শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে যে কোনো কাজ করা সহজ হয়। অসুস্থ শরীরে আল্লাহর ইবাদতেও অনেক সময় অনাগ্রহ দেখা দেয়। অক্ষম থাকার কারণে অনেক ইবাদত আগ্রহ হলেও করা যায় না। ইবাদতের জন্য শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য প্রয়োজন, তাই প্রয়োজনমতো হালাল খাদ্য গ্রহণ করতে হয়; ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টিকর খাবারের বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হয়। রমজানে ইফতার ও সেহরি সুন্নত পালন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি যত্নবান থাকতে হবে; যাতে ইবাদতের অসুবিধা না হয়। রাতে তারাবির নামাজের পর হালকা ঘুম উপকারী; এতে তাহাজ্জুদ যথার্থ হয় এবং সেহরি গ্রহণে সুবিধা হয়। ঘুমের জন্য সেহরি যেন ছুটে না যায়; প্রয়োজনে দিনেও হালকা ঘুম বা বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে।’ (বোখারি: ৮৫১)।
রমজান মানে জঠরজ্বালা। রমজানে ক্ষুধা ও পিপাসায় রোজাদারের পেটে আগুন জ্বলে; তাই এ মাসের নাম রমজান। কিন্তু আমাদের রমজানের বাজার করা এবং সেহরি ও ইফতারে যে ভোজের আয়োজন হয়, তাতে তা মনে হয় না। রমজান ত্যাগের মাস, ভোগের মাস নয়। আমরা অনেকে সেহরি ও ইফতারিতে এমন ভোজনরসিক হই, এতে অনেকের শরীরের ওজন পর্যন্ত বেড়ে যায়। আমরা আসলে রোজার উদ্দেশ্যই ভুলে গেছি। অনেকে আবার অসাবধানতা ও উদাসীনতার কারণে সেহরি না খেয়েই রোজা পালন করেন; এটা উচিত নয়। কারণ এতে একদিকে যেমন সেহরি সুন্নতের সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হয়, অন্যদিকে এটি স্বাস্থ্যহানিকর এবং কর্তব্য কর্ম আমল ও ইবাদত সম্পাদনে অন্তরায় হতে পারে। অনুরূপ কেউ কেউ যথাসময়ে ইফতার গ্রহণেও অলসতা করেন। এতেও ইফতারের সুন্নতের সওয়াব না পাওয়া এবং ইবাদতে বিঘ্ন ঘটা ও অসুস্থতার কারণ ঘটতে পারে। সেহরিতে এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে রোজা পালন সহজ হয় এবং ইবাদতের অসুবিধা না ঘটে। ইফতারেও এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে স্বাস্থ্য রক্ষা হয় এবং রাতে তারাবির নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের সহায়ক হয়। একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ না করে রাতে বারবার অল্প অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি ও তরল খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় জরুরি প্রয়োজনে ইনজেকশন ও ইনসুলিন নেওয়া যাবে। এতে রোজার ক্ষতি হবে না। কারণ, এতে খাদ্য গ্রহণের যে উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ ও শক্তি অর্জন, তা হয় না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) রোজা অবস্থায় শিঙা লাগিয়েছেন (বোখারি: ৩/২৬০)। তবে এমন কোনো ইনজেকশন নেওয়া যাবে না, যা দ্বারা খাদ্য গ্রহণের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ ও শক্তি অর্জন হয়; বরং এমন অসুস্থ অবস্থায় রোজা ছেড়ে দেওয়ারও অনুমতি রয়েছে; যা পরে কাজা আদায় করতে পারবে (সুরা বাকারা: ১৮৪)। রোজা অবস্থায় প্রয়োজনে রক্ত দেওয়া এবং নেওয়া যাবে; তবে লক্ষ রাখতে হবে এতে করে যেন রোজাদারের রোজা ভঙ্গের উপক্রম না হয়। অনুরূপভাবে রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত নিলেও রোজা ভঙ্গ হবে না।
লেখক: চিকিৎসক ও প্রাবন্ধিক
মন্তব্য করুন