দাঁত অপরিষ্কার থাকলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। অন্য মানুষের কষ্টের কারণ হয়। তবে রোজার কারণে পেট খালি থাকায় যে গন্ধ সৃষ্টি হয়, তা মানুষের জন্য সামান্য অস্বস্তিকর হলেও আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয় বিষয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত—রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘মুহাম্মদের প্রাণ যার হাতে, তার শপথ! রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকে আম্বরের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক পছন্দনীয় ও প্রিয়।’ (বোখারি: ১৮০৫; মুসলিম: ২৭৬২)
অনেকেই এ হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করেন। যেহেতু রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়, তাই রোজা অবস্থায় কোনোভাবেই দাঁত পরিষ্কার করা যাবে না, দাঁত মাজলে আল্লাহর কাছে প্রিয় গন্ধ দূর হয়ে যাবে আর রোজাদার সে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং রোজা অবস্থায় মিসওয়াক করা সুন্নত, এটা রোজা রাখা অবস্থায় সকাল, দুপুর, বিকেলসহ সব নামাজের ওয়াক্তে আদায় করাই সুন্নত। আর সব অবস্থায় রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাই বলে মিসওয়াক না করার ফলে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে প্রিয় নয়। ইসলামের শিক্ষাও নয় এটা।
মিসওয়াক করা: রোজা অবস্থায় নিমের ডাল, জয়তুনের ডাল ইত্যাদি দিয়ে মিসওয়াক করে দাঁত পরিষ্কার করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। যদি মিসওয়াকের তিক্ততা গলার ভেতর চলে যায় তারপরও রোজার ক্ষতি হবে না। মিসওয়াক করলে নবীজির (সা.) সুন্নত আদায় হবে। হাদিসে আছে, ‘মিসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী।’ (ইবনে খুজাইমা: ১৩৫; বেহেশতি জেওর: ৩/১৩; মারাকিউল ফালাহ: ২১০)
টুথপেস্ট ব্যবহার: রোজা অবস্থায় ফুকহায়ে কেরাম মিসওয়াক করার অনুমতি দিয়েছেন। যদি মিসওয়াকটা শুকনা ডালের তৈরি হয়। মিসওয়াকের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত বিদ্যমান রয়েছে। ব্রাশে টুথপেস্ট ও টুথপাউডারের বিষয়টি ভিন্ন। এগুলো ব্যবহার করলে মুখে এক ধরনের স্বাদ অনুভব হয়। তাই ব্রাশে টুথপেস্ট ও পাউডারকে মিসওয়াকের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। অসুস্থতা ছাড়া রোজা অবস্থায় এগুলো ব্যবহার করা মাকরুহ। অবশ্য ওজরবশত রোজা অবস্থায়ও এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল: ১/১০২)
মাজন ব্যবহার: রোজা অবস্থায় কয়লা বা দাঁতের মাজন দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করা মাকরুহ। পরিষ্কার করার সময় কয়লা বা মাজনের কিছু অংশ যদি গলার ভেতরে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। যেহেতু ভেতরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং ফুকাহায়ে কেরাম এর দ্বারা দাঁত পরিষ্কার মাকরুহ বলেছেন, তাই এটি বর্জন করা পরিহার্য (রদ্দুল মুহতার: ৩/৩৯৫)।
উল্লেখ্য, রমজানে দাঁতের যত্ন রাতে খাওয়ার পর এবং সেহরির সময় করে নেওয়াই ভালো। তখন টুথপেস্ট, ব্রাশ, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করতে কোনো বাধা নেই।
মন্তব্য করুন