গাজার জনগণ টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রমজান পালন করছে। অধিকাংশ মানুষ এখন নিঃস্ব—কেউ ঘরবাড়িহীন, কেউ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে, আবার কেউ জরাজীর্ণ তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছে ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে। এ বছর পবিত্র রমজানের প্রথম দিনে ফিলিস্তিনিরা ইফতারের জন্য একত্রিত হয়েছিল, তবে এবার তা ছিল তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের ওপর বা ন্যূনতম জীবনযাত্রার উপকরণবিহীন তাঁবুর ভেতরে।
গাজার দক্ষিণের রাফাহ শহর ও গাজার মধ্যকার শুজাইয়া এলাকায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শত শত ফিলিস্তিনি একত্র হয়ে সম্মিলিত ইফতার আয়োজন করেছে। এ ধরনের মুহূর্তের ছবি ও দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে। গাজার উত্তর অংশ, যেখানে সম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানেও কামাল আদওয়ান হাসপাতালের আশপাশে ফিলিস্তিনিরা সম্মিলিত ইফতারের আয়োজন করেছে, যাতে রমজানের আবহ কিছুটা হলেও অনুভূত হয়। অন্যদিকে খান ইউনিসের কিছু ফিলিস্তিনি পরিবার তাদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ঘরের ওপর বসেই ইফতার করেছে। এটি তাদের মাতৃভূমির প্রতি অটল থাকার সংকল্প এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যানের বহিঃপ্রকাশ।
এসব ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও গাজার ঐতিহ্যবাহী মশারাতি দল (সেহরির সময় ডেকে তোলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি) তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। খান ইউনিসের রাস্তায় প্রথম রাত থেকেই এসব ব্যক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, রমজানের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, যদিও পুরো অঞ্চলই ইসরায়েলি আগ্রাসনের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার। ধ্বংসের মধ্যেও ফিলিস্তিনিরা বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ধরে রেখেছেন। তারা তাদের ভেঙে যাওয়া বাড়ির অবশিষ্টাংশে ফানুস ঝুলিয়েছেন, দেয়ালে রঙিন চিত্র অঙ্কন করেছেন—যেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও আশার আলো জ্বলে থাকে।
এ দৃশ্যগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের সাহস ও সংকল্পের প্রতিফলন। যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তারা জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখার চেষ্টা করছে এবং পবিত্র রমজান উদযাপন করছে। ইফতারের পর ধর্মীয় সংগীত ধ্বনিত হতে থাকে, শিশুরাও আনন্দে মেতে ওঠেÑযেন রমজানের আধ্যাত্মিক পরিবেশ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা।
গাজার কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে, বিশেষত ২ লাখ তাঁবু ও ৬০ হাজার অস্থায়ী ঘর সরবরাহের ক্ষেত্রে, যা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়ের জন্য জরুরি ছিল। এ বাধা দিয়েই ইসরায়েল ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে, যার ফলে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ ছাড়া ১৪ হাজারের বেশি মানুষ এখনো নিখোঁজ। গত ১৯ জানুয়ারি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়েছে, যা মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তিনটি ধাপে ৪২ দিনব্যাপী চলার কথা রয়েছে।
(আলজাজিরা আরবি অবলম্বনে)
মন্তব্য করুন