আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। তিনি ১৮৯৯ সালের ২১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরের ওক পার্কে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ক্লেরেন্স অ্যাডমন্ডস হেমিংওয়ে ছিলেন চিকিৎসক আর মা গ্রেস হল হেমিংওয়ে ছিলেন অপেরা শিল্পী। তার মা-বাবা তাদের বিয়ের পর কিছু সময় গ্রেসের পিতা আর্নেস্ট হলের বাড়িতে ছিলেন। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের নাম আর্নেস্ট রেখেছিলেন তার নানা। যদিও পরবর্তী সময়ে এ নাম পছন্দ করতেন না হেমিংওয়ে। কারণ অস্কার ওয়াইল্ডের বিখ্যাত নাটক ‘দ্য ইমপোর্টেন্স অব বিয়িং আর্নেস্ট’-এর সেই সাদাসিধে, বোকাসোকা ধরনের প্রধান চরিত্রের নাম ছিল আর্নেস্ট। হেমিংওয়ের মা অপেরা শিল্পী হওয়ায় প্রায়ই গ্রামে গ্রামে কনসার্ট করতে যেতেন। মায়ের পীড়াপীড়িতেই হেমিংওয়ের হাতেখড়ি হয়েছিল বেহালায়। কিন্তু এই বেহালা বাজানো নিয়েই হেমিংওয়ে ও তার মায়ের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছিল। হেমিংওয়ে তাই শৈশব-কৈশোরে মাকে প্রচণ্ড ঘৃণা করতেন। গরমের দিনগুলোতে হেমিংওয়ের কাটত মিশিগানের ওয়ালুন লেকের পাড়ে তাদের বাড়ি উইন্ডমেয়ারে। উত্তর মিশিগানের বনে-হ্রদে শিকার, মাছ ধরা ও ক্যাম্প করা শিখেছিলেন বাবার কাছে। ১৯১৩ সালে হেমিংওয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সূচনা হয়। তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল ওক পার্ক অ্যান্ড রিভার ফরেস্ট হাই স্কুলে। কিন্তু এক বছরের মাথায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হেমিংওয়ের বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে চলে যান ইতালিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯১৮ সালে গুরুতর আঘাত পেলেন মর্টারের আঘাতে। আহত হলেন গুরুতরভাবে। ১৯৫২ সালে তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ প্রকাশিত হওয়ার পরে হৈচৈ পড়ে গেল চারদিকে। ছোট্ট একটি উপন্যাস। অথচ কী দোর্দণ্ড শক্তিমান বার্তা ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ সান্তিয়াগোকে দিয়ে দিয়েছেন। এই উপন্যাস প্রকাশের কিছুদিন পর হেমিংওয়ে আফ্রিকায় সাফারি ভ্রমণে গেলেন। সেখানে পরপর দুটি বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেলেন তিনি কিন্তু বাকি জীবনের বেশিরভাগ সময় সেই শারীরিক আঘাত নিয়েই বেঁচে ছিলেন। চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে কিউবায় স্থায়ী হয়ে গেলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। কিন্তু আবারও ফিরে গেলেন নিজ মাতৃভূমি আমেরিকায়। নতুন বাড়ি কিনলেন আইডাহোর রাজ্যের কেচামে। তখন তার মধ্যে ভীষণ মানসিক অস্থিরতা। কিছুই লিখতে পারছেন না নতুন করে। শুধু স্মৃতিকথা ছাড়া। সমালোচকরা বলত হেমিংওয়ে ফুরিয়ে গেছেন। হেমিংওয়ে অনেক শিকার করতেন। মাঝেমধ্যে শিকারে চলে যেতেন কয়েক দিনের জন্য। বড়শিতে মাছ ধরতেন। পাহাড়ে যেতেন হতাশা কাটাতে। কিন্তু তাতেও হতাশা কাটছিল না। লিখতে বসলেই টের পেতেন চারদিকে হতাশা আর হতাশা। শিকারেও কোনো আনন্দ পাচ্ছিলেন না। ১৯৬১ সালের ২ জুলাই বিখ্যাত এ সাহিত্যিক মারা যান।