ইতিকাফ শুধু পুরুষের জন্য নয়, নারীদের জন্যও ইতিকাফের বিধান রয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) মৃত্যু পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (বোখারি: ২০৩৬)। আমাদের দেশে নারীরা খুব কমই ইতিকাফ করেন। অথচ ইতিকাফ অত্যন্ত সওয়াব ও ফজিলতের কাজ এবং নারীদের জন্য তা খুব সহজও বটে। কারণ তারা ঘরেই ইতিকাফ করবেন। ফলে নিয়ম মেনে সংসারের খোঁজখবরও নিতে পারবেন। সংসার ঠিক রেখেও ইতিকাফ হয়ে যায়।
নারীদের ইতিকাফের বিধান: রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার মসজিদে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি ইতিকাফ করে তাহলে পুরো মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর নারীদের জন্য ইতিকাফ করা মুস্তাহাব। নারীরা তাদের ইতিকাফের স্থান পর্দা দিয়ে ঢেকে নেবেন। যেন ঘরে কোনো বেগানা পুরুষ লোক এলে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে না হয়।
নারীদের ইতিকাফের স্থান: নারীদের নামাজের স্থান তাদের ঘরের অন্দরমহল, মসজিদ নয়। তারা ঘরে নামাজ পড়েও পুরুষদের মসজিদে নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হন। নারীদের ঘর মসজিদের সদৃশ বলে পরিগণিত। তাই নারীরা ঘরে তাদের নামাজ আদায়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। যদি আগে থেকেই ঘরে নামাজের জন্য কোনো স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতিকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে নেবেন। এরপর সেখানে ইতিকাফ করবেন। (উমদাতুল কারি: ১১/১৪৮; হেদায়া: ১/২৩০; বাদায়েউস সানায়ে: ২/১১৩)
স্বামীর অনুমতি গ্রহণ: বিবাহিত নারী ইতিকাফ করতে চাইলে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। আর স্বামীদের উচিত, যুক্তিসংগত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ করে দেওয়া। এতে উভয়ই সওয়াব পাবেন (রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী: ১/২১১)। স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা গ্রহণযোগ্য নয় এবং স্ত্রীর জন্য তা মানাও জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী: ১/২১১)
ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতিকাফ: মহিলাদের ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতিকাফ করা সহিহ নয়। কেননা এ অবস্থায় রোজা রাখা যায় না। আর সুন্নত ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। নারীদের ইতিকাফে বসার আগেই তাদের ঋতুস্রাবের দিন-তারিখ হিসাব করে বসা উচিত। যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে না যায়। তবে কারও রমজানের শেষ দশকে পিরিয়ড হওয়ার নিয়ম থাকলে তিনি পিরিয়ড শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতে পারবেন। ইতিকাফ অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ২/২৭৪; ফাতাওয়া আলমগীরী: ১/২১১)
ইতিকাফের স্থান থেকে বের হওয়া: নারীরা ঘরের যে স্থানটিকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করবেন তা তাদের ক্ষেত্রে মসজিদের মতোই গণ্য হবে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া তারা সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে বা ঘরের অন্যত্র গেলেও ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া আলমগীরী: ১/২১১; বাদায়েউস সানায়ে: ২/২৮২)।
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষিকা
মন্তব্য করুন