্ষক ধর্মঘটের কারণে। সরকার ঘোষিত নতুন পেনশন স্কিমের বিরোধিতা করছেন তারা।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন আমি সফল করেছিলাম। একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করি যে, আমি এমন একটা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পেরেছি, যা এ অঞ্চলের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের জ্ঞানচর্চার বাতিঘর এবং শতবছর ধরে জ্বালিয়ে চলেছে জ্ঞানের মশাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকদের বড় অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন বা পড়িয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানের হাত ধরেই এ দেশের জনগোষ্ঠী উচ্চশিক্ষার পথে হেঁটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতির জন্মের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, যা বিরল বিশ্বের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।

তবে এখন আর সে অবস্থা নেই। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনীতি ছিল, মুক্তচিন্তার পরিবেশ ছিল, তা আর নেই। প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একটি প্রবন্ধে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ জ্ঞান-বুদ্ধিচর্চার উর্বর ক্ষেত্র। এখান থেকে অর্জিত জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে সমাজে এবং এই আলোয় আলোকিত হয় মানুষ। কিন্তু এখন সমাজই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।’ তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষাদান, গবেষণা, প্রকাশনা ইত্যাদিও থেমে থাকেনি। কিন্তু কোনো কিছুই হয়নি কাঙ্ক্ষিত কিংবা সন্তোষজনক মাত্রায়। শুধু ছাত্র রাজনীতিকেন্দ্রিক কোন্দলই নয়; অনাকাঙ্ক্ষিত আরও অনেক চিত্রই দেখা গেল। শিক্ষকদের দলাদলির কদর্যতা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের কারণ হয়ে দাঁড়াল। শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিতমাত্রায় ধরে রাখা যায়নি।’

সবাই বলছে, হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কাজটা সহজ নয়। সমাজ বা শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার উত্তরণ বা অবনমন দুটোই দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দর্শন বা দৃষ্টিভঙ্গি যাকে অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করে। সেটাই ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্লোবাল র‌্যাঙ্কিংয়ে নেই, এমনকি দক্ষিণ এশীয় অবস্থানও ভালো নেই। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই কোনো র‌্যাঙ্কিংয়ে নেই। শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীর অনুপাত, গবেষণার মান, সাইটেশনের প্রভাব, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীসহ নানা প্রকার পারফরম্যান্স সূচকের ওপর ভিত্তি করে এ র‌্যাঙ্কিং করা হয়। সরকারি বিনিয়োগে ভবন বেড়েছে, নানা প্রকার অবকাঠামো হয়েছে, শিক্ষকদের বাসভবনগুলো সুন্দর হয়েছে। অর্থাৎ তার বহিরঙ্গের চাকচিক্য অনেক বেড়েছে, কিন্তু গুণগত উন্নয়ন হয়নি।

শিক্ষাগত কৃতিত্বের জন্য নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ খবর হয় অশান্তি ও অস্থিরতার জন্য, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য, গবেষণার নামে শিক্ষকদের চৌর্যবৃত্তির জন্য, ক্যাম্পাসে অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে কদর্য শিক্ষক রাজনীতি ছায়া ফেলছে। বিদ্বেষ আর বিভাজন যে শিক্ষক রাজনীতির আদর্শ এখন, সেখানে এটাই হয়তো নিয়তি। দেশের সবচেয়ে বড় এবং জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এসব আলোচনা সবাইকে হতাশ করে। এখানে যারা পড়েছেন, এখনো পড়ছেন, এখানে যেসব শিক্ষক এখনো শিক্ষা ও জ্ঞানের চর্চায় নিবেদিত—তাদের সবার জন্যই এমন সব খবর বেদনার। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বিদ্যা অর্জন করেছি, সাধ্যমতো সে বিদ্যা সমাজের জন্য কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি, সে বিশ্ববিদ্যালয় আজ আমার কাছে এমনভাবে উপস্থিত হবে, সেটা ভাবতে কষ্ট হয়।

এ অবস্থায় কী করে পৌঁছল এক স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? অনেকেই বলবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয় যে, সমাজের অধঃপতন তার গায়ে লাগবে না। কথায় যুক্তি আছে। তবে এ কথাও তো বলি যে, সংকটের সময় বারবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই পথ দেখিয়েছে। তাহলে আজ কেন সে পথহারা হবে?

রাজনীতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় আজ ‘শিক্ষক আমলাতন্ত্রে’ আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমলাতন্ত্র দিয়ে চলে না, চলে ভালোবাসা দিয়ে। উপাচার্যরা এখন আমলার মতো গাড়ি, বাড়ি আর রাজনৈতিক ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন। শিক্ষকদের একটা বড় অংশ ক্ষমতা কাঠামোকে ব্যবহার করে বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যান বা সদস্য হতে, কোনো সংস্থার মহাপরিচালক হতে মরিয়া।

এ সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবরের যে ব্যাপ্তি ঘটেছে, তার সঙ্গে মানোন্নয়নের ভারসাম্য আনা। এর জন্য অবকাঠামোর ক্রমাগত সংস্কার তো দরকারই। সরকারি অনুদানের বৃদ্ধি ঘটালে ও যথাযথ উদ্যোগ নিলে এদিকটা সামলানো যাবে। কিন্তু মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক-শিক্ষিকা পাওয়া। যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ হয় তাতে গুণগত মানের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায় রাজনৈতিক আনুগত্য। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমেই মেধাহীন শিক্ষকদের ভুবন হয়ে উঠছে।

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যত আলোচনা করি, ততটা হয় না এখানকার শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে। দলভিত্তিক রাজনীতির বাইরে এখন শাসক দল সমর্থিত শিক্ষক গ্রুপের ভেতর যে কত গ্রুপ, সেটাও এক গবেষণার বিষয় হতে পারে। এখান থেকেই শুরু হয়েছে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমস্যা। ‘প্রথম শ্রেণি পেলে শিক্ষক হওয়া যাবে’—এই এক দর্শন পুরো সিস্টেমকে নষ্ট করেছে। অনেক সময় প্রথম শ্রেণি দেওয়াই হয় টার্গেট করে। একবার শিক্ষক হয়ে গেলে আর কোনো ভাবনা নেই। গবেষণা, প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুধু দলবাজি করে পদোন্নতি, পদ-পদবি পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিকে অযাচার বলা যায় কি না, সেটা শিক্ষকরা নিজেরাই ভেবে দেখতে পারেন।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য নির্ভর করে শিক্ষকদের তৈরি পাঠ্যক্রমের ওপর। আমাদের এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সেই ব্রত কম। অনেকেই আছেন ক্লাস আর পরীক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নেন না। কিন্তু তাদের কিছু বলা যায় না। এমন শিক্ষকের কথা শুনেছি, একটি কোর্সে মাত্র তিন দিন ক্লাসে গেছেন এবং তাও পুরো সময় শ্রেণিকক্ষে থাকেননি। কোনো ভালো পাবলিকেশন ছাড়া অধ্যাপক হয়েছেন, এমন সংখ্যা ভূরি ভূরি। শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যবসা বা অন্য জায়গায় ফুলটাইম চাকরি করছেন এমন নজিরও অসংখ্য।

শিক্ষকদের প্রধান কাজই হলো শিক্ষাদান। একজন আদর্শ এবং যথার্থ শিক্ষকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত তিনি কতখানি শিক্ষাদানের কাজটি করছেন। শিক্ষাদানের পেশার প্রতি তিনি কতটা দায়বদ্ধ, কতটা নিষ্ঠাবান, কতটা নিবেদিতপ্রাণ। এ কথা ঠিক যে, এ বিশ্বায়নের সময় ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু তারা সঙ্গে নিয়ে যায় শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু নীতিনৈতিকতার শিক্ষাও। শিক্ষকের বিচ্যুতি যদি এমন নগ্নভাবে উন্মোচিত হয়, তাহলে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

সমাজের অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের নৈতিক স্খলন মেনে নিতে পারলেও মানুষ শিক্ষকদেরটা মানতে চায় না। তাদের সম্মানের জায়গাটা এমনই। ক্লাসরুমই জ্ঞান অর্জনের একমাত্র স্থান নয়। শিক্ষকদের লেকচার শিক্ষার্থীদের বেদবাক্যের মতো পৌঁছে গেলেই চলে না। শ্রেণিকক্ষে ভালো পড়ানোর পাশাপাশি আদর্শ শিক্ষকের সংখ্যা কমে গেলে যে মস্ত বড় ক্ষতি হয়, সেটা নিয়ে ভাবনা দরকার। শিক্ষকের কাছে আছে নৈতিকতার বৃহত্তর দাবি, যা অস্বীকার করার উপায় নেই।

উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য একজন থাকেন ঠিকই। তার ভূমিকা একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা। কিন্তু আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য শুধু প্রশাসনিক প্রধান নন, তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিরও প্রধান। তিনি শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগেরও কর্ণধার।

সরকারি তত্ত্বাবধানে যে এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা চলছে, গভীর দুশ্চিন্তা হয় তার জন্যও। গোটা সিস্টেমের মধ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ বাড়ছে, বাড়ছে শাসক দলের রাজনীতির থাবা এবং এতে করে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উদভ্রান্ত দিশাহীনতার পরিচয় দিচ্ছে বারবার। এক সময়ে শিক্ষাজগতে রাজনীতি বলতে বোঝাত মূলত ছাত্র আন্দোলন, ছাত্ররাজনীতি। ক্রমে দেখা গেল, ছাত্রদের চেয়ে শিক্ষকদের রাজনীতি আরও বিধ্বংসী হতে পারে। আজ সর্বোচ্চ শিক্ষাকর্তারাই রাজনীতির ঘায়ে বিদ্যাক্ষেত্র স্তব্ধ করতে সিদ্ধহস্ত ও সফল।

উচ্চশিক্ষায় রাজনীতিদুষ্ট শিক্ষক নিয়োগ ও পরিচালনা ব্যবস্থা কতটা হানিকর, আজ তা শোচনীয়ভাবে স্পষ্ট। এতে করে নিবেদিতপ্রাণ ভালো শিক্ষককুলের মনোবল বিধ্বস্ত। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়ার মুখে। এ অবস্থার একমাত্র প্রতিকার, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাধীন শুভবুদ্ধি অনুসারে চলা। তার চেয়েও বেশি দরকার শিক্ষকসমাজের সমবেতভাবে এগিয়ে আসা। মিছিল-ধর্মঘট করে নয়, অচল করে নয়। রাজনীতিতে পুরোপুরি নিমজ্জিত নয় এমন শিক্ষক সংগঠন সক্রিয়তা দরকার। রাহুমুক্তির কিছু উপায় তারা একত্রে ভেবে বার করবেন বলে আশা করি।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, ঢাকা জার্নাল

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে আ.লীগ সরকার’

২৩ নভেম্বর: ইতিহাসের আজকের এই দিনে

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

আজকের নামাজের সময়সূচি

প্রথম দিনে উইন্ডিজ তুলল ২৫০ রান

গাঁজা-জাল নোটসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

১০

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

১১

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

১২

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

১৩

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

১৪

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

১৫

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

১৬

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১৭

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১৮

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১৯

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

২০
X