দেশে দুর্নীতি সবসময়ই কমবেশি আলোচনার বিষয়বস্তু। সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় দুর্নীতি ও অর্থ পাচার। দেশের নাগরিকদের জন্য দুর্ভাগ্য ও হতাশার বিষয়, এই আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু প্রজাতন্ত্রের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার পাহাড়সম দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অনিয়ম। এতে দেশ হিসেবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে ভাবমূর্তি, আবার নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের দেশ পরিচালনা। স্বভাবতই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে সরকারকে। এ আলোচনার ঝড় এখন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সাধারণ সচেতন মানুষের মুখ থেকে পৌঁছেছে দেশের সর্বোচ্চ স্থান অর্থাৎ জাতীয় সংসদে। এমন একটি পরিস্থিতিতে গত শনিবার দেশের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারও তার কঠোর অবস্থানের হুঁশিয়ারি দেন। এতে সব নাগরিকের কথাই যে প্রতিফলিত হয়েছে, কোনো সন্দেহ নেই। শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় দুর্নীতিবাজদের সম্পর্কে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, আমরা তাদের ধরব।
প্রধানমন্ত্রীর এ অবস্থান নিঃসন্দেহে আমাদের আশান্বিত করে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অতীতেও বহুবার সরকারপ্রধানের এমন শক্ত অবস্থানের কথা আমরা জানি। প্রধানমন্ত্রীসহ এ বিষয়ে তার সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিও কারও অজানা নয়। অত্যন্ত বেদনার বিষয়, দেশে যখনই বড় রকমের দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনো ঘটনা আলোচনায় আসে, এ নিয়ে কিছুদিন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং গণমাধ্যমকে খুব উত্তপ্ত থাকতে দেখা যায়। সচেতন বুদ্ধিজীবীরা থাকেন সোচ্চার। ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে নানা পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চোটপাটও লক্ষণীয়। কিন্তু ঘটনাবহুল আমাদের দেশে নতুন কোনো ঘটনায় সে আলোচনা ও তৎপরতা যায় হারিয়ে। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি চলে যায় আড়ালে। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, তারা বিদেশে পালিয়ে যায় অথবা পালিয়ে যেতে সুযোগ করে দেওয়া হয়; কিংবা দেশে থাকলেও আইনের ফাঁক গলে হোক অথবা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় হোক, তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুব কম পরিলক্ষিত হয়। এসব কারণেই দেশে দুর্নীতির আজকের বাস্তবতা, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চারবারসহ মোট পাঁচবার ক্ষমতাসীনরা দেশ পরিচালনা করছে। এ সময়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি অভূতপূর্ব। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা সূচকে এগিয়েছে দেশ। উন্নয়নশীল থেকে উন্নীত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্ব দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি উচ্চারিত হয় শেখ হাসিনার নাম। এ পর্যন্ত এসবের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে নানা সময়ে। এসবই জাতি হিসেবে আমাদের সবার জন্য গৌরবের। কিন্তু এতসব অর্জনের সঙ্গে দুর্নীতির লাগাম টানার ক্ষেত্রে এ বেহাল দশা নেহাতই বেমানান। দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি কোনোভাবেই যেন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। কেননা দুর্নীতির শিকড় সমূলে উপড়ে ফেলতে না পারলে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে এবং অর্জন অসম্ভব হবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলায় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের মানুষ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এবং এ হুঁশিয়ারিকে আবারও সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ তথা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে শুধু হুঁশিয়ারি নয়, তা কঠোর হাতে বাস্তবায়ন জরুরি। আমরা চাই, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক।